দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ জুলাই: আবার নতুন করে কোন ‘বাইরন’ বেরিয়ে আসুক; চায়না কোনও দলই! বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রার্থী হওয়ার পর, জিতে গিয়ে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হওয়ার নমুনা বঙ্গ রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে প্রচুর দেখেছে বাঙালি। যার সর্বশেষ সংযোজন নিঃসন্দেহে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বিধায়ক বাইরন বিশ্বাস! বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হিসেবে জিতে গিয়ে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে গিয়েছেন বাইরন। পঞ্চায়েতের ফলাফল বেরোনোর পরও এরকম বহু ‘বাইরন’ যে দেখা যাবে, তা কার্যত মেনেই নিচ্ছেন শাসক থেকে বিরোধীরা! তবে, ‘বাইরন’-দের সংখ্যাটা যাতে একটু কম হয়, পঞ্চায়েতের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সেই চেষ্টাই করেছে বিরোধী দলগুলি। বিশেষত, সিপিআইএম তথা বামফ্রন্ট। দলের একনিষ্ঠ কর্মী কিংবা তরুণ তুর্কীদেরই তাই প্রার্থী বাছাইয়ে এবার প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাঁরা যদি একই পরিবারের হন, তাতেও আপত্তি নেই! পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-১ নং ব্লকের আঙ্গুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গড়গড়িয়া এলাকার বাসিন্দা চন্দন শিট এবং তাঁর স্ত্রী টুটু শিট দু’জনেই সিপিআইএমের একনিষ্ঠ কর্মী। দলের দুর্দিনেও একইরকম ভাবে অনুগত ও বিশ্বস্ত! তাই, দু’জনকেই প্রার্থী করেছে দল।
সিপিআইএমের একটি অংশ মেনেও নিচ্ছেন, পার্টির সু-দিন থাকলে হয়তো দু’জন একসঙ্গে সুযোগ পেতেন না। হয়তো চন্দনা বা টুটু-র কেউই সুযোগ পেতেন না! দুর্দিন বলেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে টিকিট মিলেছে এঁদের! পেশায় শ্রমিক চন্দন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে। স্ত্রী টুটু সিপিআইএমের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পঞ্চায়েত সমিতিতে। দলের দুর্দিনে, শাসকের চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই প্রার্থী হওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন দম্পতী। দাঁতন ১নং ব্লকের ৫ নম্বর আঙ্গুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গড়গড়িয়ার এই ঘটনা জেলায় কার্যত নজির।
চন্দন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দাঁতন-১ ব্লকের ৫ নম্বর আঙ্গুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গড়গড়িয়া বুথে। আর, চন্দনের স্ত্রী টুটু দাঁতন-১ ব্লকের ২৪ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই ক’দিন স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই নিজেদের এলাকায় প্রচার সেরেছেন। জানা যায়, চন্দন উচ্চ মাধ্যমিকের পর টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশুনো করে আজ একজন শ্রমিক। স্ত্রী গৃহবধূ। আপদে বিপদে এলাকার মানুষের পাশে থাকেন। শাসকের হুমকি, সন্ত্রাস উপেক্ষা করেও লাল ঝান্ডা কাঁধে ঘুরে বেড়ান এলাকায়। সিপিএম করেন গর্বের সঙ্গে। চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। তাই, দু’জনকেই এক সঙ্গে প্রার্থী করেছে দল। সিপিআই(এম)-র রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস সিনহা বলেন, “দুর্দিনেই প্রকৃত কর্মী চেনা যায়। পার্টির এখন কিছু দেওয়ার ক্ষমতা নেই। চন্দন শিট, টুটু শিট’রা পার্টিকে দেওয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন। পার্টি থেকে কিছু পাওয়ার জন্য নয়। আর যাই হোক দলের দুর্দিনে যারা এগিয়ে এসেছেন, তাঁরা সুযোগ-সন্ধানী নয়। পার্টির সু’দিন হলে প্রার্থী হওয়ার জন্য পার্টি অফিসের সামনে লাইন পড়ে যেত। এঁরাই প্রকৃত পার্টি-দরদী। এঁরা আমাদের গর্ব।” শেষ পর্যন্ত এলাকাবাসী তাঁদের পাশেই থাকবেন, আশায় বুক বেঁধেছেন দাঁতনের এই ‘ডেডিকেটেড’ বাম-দম্পতি!