তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ ফেব্রুয়ারি: কাকা ভাইপোর রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক অটুট। লড়াই হল নীতি ও আদর্শের। ভোটের আগে ও পরে ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোন ভাটা পড়লোনা! ঘটনাটি ক্ষীরপাই পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের। ক্ষীরপাই পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে এবারের নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন ক্ষীরপাই পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও পৌর প্রশাসক বীরেশ্বর পাহাড়ি। অপরদিকে, বীরেশ্বর পাহাড়ি’র কাকা বাম সমর্থিত ইউ সি পি আই প্রার্থী শান্তি পাহাড়ি। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন অনেকটাই বয়সে নবীন সঞ্জিত দাস। রবিবার সকাল সকাল তিনজনই ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েছেন। তিন প্রার্থীরা নিজেদের মধ্যে সৌজন্যে বিনিময় করেছেন। প্রত্যেকেই আশাবাদী ভোটযুদ্ধে তাঁদের জয় হবে। তিনজনের মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ে থাকলেও ব্যক্তিগত সম্পর্কে কোন ভাটা পড়েনি জানালেন বাম বিজেপি ও তৃণমূলের প্রার্থীরা। তিন প্রার্থী একসাথে চায়ের আড্ডায় মজলেন। একে অপরকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিলেন। রাজনৈতিক সৌজন্যতার নজির সৃষ্টি করলেন।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের প্রার্থী বীরেশ্বর পাহাড়ি বলেন, “বাম সমর্থিত প্রার্থী সম্পর্কে আমার কাকা এবং পিতৃতুল্য। অন্যদিকে, বিজেপির প্রার্থী সঞ্জীত দাস আমার পুত্রসম। লড়াইটা আমাদের নিছক রাজনৈতিক, মতাদর্শগত। কোনভাবেই আমার পিতৃতুল্য শান্তি কাকুর সাথে পারিবারিক সম্পর্কের ভাটা পড়বে না।” অন্যদিকে, বাম সমর্থিত ইউ সি পি আই প্রার্থী প্রবীণ নেতা শান্তি পাহাড়ি বলেন, “তৃণমূল প্রার্থী সম্পর্কে আমার ভাইপো। আমার স্নেহ ভাজন। আমাদের লড়াই নীতিগত, আদর্শগত। পারিবারিক সম্পর্ক আগে যেমন ছিল একই থাকবে।” বিজেপির প্রার্থী সঞ্জীত দাস বলেন, “ক্ষীরপাই রাজনৈতিক সৌজন্যের পরিচয় আগেও দিয়েছে, এখনও তাই দিচ্ছে। আমার সাথে দুই বিরোধী প্রার্থী আমার পিতৃতুল্য শ্রদ্ধাভাজন।” বর্তমানে, যেখানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতি মুহূর্তে হানাহানি, মারামারি; সেখানে তিনজনের এই বার্তা রাজনৈতিক মহলের কাছে অনুসরণীয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, রবিবাসরীয় ভোট রঙ্গে সারাদিন রাজ্য থেকে জেলা কতইনা বৈচিত্র্যময় ঘটনার ছড়াছড়ি! হিংসা, মারামারি, বোমাবাজি সবকিছুই হল। তবে, হিংসার চিত্র তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। রেলশহর খড়্গপুর সহ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটলেও, মোটের উপর বড় অশান্তি রুখে দিতে পেরেছে পুলিশ প্রশাসন। জেলা শহর মেদিনীপুর থেকে শুরু করে চন্দ্রকোনা, ঘাটাল প্রায় সর্বত্র ব্যাপকহারে ভোট লুট রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে! সকাল থেকেই জেলা তৎপর ছিল পুলিশ প্রশাসন। দু’একটি ‘বিশেষ’ ক্ষেত্র ছাড়া, পুলিশের তৎপরতায় খুশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে, জেলাজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সাংবাদিকরাও। সাংবাদিকদের কড়া নজরদারি আর ক্যামেরার সামনে বহিরাগত থেকে শুরু করে ভোট লুটেরা বাহিনী নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে! বিভিন্ন দলের প্রার্থী, একযোগে এদিন, পুলিশ প্রশাসন ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।