দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ ফেব্রুয়ারি: “১৯৯৮ সালে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আমার মা প্রয়াত দেবী চক্রবর্তী এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনিই এই ওয়ার্ডের মানুষের আশীর্বাদ পেয়ে এসেছিলেন। এরপর, ২০১৩ সালে আকস্মিক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওইবারের পৌরসভা নির্বাচনে দল আমাকে টিকিট দেয়। মানুষ আমাকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেন। তারপর থেকেই মানুষের সুখে দুঃখে, ওয়ার্ড এর সমস্ত উন্নয়নে আমি থাকার চেষ্টা করেছি। পাশে পেয়েছি ওয়ার্ডবাসী এবং দলীয় কর্মী সমর্থকদের। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে দলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যে তালিকা প্রকাশিত হয়, সেখানে আমার সহধর্মিণী সোনালী চক্রবর্তী’র নাম ছিল (মহিলা সংরক্ষিত আসন), তা আমি, আপনি সকলেই দেখেছি। কিন্তু, তারপরই রাজ্য নেতৃত্বের সই করা একটি তালিকা ঘিরে চাপানউতোর শুরু হয়। গতকাল (সোমবার) জানতে পারি, ওই তালিকাই চূড়ান্ত। দল এখানে মিতালী ব্যানার্জি নামে এক কর্মীকে টিকিট দিয়েছে। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে তাঁর পাশে থাকবো। দল যা নির্দেশ দেবে, তাই পালন করব।” এরপরই কন্ঠ ভারি হয়ে আসে দেবী পুত্র নির্মাল্যর! গত কয়েক বছরে যিনি এই ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে উঠেছিলেন। চোখ তাঁর ছলছল করে। তবে, দলের সিদ্ধান্ত-ই চূড়ান্ত বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসেবে শেষ মুহূর্তে দল মনোনয়ন দেয় মিতালী ব্যানার্জি নামে এক মহিলা কর্মীকে। তিনি মঙ্গলবার জুন মালিয়ার হাত ধরে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। তবে, তার আগে শনিবার তৃণমূলের প্রতীকে প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন নির্মাল্য পত্নী সোনালী চক্রবর্তী। ভেবেছিলেন, শেষ মুহূর্তে হয়তো দল তাঁকেই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দেবে। কিন্তু, তা হয়নি! পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, সংশোধিত এবং সই করা তালিকাই চূড়ান্ত। এরপর, অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন নির্মাল্য পত্নী সোনালী চক্রবর্তী হয়তো নির্দল হিসাবেই লড়াই করবেন। কিন্তু, দলীয় আনুগত্য স্বীকার করে, দলের একজন সৈনিক হিসেবে নির্মাল্য সেই পথে হাঁটলেন না। দলের প্রার্থীকেই মেনে নিলেন এবং দলের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া এবং দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার কারণেই, ২ নং ওয়ার্ডে “দেবী চক্রবর্তী” অধ্যায় আজ শেষ হল! কারণ, শহরবাসীর কাছে ২ নং ওয়ার্ড মানেই ছিল দেবী চক্রবর্তী আবেগ। সেই আবেগে ইতি পড়ল। ভবিষ্যতে কোন পথে জল গড়ায়, তা রাজনৈতিক ভবিতব্যের হাতেই!