শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ মে: বাবা সামান্য দিনমজুর। সংসারের হাল ধরতে গরুর দুধ বিক্রি করতেন মা। ছেঁড়া ত্রিপল দিয়ে ঘেরা এক চিলতে কুঁড়ে ঘরে বাস। পড়ার ঘর বলতে আলাদা কিছু নেই! অন্ধকার ঘরের মাঝে একটা টেবিলে রাখা স্বরূপের বইপত্র। সেই ঘরেই যেন‌ জ্বলে উঠলো আলো! সে আলো সাফল্যের, মেধা আর পরিশ্রমের পুরস্কারের! মাধ্যমিকে এবার ৯৪ শতাংশ নম্বর (৬৫৮) পেয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের প্রত্যন্ত কল্যানপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান স্বরূপ দাস। শত অভাব-অনটনের মাঝেও তাই কল্যাণপুর গ্রামের দাস পরিবারে এখন খুশির আলো! একই সঙ্গে ঘিরে ধরেছে হাজার দুঃশ্চিন্তাও।

thebengalpost.net
মা’র সঙ্গে স্বরূপ :

thebengalpost.net
এখানেই চলত কঠোর অধ্যাবসায় :

ইতিমধ্যে, বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে ডেবরা ব্লকের অর্জুনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র স্বরূপ। নিটে ভালো র‌্যাঙ্ক করে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুকে লালন করে চলেছে সে। অভাবী বাবা-মা’র সব কষ্ট দূর করতে কঠোর পরিশ্রম করতেও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ডেবরার এই মেধাবী সন্তান। তবে, শেষ পর্যন্ত কি হবে, পড়াশোনা আদৌ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দাস পরিবার। অর্জুনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্বরূপ-ই এবার মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। তবে, বরাবরই ক্লাসে প্রথম হতো সে। কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর অধ্যাবসায় দিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করেছে স্বরূপ। ঘর-বাড়ি বলতে এক চিলতে কুঁড়ে ঘরে অ্যাসবেস্টসের ছাউনি! আবাস যোজনায় আবেদন করলেও এখনও বাড়ি আসেনি। তেমনটাই জানিয়েছেন স্বরূপের বাবা বাবা মনোজ দাস। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কখনও অন্যের সার দোকানে বা অন্য কোনো কাজ করেন তিনি। সংসারের হাল ধরতে গো-পালন করে, দুধ বিক্রি করতেন মা অনিমা দাস। পড়ার ঘর ছিলোনা, তাই দিনের বেলায় গাছের তলায় পড়াশোনা করত স্বরূপ। রাতে এক চিলতে ঘরে একটি বাল্বের আলোর নিচে চলত পড়াশোনা! মনোজ বাবু বলেন, “আবাস যোজনার বাড়ির জন্য আবেদন করেছি। তবে, এখনও পাইনি। আমার বাড়ি করার সামর্থ্য নেই। ছেলে তাই কখনও বাড়ির বাইরে গাছ তলায়, কখনও মন্দিরে বসে পড়াশোনা করে। তবে, ছোটো থেকেই পড়াশোনায় খুব মনোযোগী। স্কুলে প্রথম হয় বরাবরই। মাধ্যমিকেও ওই সবথেকে বেশি নম্বর পেয়েছে স্কুলে।” কষ্ট জয় করে সাফল্য পেয়েছে স্বরূপ। একমাত্র ছেলের রেজাল্টে খুশি বাবা-মা। তবে, নিশ্চিন্ত আর হতে পারছেন কৈ! এখনও অনেক দূর যাওয়া বাকি। কিভাবে তা সম্ভব হবে, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় কল্যাণপুর গ্রামের দাস পরিবার! (স্বরূপের পরিবারের ফোন নম্বর- 9933718476।)

thebengalpost.net
ভাঙা ঘরে স্বরূপের বাবা :