দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২১ ফেব্রুয়ারি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির চমক ছিল চন্দনা বাউরী! প্রবল তৃণমূল ঝড়ের মধ্যেও শালতোড়ার বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে, সারা রাজ্যকে চমকে দিয়েছিলেন চন্দনাও। পরবর্তী সময়ে তাঁকে নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হলেও, চন্দনা যে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে উঠে এসেছিলেন, তাকে অস্বীকার করতে পারেন না কেউই! এবারের পৌর নির্বাচনেও, খড়্গপুর পৌরসভার ২-টি ওয়ার্ডে ‘চন্দনা স্মৃতি’ ফিরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। ২৩ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী পিঙ্কি পাত্র এবং ৮ নং ওয়ার্ডের মহুয়া যাদব। পিঙ্কি’র স্বামী মুক্তা পাত্র পেপার বিক্রি করে আর বিভিন্ন বাড়িতে মিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। তবে, তার সাথে দু’জনে মিলে দলটাও করেছেন নিষ্ঠাভরে। এবার দল পিঙ্কি-কে প্রার্থী করে তাঁদের যোগ্য সম্মান দিয়েছে। অপরদিকে, মহুয়া ও তাঁর স্বামী ধীরজ- দু’জনে মিলে রেল শহর খড়্গপুরের খরিদা বাজারে একটি চায়ের দোকান চালান। সঙ্গে বিজেপি কর্মী হিসেবে দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। নানা ভিড়ের মাঝে মহুয়াকেই প্রার্থী করে চমকে দিয়েছে বিজেপি।
একদিকে যখন নামিদামি প্রার্থীদের দাপট আর দক্ষিণ ভারতের আদলে তৈরি হওয়া বড় বড় হোর্ডিং, পোস্টার, ব্যানারের ভিড়- সেখানে পিঙ্কি আর মহুয়ার মত প্রার্থীদের সেই ভিড়ে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল! মানুষের মন জয় করতে বিভিন্ন প্রার্থীই নানাভাবে হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন বিজ্ঞাপনে কিংবা প্রচারে। কিন্তু, পিঙ্কি আর মহুয়ার টাকা কোথায় খরচ করার মতো? অগ্যতা, পেপারওয়ালা স্বামীর সাইকেলে চেপেই সকাল থেকে শুরু হচ্ছে পিঙ্কির প্রচার। স্বামী বাড়ি বাড়ি পেপার দিচ্ছেন আর পিঙ্কি দুই হাত জড়ো করে ভোট চাইছেন। শুধু বাড়ি বাড়ি নয়, রাস্তার কলে, রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে- যেখানেই একটু জটলা দেখছেন, সাইকেল দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন মুক্তা। বলছেন, “এই যে পিংকি। আপনাদের প্রার্থী (২৩ নং ওয়ার্ডের)। পদ্মফুল চিহ্নে অবশ্যই ভোটটা দেবেন।” জটলার মধ্যে থাকা কেউবা অবাক হচ্ছেন, আবার কেউবা বাহবা দিচ্ছেন। আর যাঁরা তাঁদের চেনেন, তাঁরা বলছেন, “হ্যাঁ ওদের তো চিনি। স্ত্রী নিচে সিঁড়ি ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো, আর স্বামী উপরে উঠে বিজেপির পতাকা লাগাতো!” এবারও তাই হচ্ছে। দু’জনই দুজনের ভরসা! স্বামী মুক্তা চাইছেন, যেভাবে এতদিন স্ত্রী সিঁড়ি ধরে তাঁকে উপরে উঠতে সাহায্য করেছে, ঠিক সেভাবেই স্ত্রী কেও তিনি সাধারণ কর্মী থেকে এলাকার একজন কাউন্সিলর হিসেবে এগিয়ে দিতে।
অন্যদিকে, খরিদা বাজারে চা বিক্রি করতে করতেই চলে বিজেপির ৮ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী মহুয়া যাদবের প্রচার। স্বামী ধীরজের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দোকানের সাহায্য করেন মহুয়া। না হলে পেট চলবে কি করে! আর অবশিষ্ট সময়ে, নিষ্ঠা আর আন্তরিকতার সঙ্গে বিজেপির প্রচার কর্মসূচীতে যান। এবার সেই মহুয়া-ই ৮ নং ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী। চা দোকান সামলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করছেন মহুয়া। তবে, তার আগে নিজেদের চা দোকানেই শুরু হয়ে যায় প্রাথমিক প্রচার পর্ব। এলাকাবাসী খদ্দেরদের হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে স্বামী ধীরজ বলেন, “আমার স্ত্রী, মহুয়া-কেই দল এবার প্রার্থী করেছে। পদ্মফুলে অবশ্যই ভোটটা দেবেন দাদা।” দূর থেকে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসেন মহুয়া। স্বপ্ন দেখেন, এলাকার কাউন্সিলর হয়ে গরীবের দুঃখ ঘোচানোর। তাঁর আদর্শ যে, চায়েওয়ালা প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং!