thebengalpost.net
মেদিনীপুর পৌরসভা (নিজস্ব চিত্র) :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ ফেব্রুয়ারি: আজ, বৃহস্পতিবারই পুরভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি হতে চলেছে ১০৮ পুরসভার ভোট। তার আগে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আসানসোল, শিলিগুড়ি, বিধাননগর ও চন্দননগরের পুরভোট। এদিকে, আসন্ন পৌরভোটকে সামনে রেখে বুধবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ডাকা সর্বদল বৈঠকে নানা দাবি তুলে ধরল তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস। তবে, একটি দাবিতে সব রাজনৈতিক দলই একমত! সেটা হল নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমা বাড়ানো। অন্য দিকে, করোনা পরিস্থিতিতে ভোট পিছনোর দাবিতে এখনও অনড় বিজেপি। তবে, বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি)-ই নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। এমনটাই জানা গেছে বিশেষ সূত্রে। রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক ও এসপি-দের সঙ্গে বৈঠকেও বসতে পারে কমিশন। অন্যদিকে, আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮-টি পুরসভার সঙ্গে ভোট হতে চলেছে মেদিনীপুর-খড়্গপুরেও। শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্লা ভারি হলেও, লড়াইয়ের ময়দানে আছে বিজেপি এবং বাম-কংগ্রেসও। তবে, ভোটের লড়াই শুরুর আগেই মেদিনীপুর-খড়্গপুরে এখন টানটান উত্তেজনা শাসকদলের ‘প্রার্থী’ হওয়াকে কেন্দ্র করেই! জেতা-হারা পরের কথা, যেন শাসকদলের টিকিট খানা মিললেই হাতে ‘স্বর্গ’ পেয়ে যাবেন দাবিদাররা!

thebengalpost.net
মেদিনীপুর পৌরসভা (নিজস্ব চিত্র) :

বৃহস্পতিবার নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৯ শতাংশ! এদিনই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিতে পারে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ, প্রচারের আর বেশি দিন বাকি নেই। যদিও, শুক্রবার অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর আগের দিন ঘোষণা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানাচ্ছে দলের একটি সূত্র। তবে, প্রার্থী তালিকা ঘোষণা’র বিষয়ে অবশ্য অনেকটাই এগিয়ে আছে বামফ্রন্ট তথা সিপিআইএম। বিভিন্ন পৌরসভার জন্য ইতিমধ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণ তালিকা তারা ঘোষণা করেছে। এদিকে, মেদিনীপুর পৌরসভার পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণার জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে ৪ টায় বামফ্রন্ট নেতৃত্ব একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মেদিনীপুর পৌরসভার ২৫-টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩-টিতে লড়াই করতে পারে বামফ্রন্ট। ৫ টি ওয়ার্ডে অবশ্য আগেই প্রার্থীদের নামে দেওয়াল লিখন হয়ে গেছে! ২৫-টির মধ্যে, বাকি দু’টিতে বামফ্রন্ট সমঝোতা করছে বা সমর্থন জানাচ্ছে কংগ্রেস প্রার্থীদের। এর মধ্যে একটি অবশ্যই ১৫ নং ওয়ার্ড। যে ওয়ার্ডটি বিদায়ী কংগ্রেস কাউন্সিলর শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের গড় হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা যেন আর তর সইতে পারছেন না! তাই, নিজেরাই একের পর এক তালিকা তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দিচ্ছেন! যদিও, শাসকদলের জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ, ভুয়ো তালিকা ছড়িয়ে দিয়ে সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে বিরোধীরা। অভিযোগ উড়িয়ে, বিরোধীরা জানিয়েছেন, শাসকদলের একাধিক দাবিদার, আছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও। তাই, নিজেদের প্রার্থীর নাম হাওয়ায় ভাসিয়ে দলীয় নেতৃত্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে বিভিন্ন গোষ্ঠী!

thebengalpost.net
খড়্গপুর পৌরসভা (নিজস্ব চিত্র) :

এসব থেকে অবশ্য অনেক দূরে বিজেপি। তাঁরা ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। মেদিনীপুর জেলা অফিসে বসানো হয়েছে ড্রপ বক্স তথা অ্যাপ্লিকেশন বক্স (Application Box) ও। তবে, বিজেপির একটি সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার অথবা শনিবার (সম্ভাবনা বেশি) তাঁদের প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করে দেওয়া হবে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে একাধিক জেলা নেতা তাঁদের নিজেদের ওয়ার্ডে অথবা পাশের ওয়ার্ডে (নিজের ওয়ার্ড সংরক্ষণের আওতায় থাকলে) প্রার্থী হতে চলছেন। রাজ্য নেতৃত্ব এই বিষয়ে নাকি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে! যেমন, মেদিনীপুর পৌরসভায় প্রার্থী হতে পারেন বিজেপি’র জেলা সহ সভাপতি অরূপ দাস (১৫ নং ওয়ার্ড), সহ সভাপতি শঙ্কর গুছাইত (৯ নং ওয়ার্ড), সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ (বান্টি) রায় (৬ নং ওয়ার্ড) প্রমুখ। এদিকে, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী ঘিরেই সর্বাধিক উত্তেজনা জেলা শহর মেদিনীপুরে! ইতিমধ্যে, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার বা ভুয়ো প্রার্থী তালিকার ৫-৬ টি পিডিএফ কপি সোশ্যাল মিডিয়ায় আর মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাজনৈতিক মহল অবশ্য জানাচ্ছে, এমন সব প্রার্থীর নামও তালিকায় আছে, যাঁদের পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বিন্দুমাত্র নেই! যেমন, ভাইরাল হওয়া প্রার্থী তালিকায় থাকা কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও অধ্যাপকদের পৌরভোটে প্রার্থী হওয়ার নূন্যতম সম্ভাবনা নেই বলেই জানা গেছে। তবে, মেদিনীপুর ও খড়্গপুর পৌরসভার প্রার্থী তালিকায় অধিকাংশ নতুন মুখ যে দেখা যাবে, এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা তৃণমূলের বিভিন্ন সূত্র। সেক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে দলের একনিষ্ঠ কর্মীদের। খোদ জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা খড়্গপুরে জানিয়েছিলেন, “প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই, সংরক্ষণের কারণে অনেক বিদায়ী কাউন্সিলর নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না! আবার, অনেক নতুন মুখকেও রাজ্য নেতৃত্ব পরখ করে নিতে পারে। তবে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতৃত্বই নেবে। প্রার্থী যেই হোন না কেন, সকল নেতা-কর্মীরাই তাঁর জন্য জান লড়িয়ে দেবেন। ইতিমধ্যে, মেদিনীপুর ও খড়্গপুর পুরসভার যথাক্রমে ২৫ ও ৩৫ টি ওয়ার্ডে যে ৬০ জন পর্যবেক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছে, তাঁরা নিঃশব্দে নিজেদের কাজ করে চলেছে।” জেলা নেতৃত্বের আর একটি সূত্র আবার জানাচ্ছে, প্রার্থী তালিকায় বেশ কিছু অভিজ্ঞ মুখও থাকছে। এমনকি, যেসকল ওয়ার্ডে সংরক্ষণ নেই, সেখানে বিদায়ী কাউন্সিলরদের দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও প্রবল! স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি দলে নবীন-প্রবীণের ভারসাম্যের উপর জোর দিয়েছেন।

thebengalpost.net
তৃণমূলে যোগদান খড়্গপুরে (নিজস্ব চিত্র) :

এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, ২৫ ওয়ার্ডের মেদিনীপুর পৌরসভায় সবমিলিয়ে ১৭-টি আসন তৃণমূলের দখলে ছিল বিগত নির্বাচনে। তার মধ্যে, সংরক্ষণ, মৃত্যু (প্রণব বসু ও মণিলাল দাস) ও অন্যান্য কারণে অন্তত ১০ জন বিদায়ী কাউন্সিলর কিংবা তাঁদের আত্মীয়দের টিকিট প্রায় অনিশ্চিত বলে দলীয় সূত্রে খবর। বাকি যাঁরা নিশ্চিত বলে প্রায় সব মহল থেকেই জানা গেছে, তাঁরা হলেন- অনিমা সাহা (১ নং ওয়ার্ড); সৌরভ বসু (৯ নং ওয়ার্ড); টোটন শাসপিল্লি (১২ নং ওয়ার্ড); সৌমেন খান (১৮ নং ওয়ার্ড) এবং বিশ্বনাথ পান্ডব (১৯ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর লিপিকা পান্ডবের স্বামী তথা দলের শহর সভাপতি)। এছাড়াও,‌ ৬ নং ওয়ার্ডের (বিদায়ী কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পৌরপ্রধান প্রয়াত প্রণব বসু’র আসন) প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক তথা বিধানসভায় অল্পের জন্য প্রার্থী না হওয়া ব্যক্তিত্বের। তৃণমূলের জেতা আসন নয়, তবে প্রায় নিশ্চিত ১৫ নং ওয়ার্ডের প্রার্থীর নামও। এখানে প্রার্থী হতে চলছেন, গতবারের পরাজিত প্রার্থী তথা তৃণমূলের জেলা নেতা হিমাদ্রি খান অথবা তাঁর ছোট ছেলে তথা দলের যুব নেতা কুমারদীপ খান (পাপাই খান)। ২৫ নং ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা এক যুব নেতার। মেদিনীপুর পৌরসভার পৌরপ্রশাসক মণ্ডলীতে তাঁকে রাখা হয়েছে ইতিমধ্যে। তাঁর সঙ্গে অবশ্য এক শ্রমিক নামও জল্পনায় আছে। এছাড়াও, ১০ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর অসিত মহাপাত্রের আসনটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায়, তাঁর স্ত্রী’র প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে, ৫ নং ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর মৌ রায়ের আসনে তাঁরই প্রার্থী হওয়ার সর্বাধিক সম্ভাবনা। ২১ নং ওয়ার্ডে দলের এক প্রাক্তন বিধায়কের প্রার্থী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। ২৩ নং ওয়ার্ডে দলের এক একনিষ্ঠ মহিলা কর্মীর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। চরম অনিশ্চয়তা বা টানটান উত্তেজনা রয়েছে ২, ৭, ৮, ১৪, ১৬, ১৭ এবং ২৪ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে! উত্তেজনা আছে রেলশহর খড়্গপুরের প্রার্থী তালিকা ঘিরেও। সংরক্ষণের গেরোয় পড়তে চলছেন‌ একাধিক বিদায়ী কাউন্সিলর। এদিকে, খড়্গপুরে ৭০ শতাংশ ‘নতুন মুখ’ দেখা যাবে বলে জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর। সবমিলিয়ে, প্রচার শুরুর আগে বা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার আগে, দুই শহরের শাসকদলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে এই মুহূর্তে, তা বলাই বাহুল্য!

thebengalpost.net
মেদিনীপুর শহরে জোরকদমে চলছে সৌন্দর্যায়নের কাজ (গোলকুঁয়াচক, নিজস্ব চিত্র):