মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ জুলাই: সার্ধ শতবর্ষ বা ১৫০ বছর উদযাপনের মাহেন্দ্রক্ষণ (৩০ জানুয়ারি, ২০২২)- টিকে স্মরণীয় করে রাখতে ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)- এর পক্ষ একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। ঘোষণা করা হয়েছিলো বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়ন মূলক পরিকল্পনার বিষয়েও। তার মধ্যেই অন্যতম হল, জঙ্গল অধ্যুষিত শালবনী ব্লকের ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয় এবং লোধা শবর অধ্যুষিত গোয়ালডিহি গ্রাম দত্তক নেওয়ার বিষয়টি। পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমলের পরামর্শেই এই বিদ্যালয় ও গ্রামটিকে বেছে নিয়েছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই), মেদিনীপুর কলেজের একটি প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে, যথাক্রমে- ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয় এবং গোয়ালডিহি গ্রাম পরিদর্শন করা হল। বিদ্যালয় ও গ্রামের সার্বিক শিক্ষার বিকাশে কিভাবে মেদিনীপুর কলেজ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে, এনিয়েই প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং জয়েন্ট বিডিও সহ ব্লকের আধিকারিকদের সঙ্গে। এমনটাই জানা গেছে কলেজ সূত্রে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর শহর থেকে ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। অপরদিকে, গোয়ালডিহি গ্রামটিও ১২-১৩ কিলোমিটারের মধ্যেই। তাই, এই দুটি এলাকাতে গিয়ে সেখানকার শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোর কাজ করা মেদিনীপুর কলেজের পক্ষ থেকে অনেকটাই সহজ হবে বলে কলেজ কর্তৃপক্ষের মত। এদিন, সেই প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হল বলে মনে করছেন তাঁরা। কলেজের ছয় অধ্যাপক বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল আজ প্রথমে ভাদুতলা বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। রাজ্য সড়কের একেবারে পাশে অবস্থান করলেও, বিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। তবে, জঙ্গল ও জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই পিছিয়ে পড়া সমাজ থেকে উঠ এসেছে। প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই ভাদুতলা উচ্চ বিদ্যালয় অবশ্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই এগিয়ে চলেছে। শিশু মিত্র পুরস্কার, স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী পুরস্কারে সমৃদ্ধ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার বিকাশের দিকটিতে এবার থেকে আলোকপাত করবে রাজ্য ও দেশের অন্যতম সেরা মেদিনীপুর কলেজ। স্বভাবতই তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ উচ্ছ্বসিত। বৃহস্পতিবারের দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়েই আলোচনা হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. অমিতেশ চৌধুরী। প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে ড. রাজেন্দ্র নাথ দত্ত জানিয়েছেন, “বিদ্যালয়ের শিক্ষামূলক বিকাশ বা অ্যাকাডেমিক ডেভেলপমেন্ট কিভাবে করা যায়, তা নিয়েই এদিন প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। ধাপে ধাপে আমরা এগিয়ে যাব।”
অন্যদিকে, শালবনী ব্লকের লোধা শবর অধ্যুষিত গোয়ালডিহি গ্রামের সঙ্গে আবার এই সম্প্রদায়ের প্রথম মহিলা স্নাতক চুনী কোটালের স্মৃতি জড়িয়ে। এই গ্রামেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা শবরকন্যা চুনী কোটালের। জেলা ও ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে ইতিমধ্যে গ্রামটিকে মডেল গ্রামে উন্নীত করা হচ্ছে। এবার, লোধা শবর ছেলেমেয়েদের শিক্ষার দায়িত্বও গ্রহণ করবে মেদিনীপুর কলেজ। সেই উদ্দেশ্যেই এদিন শালবনী ব্লকের জয়েন্ট বিডিও দেবব্রত কোনারের উপস্থিতিতে কলেজের এই প্রতিনিধিদল একটি বৈঠক করে গ্রামের লোধা কমিউনিটি হলে। সেখানেই আলোচনা হয়, এই গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত মানোন্নয়ন ঘটানোর বিষয়টি নিয়ে। তাছাড়াও, গ্রামের সার্বিক শিক্ষার বিকাশ নিয়েও একাধিক পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিনিধি দলে ড. রাজেন্দ্র নাথ দত্ত ছাড়াও ছিলেন, ড. মণিমোহন মন্ডল, ড. সত্যরঞ্জন ঘোষ, ড. দুলাল কুমার দে, ড. প্রসূন কুমার কুইল্যা এবং ড. মুনমুন মাইতি। কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোপাল চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, “ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজের সার্ধ শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আমরা সামাজিক ক্ষেত্রেও কিছু অবদান রাখতে চেয়েছি। তাই, ওই গ্রাম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটাতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এদিন, আমাদের প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করেছেন। কিভাবে এগোনো হবে তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।” এদিকে, কলেজের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে গ্রামের সমাজকর্মী তথা চুনী কোটালের ভাইপো মৃণাল কোটাল জানিয়েছেন, “শিক্ষার বিকাশ-ই স্বপ্ন ছিল পিসির। এভাবেই এগিয়ে যাক চুনী কোটালের গ্রাম গোয়ালডিহি।”