তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ ফেব্রুয়ারি:গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে! মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক থেকে জেলা নেতৃত্ব উপস্থিত থাকলেও, শাসকদলের ভোট প্রচারে নেই ব্লক সভাপতি সহ একঝাঁক নেতা-কর্মী। ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা পৌরসভার। তৃণমুলের পৌর ভোটের প্রচার চলছে জোরকদমে। কিন্তু, প্রচারে গরহাজির ব্লক সভাপতি থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও তাঁদের অনুগামীরা। যা নিয়ে শুরু হয়েছে দুই গোষ্ঠীর তীব্র চাপানউতোর! উল্লেখ্য যে, চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার চলছে জোরকদমে। ডোর টু ডোর ক্যাম্পেন, মিটিং মিছিল থেকে পতাকা ফেস্টুন লাগানোর কাজ চলছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। এই ভোট প্রচারে তৃণমূল বিধায়ক অরূপ ধাড়া, চন্দ্রকোনা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ সাঁতরা এবং তাঁদের অনুগামীদের দেখা গেলেও, প্রচারে গরহাজির চন্দ্রকোনা ২ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জগজিৎ সরকার, চন্দ্রকোনা ২ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ ও তাঁদের অনুগামীরা। চন্দ্রকোনা পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে এখনও পর্যন্ত দেখা মেলেনি ব্লক সভাপতি ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও তাদের অনুগামীদের। স্বাভাবিকভাবেই, এ নিয়ে চলছে জোর জল্পনা। জল্পনার তত্ত্বে ভেসে বেড়াচ্ছে, চন্দ্রকোনা শহর তৃণমূল ও বিধায়ক বনাম ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির গোষ্ঠী কোন্দল।
যদিও, এই তত্ত্ব মানতে নারাজ তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। চন্দ্রকোনায় প্রচারে গিয়ে এবিষয়ে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আশিস হুদাইতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “ঘাটাল সাংগঠনিক জেলায় এই মুহূর্তে কোনও গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব নেই। তবে, প্রচারে কেউ কেউ আসতে পারছেন না, অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায়। আগামীদিনে সবাই নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। যারা যারা এখনও আসেননি, তাঁরা আসবে। আমাদের দলে কোনও বিভাজন নেই। আমাদের দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রতীক জোড়া ফুল। তার মাঝে আর কেউ নেই।” জেলা সভাপতি আরও জানান, “আমি দলের জেলা সভাপতি হিসাবে সবাইকেই আহ্বান করেছি।কেউ কেউ আসতে পেরেছেন; কেউ কেউ আসতে পারেননি!” যদিও, জেলা সভাপতির ‘শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা’ বিফলে গেছে; কারণ, প্রচারে গরহাজির চন্দ্রকোনা ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা ব্লকের তৃণমূল নেতা হীরালাল ঘোষ বিস্ফোরক অভিযোগ করে জানিয়েছেন, “পৌর নির্বাচন ঘোষণার সাথে সাথেই, বিধায়ক আমাদের না ডাকলেও, সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস বাবু আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা বেশ কয়েকটি মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু, সেখানে গিয়ে যে ধরনের চরম অসম্মানসূচক কথাবার্তা শুনতে হয়েছে বিধায়কের তরফ থেকে, তারপরই আমরা নিজেদের সরিয়ে নিয়েছি।”
প্রসঙ্গত, চন্দ্রকোনায় শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ সাঁতরা ও চন্দ্রকোনা বিধানসভার বিধায়ক অরূপ ধাড়া একটি গোষ্ঠী; অপরদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষ ও ব্লক সভাপতি জগজিৎ সরকার আর এক গোষ্ঠী। পৌর নির্বাচনের প্রচারে ব্লক সভাপতি জগজিৎ সরকারকে দেখা না গেলেও তিনি এনিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এবিষয়ে চন্দ্রকোনা বিধানসভার বিধায়ক অরূপ ধাড়া বলেন, “চন্দ্রকোনা বিধানসভায় তিনটি পৌরসভা রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে দলের সমস্ত নেতা কর্মী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, যাতে তিনটি পৌরসভায় তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী শুন্য বোর্ড গঠন করতে পারে। বিধায়ক হিসাবে সমস্ত নেতৃত্ব, কর্মীদের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ান জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম। কেউ যদি না এসে থাকে, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এনিয়ে আমার কিছু বলার নেই।” এখন দেখার, শাসকদলের এই গোষ্ঠী কোন্দলের প্রভাব ভোটে আদৌও পড়ে কিনা!