দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ ফেব্রুয়ারি: অবশেষে দলের তরফে এল চরম হুঁশিয়ারি! তাও আবার রাজ্যের শীর্ষ নেতাকে মঞ্চে বসিয়ে বিক্ষুব্ধদের শুনিয়ে দেওয়া হলো চরম সর্তকতা। জানিয়ে দেওয়া হল, ‘স্বয়ং দলনেত্রীর বার্তা’। অবিলম্বে, নির্দল বা গোঁজ প্রার্থী না তুললে, দল সেই নেতা-নেত্রীকে চিরতরে বহিষ্কার করবে! ভবিষ্যতে দলে ফেরানো হবেনা আর। পশ্চিম মেদিনীপুরের রেলশহর খড়্গপুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পৌরভোটের অন্যতম জেলা কো-আর্ডিনেটর অজিত মাইতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জহর পালের মতো নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন না করে, কোন নির্দল বা প্রার্থী দেওয়া হলে, সেই নেতা-নেত্রীকে দল সাসপেন্ড করবে। আগামীকাল বেলা ১২ টায় আমরা বৈঠকে বসবো জেলা নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়ে। তার আগে সকাল ১১ টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে দলকে।” অর্থাৎ বুধবার সকাল ১১ টার মধ্যে তাঁদের ঘোষণা করে দিতে হবে, তাঁরা নির্দল প্রার্থীকে ভোটের ময়দান থেকে তুলে নিচ্ছেন, কারণ মনোনয়ন প্রত্যাহারের আর সুযোগ নেই। শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ছিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। সেই হিসেবে, চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য জহরের হাতে সময় মাত্র ১৪ ঘন্টা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খড়্গপুর পৌরসভার ৩৩ নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা জহর পাল। আর, ৩৫ নং ওয়ার্ডে ‘নির্দল’ প্রার্থী তাঁর বৌমা জয়া পাল! সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী কবিতা দেবনাথ। প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য, দলের তরফে চরম হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল জহর বাবুকে! শোনেননি তিনি বা তাঁর পরিবার। তৃণমূল জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা সহ জেলা নেতৃত্ব চরম ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন জহরের সিদ্ধান্তে। পরোক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছিলেন সুজয়। এবার, মঞ্চে আইএনটিটিইউসি’র রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী তথা পৌরভোটের জেলা কো-অর্ডিনেটর মানস রঞ্জন ভূঁইয়া-কে বসিয়ে রেখে, আরেক কো-অর্ডিনেটর তথা পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি ঘোষণা করে দিলেন, “দলের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাঁরা দলীয় প্রার্থীকে না মেনে, গোঁজ বা নির্দল প্রার্থী দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামীকাল। তাই সকাল ১১ টার মধ্যে তাঁরা যেন নির্দল প্রার্থী তুলে নেন, নাহলে ওই নেতা বা নেত্রীদের বহিষ্কার করা হবে।”
উল্লেখ্য যে, দিনদুয়েক আগেই জহর পালের বৌমা তথা নির্দল প্রার্থী জয়া পাল জানিয়েছিলেন, “৩৫ নং ওয়ার্ডটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়েছিলেন জহর বাবু। দল সেই মূল্য দিলনা! তবে, ওখানকার কর্মীরা একপ্রকার জোর করেই আমাকে প্রার্থী করেছে। তাঁদের আবেগের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি লড়াই করছি। আশা করছি আমিই জিতবো। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা ছিল, আছে ও থাকবে।” বিষয়টি নিয়ে বেশ চাপে ছিলেন জহর বাবু! একপ্রকার সংবাদমাধ্যমের উপর বিরক্ত হয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, “আমি নিজের ওয়ার্ডে নিয়েই ব্যস্ত। তবে, যেটুকু শুনেছি, ওখানকার কর্মীরা নাকি জোর করে আমার বৌমাকে দাঁড় করিয়েছে। এনিয়ে আমার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি, আর এ নিয়ে আর কোনো আলোচনাও চাইনা।” তবে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলের চরম হুঁশিয়ারির পর, দল আর পরিবার নিয়ে বর্ষীয়ান নেতা জহর রীতিমতো উভয়সঙ্কটে! শেষ পর্যন্ত জহর কি করেন সেটাই এখন দেখার!