দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ আগস্ট: এ যেন গলি থেকে রাজপথে পৌঁছনোর এক গল্প! অখ্যাত এক গ্রামের দিনমজুরের ছেলে সুযোগ পেল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT)-তে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর সদর ব্লকের কঙ্কাবতী গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় একটি পোল্ট্রি ফার্মের শ্রমিক (বা, দিনমজুর) সুকুমার মাঝি’র ছোটো ছেলে অভিজিৎ ‘ভুবন’ জয় করার স্বপ্ন নিয়ে গত মঙ্গলবারই (৩০ জুলাই) ভর্তি হয়েছে আইআইটি ভুবনেশ্বরে (IIT Bhubaneswar)। ছোট থেকেই অভিজিতের একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান, ভালোবাসা ছিল ফুটবল। কে জানত, সেই ‘ফুটবল’-ই এভাবে মোড় ঘুরিয়ে দেবে জেলা শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে, ছোট্ট কঙ্কাবতী গ্রামের বাসিন্দা অভিজিতের! বলাই বাহুল্য, শুধু ফুটবল নয়, অভিজিতের উত্থানের পেছনে তার স্কুলের অবদান অনস্বীকার্য।
জানা যায়, ২০১৯ সালে জঙ্গলমহলের অভিজিৎ যখন স্থানীয় একটি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, সেই সময় তাকে সবংয়ের দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদন (Dasagram S.S Sikshasadan)-র প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধানের নজরে আনেন স্থানীয় এক ফুটবল কোচ। সেবার সুব্রত কাপ খেলতে যায় দশগ্রাম এস.এস হাই স্কুল। ছোট থেকেই অভিজিৎ ভাল ফুটবল খেলে। ‘সুব্রত কাপ’ খেলার স্বপ্ন নিয়েই অষ্টম শ্রেণির অভিজিৎ কঙ্কাবতী স্কুল থেকে গিয়ে ভর্তি হয় সবংয়ের দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদনে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান অভিজিৎ-কে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকার সুযোগ করে দেন প্রধান শিক্ষক যুগল বাবু। তাঁর সান্নিধ্য আর অন্যান্য শিক্ষকদের কঠোর অনুশাসনের মধ্যেই ফুটবল আর পড়াশোনা সমান তালে চলতে থাকে অভিজিতের। ২০২২ সালে মাধ্যমিকে স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর (৬৬৪) পায় অভিজিৎ-ই। অভিজিতের দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের হস্টেলেই তার থাকা-খাওয়া সহ পড়াশোনার অন্যান্য খরচের জন্য বিদ্যালয়ের একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থা করে দেন প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধান। শিক্ষকদের মান রাখে অভিজিৎ-ও! ৪৫১ নম্বর (৯০ শতাংশ) পেয়ে এবার (২০২৪) উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সে। যদিও, তার ইচ্ছে ছিল ভালো কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় সেই চেষ্টাও চালিয়ে যায় অভিজিৎ। অবশেষে আইআইটি’র এন্ট্রান্স (JEE Advance) পরীক্ষাতেও সফল হয় জঙ্গলমহল তথা জেলার গর্ব অভিজিৎ। সুযোগ পায় আইআইটি ভুবনেশ্বরে (IIT Bhubaneswar)। অভিজিতের জন্য গর্ববোধ করছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধান বলেন, “২০১৯ সালে আমাদের স্কুল সুব্রত কাপ খেলতে যাওয়ার আগে অভিজিৎ অষ্টম শ্রেণিতে আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়। ভালো ফুটবল খেলে। ছেলেটি পড়াশোনাতেও ভালো। পারিবারিক অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে, দশম শ্রেণি পর্যন্ত হোস্টেল, স্কুলের খরচের ব্যবস্থা আমরাই করে দিই। ২০২২ সালে মাধ্যমিকে স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বরও পায় অভিজিৎ। একাদশ শ্রেণি থেকে আমাদের স্কুলের ‘কাজলবাবু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ ওর পড়াশোনায় নানাভাবে সাহায্য করে। স্কুল এবং ট্রাস্টের সভাপতি তথা প্রাক্তন শিক্ষক দীপক পট্টনায়েক এসব বিষয়ে খুবই আন্তরিক। মাঝেমধ্যেই নিজেও বায়োলজি পড়িয়েছেন। এছাড়াও, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক রণজিৎ বাবু, গণিতের শিক্ষক মলয় বাবু পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করেছেন। আমাদের স্কুলের প্রাক্তনী ট্রাস্টের সদস্য ডক্টর নিরঞ্জন শীট অর্থ দিয়ে, অনলাইনে পড়াশোনার জন্য ট্যাব কিনে দিয়ে অভিজিতের লেখাপড়ায় সাহায্য করেছেন। এভাবে অনেকেই আমাদের ট্রাস্টের মাধ্যমে অভিজিতের মতো দুঃস্থ পড়ুয়াদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। অভিজিৎ আইআইটি ভুবনেশ্বরে ভর্তি হয়েছে। আমরা ওর সাফল্য কামনা করি। ও আরও এগিয়ে যাক।” অভিজিতের বাবা সুকুমার পোল্ট্রি ফার্মের একজন শ্রমিক। মা কাঞ্চনী মাঝেমধ্যে জমিতে দিনমজুরির কাজ করেন। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমরা নিজেরা লেখাপড়া জানিনা। তাই ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে চেয়েছিলাম। আমার তিন ছেলেরই পড়াশোনা করার খুব ইচ্ছে। ওর বাবা একটি পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করে। আমিও লোকের জমিতে চাষের কাজ করতে যাই। ওর বাবা আর পারছিল না। তাই, অভাবের সংসারে বড় ছেলে মাঝ পথেই পড়া ছেড়ে ডাক বিভাগের কাজে ঢুকে গেল। মেজ ছেলে মেদিনীপুর শহরের রাঙ্গামাটিতে সরকারি আইটিআই (ITI)-তে পড়ে। ছোট ছেলে ভাল ফুটবল খেলত। ওর খেলা দেখেই দশগ্রাম স্কুলের শিক্ষকরা তাঁদের স্কুলে নিয়ে গিয়ে ওকে ভর্তি করে দেন। লেখা পড়ার দায়িত্বও নিলেন। ওঁরা না থাকলে, আজ আমার ছেলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না!” বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বর থেকে অভিজিৎ জানায়, “স্কুলের প্রধান শিক্ষক যুগলবাবু, কাজলবাবু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভাপতি দীপকবাবু, স্কুলের প্রাক্তনী নিরঞ্জনবাবু এবং স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য ছাড়া আমি এই জায়গায় আসতে পারতাম না। আমি যদি কোনওদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারি, তাহলে আমার এই স্কুলের জন্য, ‘কাজলবাবু মেলোরিয়াল ট্রাস্ট’-র জন্য কিছু করার চেষ্টা করব। যাতে আরও অনেক দুঃস্থ ছেলে-মেয়েরা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে!”
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৮ অক্টোবর: কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতেও আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ!…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ অক্টোবর: মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ অক্টোবর: টিউশন পড়া শেষ করে নিজের সাইকেল নিয়ে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৫ অক্টোবর: মেদিনীপুর সহ রাজ্যের ৬টি এবং দেশের ৪৮টি বিধানসভায় উপ-নির্বাচন…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৫ অক্টোবর: মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খন্ড বিধানসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ অক্টোবর: নারীশক্তির জয়গানের মধ্য দিয়েই মাতৃশক্তির বন্দনা, দেবী…