Education

Midnapore School: পশ্চিম মেদিনীপুরের এই স্কুলে শিক্ষকরাই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন, গন্ডগোল থামাতে পুলিশ যায় মাসে পাঁচ বার! অরাজকতার বিরুদ্ধে ‘অনশন’ DI অফিসে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ মে: বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর। আর, সেই মেদিনীপুরের-ই একটি স্কুলে গত দশ বছর ধরে চলছে রীতিমতো ‘মাৎস্যন্যায়’ বা ‘অরাজক’ পরিস্থিতি! অভিযোগ, এই স্কুলের মাত্র ২-৩ জন শিক্ষক বাকি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একের পর এক ‘খুনের চেষ্টার মামলা’ (Attempt to Murder) সহ বিভিন্ন ধরনের মামলা করে যাচ্ছেন। প্রতিমুহূর্তে হেনস্থা করছেন প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক এবং শিক্ষিকাদের। শুধু তাই নয়, মাঝেমধ্যেই স্কুলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, মাসে অন্তত ৫ বার নাকি পুলিশকে পৌঁছতে হয়। আর, পড়াশোনা বা স্কুলের পরিকাঠামো? নিতান্ত ‘কঙ্কালসার’ অবস্থা বলে জানাচ্ছেন, স্বয়ং প্রধান শিক্ষক সহ ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাই, ১২০০ থেকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এখন কমতে কমতে ৪০০’র আশেপাশে। বাধ্য হয়ে তাই, স্কুল-কে বাঁচাতে সোমবার সকাল থেকে বিকেল অবধি আমরণ অনশনে বসেছিলেন প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আশ্বাস পেয়ে সন্ধ্যা নাগাদ অনশন তোলেন তাঁরা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণ থানার (খড়্গপুর-১ নং) সেই ‘বিখ্যাত’ (নাকি, কুখ্যাত?) স্কুলটি হল, ভেটিয়া চন্ডী উচ্চ বিদ্যালয় (Bhetia Chandi High School- HS)। সেই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক সহ ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সোমবার জেলা শহর মেদিনীপুরের শিক্ষা ভবন অর্থাৎ DI অফিসের সামনে নজিরবিহীন প্রতিবাদ-অনশনে বসতে বাধ্য হলেন। স্কুলের এই পরিস্থিতি নিয়ে শুধু শিক্ষক-শিক্ষিকা বা এলাকাবাসী নয়, রীতিমতো বিরক্ত পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসকদলের জেলা নেতৃত্বও! তবে, কিছুতেই নাকি বাগে আনা যাচ্ছেনা শাসকদল ঘনিষ্ঠ একজন শিক্ষক এবং তাঁর দু-তিন জন সাঙ্গ পাঙ্গদের। স্থানীয় এলাকারই বাসিন্দা ওই শিক্ষক আবার প্রায় আড়াই বছর বরখাস্ত থাকার পর, সম্প্রতি স্কুলে যোগদান করে ফের উৎপাত শুরু করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

খড়্গপুর গ্রামীণ এলাকার ওই উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষিকা ২৭ জন। শিক্ষাকর্মী সহ প্রায় ৩২ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ বা FIR নাকি পঞ্চাশের বেশি! এই অভিযোগ আবার স্কুলেরই শিক্ষক-শিক্ষিকারা একে অপরের বিরুদ্ধে করেছেন। মামলা থেকে বাদ যাননি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক। প্রতি মাসে ৪ থেকে ৫ বার পুলিশ গাড়ি যায় গোলমালের খোঁজ নিতে। কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আবার খুনের চেষ্টার মামলাও চলছে। খড়্গপুর গ্রামীনের এই স্কুল নিয়ে অতিষ্ঠ পুলিশও! মাস পঁচেক আগে মেডিক্যাল গ্রাউন্ডে বদলি হয়ে আসা প্রধান শিক্ষক স্কুল চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ডিআই, শিক্ষা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রধান শিক্ষক। স্কুলে নাকি কোনরকম উন্নয়নমূলক কাজকর্ম করতে দেওয়া হচ্ছে না। নেই ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিরাপত্তা। মিড-ডে-মিল সহ বিভিন্ন প্রকল্পে একজন শিক্ষক সহ স্থানীয় ২-৩ জন দুর্নীতি করার চেষ্টা করছেন। ‌এই পরিস্থিতিতে প্রধান শিক্ষকের আবেদন, “আমাকে স্কুলটা ভালোভাবে চালানোর সুযোগ করেদিন”। অভিযোগ, যে স্কুলে এক সময় প্রায় ১২০০ ছাত্র-ছাত্রী ছিল, এখন সেখানে খাতায় কলমে মেরেকেটে সাড়ে চারশো! আর, নিয়মিত স্কুলে আসে আড়াইশো থেকে তিনশো। গোলমালের জন্য ওই স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পড়তে পাঠাতে চাননা অভিভাবকরা। লোকাল থানা সূত্রে খবর, ওই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা একে অপরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে জিডি, এফআইআর করছেন।

ডিআই অফিসের সামনে ধর্না :

 
জানা গিয়েছে, খড়্গপুর-১ ব্লকের এই ভেটিয়া চন্ডী স্কুলে প্রায় দশ বছর ধরে এই গোলমাল চলছে। স্কুলের এক শিক্ষক প্রায় আড়াই বছর সাসপেন্ড ছিলেন। কয়েক মাস আগে ফের স্কুলে জয়েন করেছেন। অভিযোগের প্রধান তীর ওই শিক্ষকের দিকেই। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আড়াআড়ি দুটি ভাগে বিভক্ত। অভিযোগ, অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ প্যারালাল এডমিনিস্ট্রেশন চালানোর চেষ্টা করে। স্কুলের ১৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নামে এটেম্পট টু মার্ডারের অভিযোগ আছে। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার শীট তাই বলেন, “মাস পাঁচেক আগে আমি এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এসেছি। এসে যা দেখছি তা বলার নয়। স্কুলের বর্তমান ছাত্রছাত্রী সংখ্যা সাড়ে চারশো। লকডাউনের পর দৈনিক উপস্থিতি আড়াইশো থেকে তিনশো। স্কুলের পরিকাঠামো না দেখলে বোঝা যাবে না। সমস্ত ঘটনা ডিআই থেকে শিক্ষা দপ্তর, এমনকি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে। আমার আবেদন, স্কুলটা ভালোভাবে চালাতে দিন।” স্কুলের অন্য আর এক শিক্ষকের কথায় “ছাত্রের তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষক থাকলে কী আর করবে! মূলত এক দু-জন শিক্ষকের জন্য এত গোলমাল।” তবে, শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও অভিযুক্ত ওই ২-৩ জন শিক্ষককে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবেনা বলে জানিয়েছেন শাসকদলের জেলা নেতৃত্ব।
স্বয়ং প্রধান শিক্ষক ধর্না, অনশনে :

News Desk

Recent Posts

Laxmi Puja: মা লক্ষ্মীর কাছে কন্যা ‘তিলোত্তমা’র জন্য বিচার চাইলেন মেদিনীপুরের রমাপ্রসাদ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৮ অক্টোবর: কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতেও আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ!…

1 day ago

Midnapore: মেদিনীপুর বিধানসভার একশো শতাংশ বুথেই থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী, থাকবে CCTV ক্যামেরাও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ অক্টোবর: মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে…

2 days ago

Midnapore: টিউশন পড়ে বাড়ি ফিরছিল, সজোরে ধাক্কা পিকাপ ভ্যানের! কোজাগরীর পরের দিনই লক্ষ্মী-বিদায় পশ্চিম মেদিনীপুরে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ অক্টোবর: টিউশন পড়া শেষ করে নিজের সাইকেল নিয়ে…

2 days ago

Midnapore: মেদিনীপুর বিধানসভার উপ-নির্বাচন ১৩ নভেম্বর! আদর্শ আচরণবিধি লাগু হতে চলেছে ১৮ অক্টোবর থেকে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৫ অক্টোবর: মেদিনীপুর সহ রাজ্যের ৬টি এবং দেশের ৪৮টি বিধানসভায় উপ-নির্বাচন…

4 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের প্রার্থী ভূমিপুত্রই! বিজয়ার প্রণাম সেরে দিদির কাছ থেকে মিষ্টি আর ‘প্রশংসা’ নিয়ে ফিরলেন সুজয়

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৫ অক্টোবর: মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খন্ড বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে…

4 days ago

Midnapore: মেদিনীপুরের পুজো কার্নিভালে সংস্কৃতি থেকে সচেতনতার বার্তা; ‘নারীশক্তির জয়গান’ গেয়ে নজর কাড়ল পুলিশ লাইন হাউসিং দুর্গাপূজা কমিটি

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ অক্টোবর: নারীশক্তির জয়গানের মধ্য দিয়েই মাতৃশক্তির বন্দনা, দেবী…

4 days ago