মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ জুন: মাধ্যমিকে এবার রীতিমতো ছক্কা হাঁকাল পশ্চিম মেদিনীপুর। মেধাতালিকায় এই প্রথম একসঙ্গে জেলার ছয় পড়ুয়া স্থান করে নিলেন। এঁরা হলেন, ১. রৌনক মন্ডল- দ্বিতীয় (ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়), ২. রনিত সাউ- সপ্তম (মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবন), ৩. শাশ্বত সিং- সপ্তম (মল্লেশ্বরপুর সারদা বিদ্যাপীঠ), ৪. দেবমাল্য নিয়োগী- অষ্টম (মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবন), ৫. শ্রেয়সী ভুঁইয়া- অষ্টম (ধনেশ্বরপুর রাখাল চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়), ৬. অয়ন কুমার পাল- দশম (রাধামোহনপুর বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়)। জেলায় প্রথম ঘাটালের কোন্নগরের বাসিন্দা রৌনক মন্ডল (Rounak Mandal)। ‘রৌনক’ শব্দের অর্থ ‘উজ্জ্বল’। মাধ্যমিকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের নাম যথার্থ অর্থেই ‘উজ্জ্বল’ করেছে রৌনক। রৌনকের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২। তাঁর বাবা তাপস কুমার মন্ডল পেশায় ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়েরই শিক্ষক। অন্যদিকে, জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম শ্রেয়সী ভুঁইয়া মেধাতালিকায় অষ্টম স্থানে আছেন। প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬। শ্রেয়সী পিংলার ধনেশ্বরপুর রাখাল চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং বাসুদেবপুরের বাসিন্দা। তাঁর বাবা (ব্রজ গোপাল ভুঁইয়া) এবং মা দু’জনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এদিকে, মেধাতালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের ছাত্র- রনিত সাউ ও চন্দ্রকোনা টাউনের মল্লেশ্বরপুর সারদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শাশ্বত সিং। দু’জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৭। অন্যদিকে, অষ্টম স্থানে শ্রেয়সী ভুঁইয়া ছাড়াও আছেন, মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের আরকে ছাত্র দেবমাল্য নিয়োগী (৬৮৬)। অপরদিক, ৬৮৪ নম্বর পেয়ে দশম স্থানে আছেন ডেবরা ব্লকের রাধামোহনপুর বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অয়ন কুমার পাল। তাঁর বাবা-মা দু’জনই শিক্ষক বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, জেলার এই ৬ জন কৃতি সন্তান-ই খুঁটিয়ে পাঠ্যপুস্তক (Text Book) পড়ার উপর সর্বাধিক জোর দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তার সঙ্গে সঙ্গে রেফারেন্স বই বা সহায়িকা সহ অন্যান্য বই-ও নিখুঁত ভাবে পড়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। তবে, তাঁরা প্রায় সকলেই স্কুলের সাথে সাথে গৃহশিক্ষকদের-ও কৃতিত্ব দিয়েছেন। মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র রনিতের বাড়ি শহরের পালবাড়িতে। বাবা অংকের শিক্ষক। রনিত জানালেন, “এই ফলাফলে সবথেকে বেশি অবদান বাবার। তবে, বিদ্যালয় ও গৃহশিক্ষকদের অবদানও অপরিসীম। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। সেজন্য এখন থেকেই NEET এর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি।” অন্যদিকে, দেবমাল্য’র বাড়ি শহরের জর্জকোর্ট সংলগ্ন অরবিন্দ নগর এলাকায়। মেদিনীপুর শহরের এই কৃতি সন্তানের বাড়িতেও এখন খুশির বন্যা। বাবা কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে থাকতেন। তাই, মা ছাড়াও দাদু-ঠাকুমা’কে বিশেষ কৃতিত্ব দিয়েছেন দেবমাল্য। সেও চায় ডাক্তার হতে। অতিমারী আর লকডাউন তাঁর কাছে কিছুটা আশীর্বাদ হয়ে উঠেছিল বলে দেবমাল্য জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “পাঠ্য পুস্তক সহ প্রতিটি বই খুব ভালোভাবে পড়েছি। বিশেষত, লকডাউনের সময় দিনরাত বই পড়েই কাটিয়েছি। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা হত না বলে মাঝেমধ্যে মনখারাপ হত ঠিকই, তবে, ওই সময় মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি। এছাড়াও, প্রতিটি বিষয়ে গৃহশিক্ষকরা ছিলেন। তাঁরাও সাহায্য করেছেন।” দেবমাল্য-ও NEET (National Elegibility Cum Entrance Test) এ সফল হয়ে, ডাক্তারি পড়তে চায়। এদিকে, ৬৮৭ নম্বর পেয়ে সপ্তম স্থানে আছেন ‘জঙ্গলমহলের গর্ব’ শাশ্বত সিং। শালবনী ব্লকের ভীমপুর এলাকার আদি বাসিন্দা হলেও, বর্তমানে মেদিনীপুর শহরের আবাসে থাকেন তাঁরা। চন্দ্রকোনা টাউনের মল্লেশ্বরপুর সারদা বিদ্যাপীঠের ছাত্র শাশ্বত’র বাবা সন্দীপ সিংহ মেছেদা এলাকার একটি চার্চের পুরোহিত। মা শুক্তি টুডু সিং টাউন চন্দ্রকোনা এলাকার কুঁয়াপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষিকা ছিলেন। মাসখানেক হল, মেদিনীপুর শহরের অলিগঞ্জ ঋষি রাজনারায়ণ বালিকা বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন। শাশ্বত-ও চায় বড় হয়ে ডাক্তার হতে।