দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ মার্চ: শূন্য শ্রেণীকক্ষে সারি বদ্ধ বেঞ্চ। ধুলো জমছে চেয়ার-টেবিলে। আছে ব্ল্যাকবোর্ডও। তবে, আঁচড় পড়েনি দীর্ঘদিন। মিড-ডে মিলের সরঞ্জাম ঘিরে মাকড়সার জাল। ঘন্টাটাও বাজেনি কতদিন! একমনে খাতার কাজ করে যাচ্ছেন হেডক্লার্ক। দুই শিক্ষিকা নিজেদের মধ্যে গল্পে ব্যস্ত! মাঝেমধ্যে মোবাইলে এটা-ওটা দেখে নেওয়া। কিই বা করবেন? যাদের জন্য এত ‘আয়োজন’, তারাই তো নেই! হ্যাঁ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার বামনদা শ্রী শ্রী মা গার্লস স্কুল (জুনিয়র হাই স্কুল)- এ চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী সংখ্যা (বা, ছাত্রী সংখ্যা) ‘শূন্য’ (০)। গত শিক্ষাবর্ষে ছাত্রী ছিল ৪ (চার) জন। এবার, তারাও টিসি নিয়ে পাশের উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পড়ুয়া শূন্য স্কুল যেন খাঁ খাঁ করছে! তবুও, নিয়ম করে প্রতিদিনই বিদ্যালয়ে আসেন দুই শিক্ষিকা ও দুই শিক্ষাকর্মী। সাড়ে তিনটা পর্যন্ত থাকেন, তারপর বাড়ি চলে যান। শুক্রবার দুপুরে এমনটাই জানালেন শিক্ষিকা মধুমিতা জানা কিংবা শিক্ষাকর্মী (ক্লার্ক) সুবর্ণ দাস।

thebengalpost.net
খাঁ খাঁ করছে স্কুল চত্বর:

বিদ্যালয়ে একজনও পড়ুয়া নেই। তবুও, মাসে মাসে বেতন তুলছেন! গ্রামবাসীদের কাছ থেকে এমন টিটকিরিও শুনতে হচ্ছে ইদানিং। তার সঙ্গে আছে মনখারাপও! শিক্ষাকর্মী সুবর্ণ দাস বললেন, “যাদের জন্য এই স্কুল। এতো পরিকাঠামো, সাজসরঞ্জাম। তারাই তো নেই! আমাদের একটুও ভালোলাগেনা। কচিকাঁচাদের কলরব শুনবো বলেই তো এই পেশায় এসেছিলাম। আমি অন্য জেলার বাসিন্দা। এত দূরে এসে চাকরি করছি যাদের জন্য, তারাই তো নেই!” তিনি এও জানান, “প্রথম এক-দেড় ঘন্টা খাতার কাজ করতে হয়। পড়ুয়া না থাকলেও নিয়ম করে সেসব করতে হয়। তারপর আর কোনো কাজ থাকেনা। বসে বসে সময় কাটতে চায়না!” শিক্ষিকা মধুমিতা জানা বলেন, “পাশেই উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুল অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। তার উপর পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। গত ২-৩ বছর ধরে বিজ্ঞানের একজনও শিক্ষক নেই। তাই, পড়ুয়া কমতে কমতে এবার শূন্য হয়ে গেছে। আমরা গ্রামে গিয়ে বুঝিয়েছি। কিন্তু, কাজ হয়নি!” তিনি এও জানান, “বিষয়টি জানানো হয়েছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।”

এলাকাবাসী বলছেন, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্কুল। একসময় গম গম করত এই এলাকা। ছাত্রীদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠতো বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। ধীরে ধীরে পড়ুয়া কমতে শুরু করে বিভিন্ন কারণে। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত মালযমুনা কে.পি.এস হাই স্কুল। জুনিয়র হাই স্কুলে না পড়ে সকলেই হাই স্কুলে পড়তে চায়। নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আর চিন্তা করতে হবে না। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীও বেশি। এই সব নানা কারণে ছাত্রীরা এখন আর এই অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলে ভর্তি হতে চায় না। এমনটাই জানাচ্ছেন এলাকাবাসী। এমনকি, জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা চান, “এই স্কুলে যখন পড়ুয়াই নেই, স্কুল রেখে আর কি হবে!” স্কুল উঠে গেলে তাঁরা নিজেদের জমি ফেরতের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান। যদিও, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বা এ.আই কাজল মোল্লা বলেন, “এই স্কুল এবার পড়ুয়া শূন্য হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এই স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পাশাপাশি স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর, এই বিদ্যালয় ভবনে মালযমুনার সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলটিকে স্থানান্তরিত করার কথা চিন্তা করেছি।”

thebengalpost.net
বসে আছেন দুই শিক্ষিকা ও ক্লার্ক :