তনুপ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জুন: মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর। উচ্চমাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ! এবার সর্বভারতীয় নিট (NEET)- এও সফল পশ্চিম মেদিনীপুরের মহম্মদ সুয়াইব মল্লিক। চন্দ্রকোনার কাশন্ড গ্রামের সুয়াইব ২০২৩ সালের ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় ৭২০’র মধ্যে ৬২৯ পেয়ে সারা দেশে জেনারেল ক্যাটাগরিতে ১৪২৯৫ র‌্যাঙ্ক করেছে। নিজের ক্যাটাগরিতে তার র‌্যাঙ্ক ৬৪২৫। সুয়াইবের ‘স্বপ্ন’ একজন দক্ষ নিউরো সার্জেন হওয়া। তবে, বাবা পেশায় সামান্য হকার। তাই, সুয়াইবের স্বপ্ন অর্থের অভাবে অধরা থেকে যাবে না তো? এই আশঙ্কাই এখন ঘিরে ধরেছে তার পরিবারকে!

thebengalpost.net
মহম্মদ সুয়াইব মল্লিক:

পড়াশোনায় বরাবরের মেধাবী সুয়াইব ২০২০ সালে মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আল আমিন মিশনে পড়াশোনা করলেও সুয়াইব নিটের প্রস্তুতি নিয়েছিল বাড়ি থেকেই। সুয়াইব বলে, “নবম শ্রেণীতে যখন আল আমিন মিশনে ভর্তি হলাম, দেখলাম দ্বাদশ শ্রেণীতে যেসব ছাত্ররা সাফল্য পায়, স্যারেরা তাদের মঞ্চে তুলে পুরস্কার দেয়। তখন থেকেই আমি একটা অনুপ্রেরণা পাই। মনে মনে ভাবি, আমাকেও ভালো রেজাল্ট করতে হবে। যাতে আমি স্যারেদের কাছ থেকে মঞ্চে উঠে সম্মানটা নিতে পারি। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর সেই জেদটা মনের মধ্যে পুষে রেখে নিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি। সেভাবে আমি কোন কোচিংয়ে ভর্তি হইনি। HS- এর বইগুলোকেই ভালো করে পড়ি। আর, বাইরেরও কিছু বই সংগ্রহ করি। সঙ্গে মিশনের জাহাঙ্গীর স্যার আমায় প্রচন্ডভাবে উৎসাহিত করেন। যদিও, আল আমিন মিশনের সিনিয়ররাও আমার অনুপ্রেরণা। বড় হয়ে আমার ইচ্ছে আমি একজন ভালো নিউরো সার্জেন হবো।” প্রত্যন্ত এই কাশন্ড গ্রামে প্রথম কেউ ডাক্তারি পড়তে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত গোটা গ্রাম!”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুয়াইবের প্রাথমিকের পাঠ গ্রামেরই স্কুলে। শৈশবেই তার মেধা দেখে এক শিক্ষক তার বাবা আখতার মল্লিক-কে ডেকে কানে কানে একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন! তা স্মরণ করে এদিন আখতার বলেন, উনি বলেছিলেন, “ছেলেটার তেজ আছে। পারলে ভালো কোনো স্কুলে ভর্তি করান। অনেকদূর যাবে ও।” অর্থের অভাবে নিজের পড়াশোনা বেশিদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি সুয়াইবের বাবা আকতার মল্লিক। কিন্তু, মেধাবী ছেলেকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি। পড়ার খরচ জোগাতে মাথার বোঝাটাকে ক্রমশ ভারী করেছেন। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ফোমের গদি বিক্রি করা আকতার ছেলের জন্য কাঁধটাকে আরও একটু চওড়া করেছেন। কার্যত ঘটিবাটি বেচে, ক্লাস নাইনে সুয়াইবকে ভর্তি করেন আবাসিক স্কুল হাওড়ার আল আমিন মিশনে। সেখান থেকেই গত বছর উচ্চমাধ্যমিক দেয় সুয়াইব। ৯৪ শতাংশ নম্বরও পায়। এরপর, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বাড়িতেই দিনরাত এক করে চলতে থাকে পড়াশোনা। যৌথ সংসারে অনেক কষ্ট করে কখনো বাড়ির ছাদে, কখনো গাছের তলায় বসে পড়াশোনা করতে হয়েছে সুয়াইবকে। বাবা ছাড়াও মা শাহানারা বেগম ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন সবসময়। অবশেষে তাঁদের সব কষ্ট সার্থক হয়েছে। রাজ্যে যে ধরনের ডাক্তারের বড্ড অভাব, সেই নিউরো সার্জেন হওয়ার লক্ষ্যে এবার নতুন লড়াই শুরু হবে সুয়াইবের।

thebengalpost.net
সুয়াইবের নিটের রেজাল্ট: