দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ জুলাই: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ‘স্পর্শকাতর গ্রাম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ২০৭টি গ্রামকে। ভোটে অশান্তি হতে পারে কিংবা উত্তেজনা আছে, এই সম্ভাবনা থেকেই এই জেলার ২০৭টি গ্রামকে চিহ্নিত করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ ও প্রশাসন। নির্বাচনের দিন এই গ্রামগুলিতে থাকবে বাড়তি পুলিশি নজরদারি। এই তালিকায় আছে শালবনীর ২৩টি গ্রাম। এছাড়াও, মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় (সদর ব্লকে) আছে ২টি গ্রাম, গুড়গুড়িপালে (সদর ব্লকের অপর প্রান্ত) ৩টি, আনন্দপুরে (কেশপুর ব্লকের অন্তর্গত) ৮টি, কেশপুরে ১১টি, গোয়ালতোড়ে ৮টি, গড়বেতায় ১২টি, খড়গপুর গ্রামীনে ১২টি নারায়ণগড়ে ৬টি, বেলদায় ১১টি, দাঁতনে ১০টি, মোহনপুরে ৫টি, কেশিয়াড়িতে ৬টি, ডেবরায় ১৪টি, সবংয়ে ১১ টি, দাসপুরে ৩০টি, চন্দ্রকোনায় ১৫টি- গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্য ওই সমস্ত গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুটমার্চও শুরু হয়েছে গত ৩-৪ দিন ধরে। চলছে পুলিশি নজরদারি এবং নাকা তল্লাশিও।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতীতে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা হয়েছে কিংবা যুযুধান গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে; কোনও নাশকতা বা মাওবাদী কার্যকলাপের ইতিহাস আছে অথবা অশান্তি বা উত্তেজনা ছড়াতে পারে- এই সমস্ত তথ্য ও সম্ভাবনার ওপর নির্ভর করেই এই গ্রামগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। এক্ষেত্রে, উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে, কেশপুর থানার অধীন মাত্র ১১টি গ্রাম এবং ব্লকে (আনন্দপুর থানা সহ) মোট ১৯টি গ্রামকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অথচ তুলনামূলকভাবে অনেক শান্ত জঙ্গলমহলের শালবনীর ২৩টি গ্রামকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিশ্বস্ত সূত্রের তরফে জানানো হয়েছে, একসময় জঙ্গলমহল শালবনী ছিল মাও-আঁতুড়ঘর। সেই মাওবাদী কার্যকলাপের ইতিহাস মাথায় রেখে এই ব্লকের জঙ্গল অধ্যুষিত ও প্রান্তিক বিভিন্ন গ্রামকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও, এলাকায় শাসক ও বিরোধী দলের সম্পর্ক, বিভিন্ন গোষ্ঠীর উপস্থিতি- প্রভৃতি বেশ কিছু মানদন্ডের উপর নির্ভর করে এই গ্রামগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইতিমধ্যে ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে গিয়েছে। রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁরা ইতিমধ্যে টহলদারিও শুরু করেছেন। বিশেষত, প্রতিটি ব্লকের স্পর্শকাতর গ্রামগুলিতে গত ২-৩ দিন ধরে যৌথ বাহিনীর টহলদারি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজকের মধ্যে আরও ২০ কোম্পানি বাহিনী জেলায় পৌঁছে যাবে বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে, CRPF থাকতে পারে ৯ কোম্পানি, গুজরাট পুলিশ ৬ কোম্পানি, কর্ণাটক পুলিশ ৫ কোম্পানি থাকতে পারে। যে ২০ কোম্পানি ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়ে টহল শুরু করেছে বিভিন্ন ব্লকে, সেই তালিকায় আছে RPSF, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ, মধ্যপ্রদেশ পুলিশ, ওড়িশা পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। উল্লেখ্য যে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট বুথ আছে ৩৮৬৭টি। এর মধ্যে স্পর্শকাতর চিহ্নিত করা হয়েছে ৩০৫টি। স্পর্শকাতর বুথগুলিতে অতিরিক্ত সশস্ত্র বাহিনী থাকার কথা। তবে শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, রাজ্য পুলিশের নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনীও বুথগুলিতে থাকবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। অপরদিক, সিভিক পুলিশ শুধুমাত্র ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটের লাইন সামলাবেন বলে জেলা পুলিশ-প্রশাসন এবং কমিশন সূত্রে জানা গেছে। আদালতের নির্দেশ মেনেই তাঁদের ভোটকেন্দ্রে রাখা হচ্ছে না। ব্যবহার করা হচ্ছে না ভোটের কোন কাজেও। ভোটকেন্দ্রের বাইরে তাঁরা শুধুমাত্র ভোটের লাইন সামলাবেন।