দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ ফেব্রুয়ারি: মাসখানেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা! অবশেষে ঘরের ছেলে ‘ঘরে’ ফিরলেন। মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি’র প্রাক্তন সহ সভাপতি শিবু পানিগ্রাহী (বাবু পানিগ্রাহী)। একসময়, মেদিনীপুর শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে, ২০১৭ সালে দিল্লিতে গিয়ে বিজেপি-তে যোগদান করেছিলেন মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ এই নেতা। তারপর, গত ৫ বছর ধরে জেলা বিজেপি’র অন্যতম নেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন। অবশেষে, মোহভঙ্গ হল! ফিরলেন নিজের পুরানো দল তৃণমূলেই। রবিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়ে নিজের স্ত্রী তথা বিজেপির মহিলা মোর্চার সহ-সভাপতি সীমা পানিগ্রাহী সহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে তৃণমূলে যোগদান করলেন শিবু। তাঁদের হাতে পতাকা তুলে দিলেন সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা, রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোৎ ঘোষ, গভর্নমেন্ট প্লিডার তথা জেলা মুখপাত্র সুকুমার পড়িয়া এবং শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডব প্রমুখ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দুই গুরুত্বপূর্ণ পৌরসভা মেদিনীপুর ও খড়্গপুরে ধারাবাহিকভাবে ঘর ভাঙছে বিজেপি’র। তাও আবার পৌরসভা নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে। এমনকি, সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ দুই শহরে থাকাকালীন, দু’দিনই তৃণমূলে যোগদান করলেন বিজেপি নেতাকর্মীরা! তবে কি পুরোটাই পরিকল্পনামাফিক? জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা জানিয়েছেন, “কোন পরিকল্পনা নয়। ধারাবাহিকভাবে যোগদান পর্ব চলছে। আর, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ ছিল, তৃণমূল ছেড়ে যাঁরা বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের পুনরায় দলে নিতে গেলে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন লাগবে। সেই অনুমতি নিয়েই বিজেপির প্রাক্তন জেলা সহ সভাপতি শিবু পানিগ্রাহীকে যোগদান করানো হয়েছে। উনি মাসখানেক আগেই ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন আসতে একটু দেরি হল। তবে, এটা ঠিক দিলীপ বাবু’র গ্রহণযোগ্যতা এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে, তিনি শহরে পা রাখলেই শত শত বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগদান করতে চাইছেন!” যদিও, বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দিতে রাজি নয় জেলা ও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি শমিত দাস জানিয়েছেন, “যাঁরা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেছিলেন, তাঁরা ফের তৃণমূলে গেলে দলের ক্ষতি নয় লাভ হবে! কারণ, তাঁরা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই এই দলে এসেছিলেন। স্বার্থ পূরণ হয়নি, ফের তৃণমূলে চলে গেছেন।”
এদিকে, শিবু পানিগ্রাহী জানিয়েছেন, “২০১৬ সালে তৃণমূলের সাফল্যের পর, ২০১৭ সালে আমি বিজেপিতে গিয়েছিলাম। সেই সময় এরাজ্যে বিজেপির জনসমর্থন কিছুই ছিলনা! ২০১৯ এর লোকসভায় জনসমর্থন পেয়েছিল। কাজেই স্বার্থের বিষয়টা অন্তত আমাদের ক্ষেত্রে খাটে না। মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা নিয়ে গিয়েছিলাম। মানুষের জন্য কাজ করেওছি, সেটা আমার এলাকার বাসিন্দারা ভালোভাবে জানেন। কিন্তু, এই মুহূর্তে বিজেপি-তে কাজ করার মতো পরিস্থিতি নেই। নেতাকর্মীদের সম্মান নেই। তাই, মানুষের পাশে থাকতে, তাঁদের দাবিতেই জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে ফিরলাম দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে নিয়ে। সীমা পানিগ্রাহী, গৌতম ঘোড়ই এর মতো জেলা নেতৃত্বরাও আছেন। ২৪ নং ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরাও আছেন।”