দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ মে: শৈশবেই হারিয়েছে বাবাকে। এক কামরার মাটির বাড়িতে দাদু, ঠাকুমা মা ও দিদি-র সঙ্গে বড় হয়েছে নীলিমা। সামান্য জমিতে চাষাবাদ করেন দাদু। দুই মেয়েকে বড় করতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছিলেন মা। দিদি একটু বড় হওয়ার পরই শুরু করে টিউশন বা গৃহ শিক্ষকতা। এখন দিদি’র বিয়ে হয়ে গেছে। নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অষ্টম শ্রেণী থেকে টিউশন বা গৃহ শিক্ষকতা শুরু করতে হয় নীলিমা-কেও। সেই লড়াই আজও থামেনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড়ের নীলিমা দোলাই-এর। ‘হার না মানা’ লড়াইকে সঙ্গী করেই নারায়ণগড় রাজা ঋষিকেশ লাহা উচ্চ শিক্ষা নিকেতন থেকে এবার ৪৪৭ (৫০০’র মধ্যে) নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে এই ‘মেধাবিনী’। নীলিমা-ই বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপক।

thebengalpost.net
নীলিমার পরিবার:

কলা বিভাগ থেকে প্রায় ৯০ শতাংশ (৮৯.৪ শতাংশ) নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস (HS Result 2023) করা নীলিমা এবার ভূগোল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। ভূগোলের শিক্ষক হতে চায় সে। সেই ‘স্বপ্ন’-ই বুকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে নারায়ণগড় ব্লকের পুরাতন ভাড়া গ্রামের নিতান্ত এক ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ পরিবারের নীলিমা। নিজে টিউশন পড়িয়ে, তারপর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়েছে নীলিমা-কে। তবে, স্কুলের শিক্ষকদের অবদান স্বীকার করতে ভোলেনি নীলিমা। সে জানায়, “স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্য ছাড়া এই রেজাল্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।” সে এও বলে, “অষ্টম শ্রেণীর পর আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু, তখন থেকেই দুটো-একটা করে ছোট বাচ্চাদের পড়ানো শুরু করি। শুধুমাত্র নিজের জেদ নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে গেছি।” বাবার ইচ্ছে ছিল, দুই মেয়ের মধ্যে একজন অন্তত ‘শিক্ষক’ (বা, শিক্ষিকা) তৈরি হোক। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। তাই, নীলিমা-ই তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চায়। কিন্তু, ভূগোল নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা, তারপর বি.এড করার অনেক খরচ! সেই টাকা আসবে কোথা থেকে? আপাততো সেই দুশ্চিন্তাই তাড়া করে বেড়াচ্ছে নীলিমা ও তার পরিবারের সদস্যদের! (নীলিমার পরিবারের ফোন নম্বর- ৭৮৬৬০৬৮১২১।)

thebengalpost.net
নীলিমার লড়াই: