Education

Less Students: পড়ুয়া ৩০ এর কম, বন্ধের মুখে রাজ্যের ৮২০৭ স্কুল! তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬০১, ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়ার হাল আরও খারাপ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৮ ফেব্রুয়ারি: পশ্চিমবঙ্গের ৮২০৭-টি স্কুলে পড়ুয়া (ছাত্র-ছাত্রী)’র সংখ্যা ৩০ জনের থেকেও কম! সম্প্রতি রাজ্য সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের তরফে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেই তালিকাতেই দেখা গেছে, রাজ্যের ৮২০৭ স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ এর থেকেও কম। এগুলি বেশিরভাগই প্রাইমারি স্কুল। তবে, হাজারখানেক আপার প্রাইমারি বা জুনিয়র হাই স্কুলও আছে এই তালিকায়। আছে বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও। বেশ কয়েকটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ও এই তালিকায় আছে। তবে, বলাই বাহুল্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির অবস্থাই সবথেকে খারাপ। এজন্য, রাজ্য সরকারের বদলি ও নিয়োগ দুর্নীতি; বছরের পর বছর শিক্ষক নিয়োগ না করা, বেসরকারি স্কুলের বাড়বাড়ন্ত এবং সাম্প্রতিক কালের ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল সহ একাধিক কারণ দায়ী বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ফলে এই ধরনের স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে অভিভাবক মহল।

পড়ুয়ার সংখ্যা অত্যন্ত কম রাজ্যের প্রায় ৮ হাজার স্কুলে (প্রতীকী ছবি):

সম্প্রতি, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুও। তারপরই রাজ্য জুড়ে এই ধরনের স্কুলগুলিকে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা দপ্তর। অদূর ভবিষ্যতে এই আট হাজারের বেশি স্কুল তুলে দিয়ে, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি বড় স্কুলে পাঠানোর চিন্তা ভাবনাও শুরু হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলি থেকে বদলি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা শহরের স্কুলে চলে আসায়, এই সমস্ত স্কুলের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনও। সেই সঙ্গে প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে শিক্ষক নিয়োগ না করে, পরক্ষে বেসরকারি স্কুলগুলির বাড়বাড়ন্তে সাহায্য করা হয়েছে বলে মনে করছে নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি থেকে বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু সম্প্রতি একাধিক মামলায় এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সবাই যদি গ্রাম ছেড়ে শহরে বদলি হতে চান, তাহলে গ্রামের স্কুলগুলি চলবে কী করে! এই কারণে তিনি শিক্ষকদের বদলি নীতিতে পরিবর্তন করারও পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য সরকারকে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী, বর্তমানে জেলবন্দী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলে বদলির জন্য উৎসশ্রী পোর্টাল চালু হয়। সেই পোর্টালেও বদলির ক্ষেত্রে বহু দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে গ্রাম থেকে বহু শিক্ষক শহরে বদলি হচ্ছেন। আদালতের নির্দেশে আপাতত উৎসশ্রী পোর্টালে বদলি বন্ধ রয়েছে। এই আবহে ৮,২০৭টি স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে পড়ুয়াদের কী হবে, এইসব স্কুলের শিক্ষকদেরই বা কী হবে, তা নিয়ে শিক্ষা মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে! তবে, সূত্রের খবর এই ৮ হাজার স্কুলে কর্মরত প্রায় ২৫-২৬ হাজার শিক্ষককে পাশাপাশি অন্যান্য স্কুলগুলিতে বদলি করা হতে পারে ভবিষ্যতে। তবে, উন্নত পরিকাঠামো যুক্ত কিছু স্কুলকে হয়তো পাশাপাশি স্কুলের সাথে সংযুক্ত করে সেগুলিকে বাঁচানোর চেষ্টাও করা হতে পারে। এই বিষয়ে এখনো শিক্ষা দপ্তর স্পষ্ট কোনো নির্দেশকা বের না করলেও, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বা পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর হাইকোর্টের নির্দেশ নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে শিক্ষা দপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, ৮২০৭টি স্কুলের তালিকায় এমন কিছু প্রাথমিক বা উচ্চ প্রাথমিক স্কুল আছে যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা শূন্য বা ১০-১৫’র এর কম! অথচ শিক্ষক আছেন। সেই স্কুলগুলোকে অবিলম্বে তুলে দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তালিকায় দেখা যায় জঙ্গলমহল পুরুলিয়া জেলার ৬৯৪টি স্কুল এই তালিকায় আছে। কলকাতার ৫৩১টি স্কুল আছে এই তালিকায়। এছাড়াও, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৬০১টি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ এর কম! ছোটো জেলা হওয়া সত্ত্বেও, ঝাড়গ্রামের ৪৭৯টি স্কুল আছে এই তালিকায়। একই অবস্থা আলিপুরদুয়ারেও। এছাড়াও, বাঁকুড়া, বীরভূম, কোচবিহার জেলার হালও অত্যন্ত খারাপ! তুলনায় পূর্ব মেদিনীপুরের অবস্থা সামান্য ভাল, যেখানে ৩৬৯টি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৩০ এর কম। শিক্ষক নিয়োগ ও বদলিতে দুর্নীতি ছাড়াও অতিমারীর প্রভাব এবং বেসরকারি স্কুলের উন্নত পরিকাঠামোর জন্যই সরকারি প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়ুয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে বলে মনে করা হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। অন্যদিকে, শহরের উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে অতিরিক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার কারণে গ্রামের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা কমছে। এমনটাই পর্যবেক্ষণ স্বয়ং কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু’র। সেক্ষেত্রে সেই সমস্ত অতিরিক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পুনরায় গ্রামের স্কুলে পাঠানো হতে পারে বলেও একটি সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি, বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু-কে এমন মন্তব্য করতেও শোনা গেছে, “পড়ুয়া না থাকলে শিক্ষক নিয়োগ করে কি লাভ!” ফলে প্রায় পড়ুয়া-শূন্য স্কুলগুলি যে উঠে যাওয়া শুধুই সময়ের অপেক্ষা, তা বলাই বাহুল্য!

চিন্তিত বিচারপতিও:

News Desk

Recent Posts

Midnapore: বুধ থেকে ‘বিকল্প’ পথেই স্কুল সামলাবেন প্রধান শিক্ষকরা! সিদ্ধান্ত চাকরিহারানো শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ‘বেতন’ নিয়েও

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ এপ্রিল: "তাকিয়ে আছি সুপ্রিম কোর্টের ১৭ এপ্রিলের শুনানির…

5 hours ago

Midnapore: বিশ্বে তৃতীয়, ভারতে প্রথম! দু-দু’টি বিরল রোগাক্রান্ত সন্তোষকে নতুন জীবন দিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ এপ্রিল: একসঙ্গে দু-দুটি বিরল রোগ! দু-তিন বছর আগে…

2 days ago

Headmaster Recruitment: প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি পশ্চিম মেদিনীপুরে! শূন্যপদ প্রায় আড়াই হাজার

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ এপ্রিল: দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর প্রাথমিকে প্রধান…

3 days ago

Vidyasagar University: কদর বাড়ছে কর্পোরেট চাকরির, নামমাত্র খরচে সংক্ষিপ্ত কোর্সের সূচনা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ এপ্রিল: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ (MBA) পড়ানো হয় সেই…

4 days ago

Midnapore: ‘অযোগ্যদের বরখাস্ত করতে হবে!’ মেদিনীপুরে দাবি তুললেন যোগ্যরা, স্কুলমুখো হলেননা বেশিরভাগ শিক্ষক-শিক্ষিকাই

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ এপ্রিল: অপেক্ষায় ছিলেন সহকর্মীরা। আশায় বুক বেঁধেছিলেন প্রধান…

6 days ago

Midnapore: “আবার বিপ্লব হবে!” মেদিনীপুরের মাটি ছুঁয়ে শপথ চাকরিহারা শিক্ষকদের

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ এপ্রিল: "আমি যদি অযোগ্য হই...যান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে…

1 week ago