মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ জানুয়ারি: মনখারাপ মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত) এর। আগামী ৩০ জানুয়ারি থেকে ১৫০ বছর উদযাপনের যে অনুষ্ঠান সূচিত হওয়ার কথা ছিল, তা আপাততো স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে। বুধবার একরাশ মনোবেদনা নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ গোপাল চন্দ্র বেরা সাংবাদিকদের জানালেন, “মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস)-এর সাত দিনব্যাপী দেড়শ বছর পূর্তি উৎসব শুরু হওয়ার কথা ছিল আগামী ৩০ জানুয়ারি (২০২২) থেকে। কিন্তু, অতিমারির কারণে, আগামী ৩১ জানুয়ারি অবধি সরকারি বিধিনিষেধ-কে মাথায় রেখে, তা এই মুহূর্তে করা সম্ভব হচ্ছে না! ৩০ জানুয়ারি কলেজের পতাকা উত্তোলন সহ সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, আগামী মার্চ মাসে পূর্ব পরিকল্পিত পূর্ণাঙ্গ অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” এর সাথেই তিনি যোগ করেন, “নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গৌরবময় দেড়শ বছর উদযাপনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছিলেন কলেজের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি মানুষ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের সেমিনার, বিজ্ঞান ও শিল্পকলা প্রদর্শনী, নাট্য উৎসব ইত্যাদির মাধ্যমে সাত দিনের এই অনুষ্ঠান সূচি তৈরি হয়েছিল। কলেজের দেড়শ বছরের ইতিহাস, প্রাক্তনীদের স্মৃতিকথা, কলেজ থেকে গত ১৫০ বছরে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গবেষণামূলক রচনা সম্ভার ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছিল প্রকাশিতব্য চারটি বই। সেই কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সহ বিশিষ্ট অতিথি ও বিশিষ্ট প্রাক্তনীদের আমন্ত্রণ জানানোর কাজটিও দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল। সর্বোপরি, স্মারক ডাকটিকিট, মেদিনীপুর কলেজের নামে একটি নতুন গোলাপ চারা (জকপুরের বিখ্যাত অশোক মাইতির ‘পুষ্পাঞ্জলি’ নার্সারি থেকে), সুউচ্চ ক্লক টাওয়ার বা ঘড়ি স্তম্ভ, অভিনব স্মারক ভাস্কর্য ইত্যাদি কাজগুলিও প্রায় সম্পূর্ণ হওয়ার পথে। বিপ্লবীদের আঁতুড়ঘর মেদিনীপুর কলেজের পাঁচ শহীদ ছাত্রের (শহীদ দীনেশ গুপ্ত, শহীদ প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য, শহীদ ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, শহীদ নির্মল জীবন ঘোষ, শহীদ মৃগেন্দ্র নাথ দত্ত) স্মরণে দেওয়াল ভাস্কর্য নির্মাণ এবং প্রাক্তনীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা পাঁচ তলা ‘প্রাক্তনী ভবন’ এর কাজও প্রায় শেষ হতে চলেছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বার্থে মেদিনীপুর কলেজ একটি গ্রাম (শালবনী ব্লকের গোয়ালডিহি) ও একটি স্কুলকে দত্তক নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, সেই কাজও জেলাশাসকের অনুমতিক্রমে এগিয়ে গিয়েছিল। এই সব কিছুই মেদিনীপুর কলেজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তবে, আগামী মার্চ মাসে যে এই সবকিছুই সাড়ম্বরে পালন করা হবে তা প্রত্যয়ের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন অধ্যক্ষ ডাঃ বেরা।

thebengalpost.net
প্রাক্তনীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘প্রাক্তনী ভবন’ প্রায় সম্পূর্ণ :

“দশ কুড়ি পঞ্চাশ একশ বছর/ তারপর পায়ে পায়ে আরও পঞ্চাশ/ মেদিনীপুর কলেজ দেড়শ বছর/ এ কলেজ নিজেই এক ইতিহাস/ তাই প্রাণের প্রদীপ জ্বেলে এসো/ মনের জানলা খুলে এসো…”। গৌরবময় ১৫০’তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে গত অক্টোবর (২০২১) মাসে প্রকাশিত হয়েছিল মেদিনীপুর কলেজের এই ‘থিম সং’ (Theme Song)। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যমণ্ডিত এই কলেজের একশো পঞ্চাশ বছর উদযাপন উপলক্ষে, ২০২২ এর ৩০ জানুয়ারি থেকে সাত দিনব্যাপী উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সার্ধ-শতবর্ষের সেই অনুষ্ঠান আগামী এক বছর ধরে (২০২৩ এর ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত) চলার কথা ছিল। ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠান উদ্বোধনের কথা ছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে, অতিমারীর তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় আপাতত সবকিছুই স্থগিত করে দিতে বাধ্য হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রবল মনোকষ্টের মধ্যেও, অধ্যক্ষ সহ অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং সকল শিক্ষাকর্মী ও প্রাক্তনীবৃন্দ আশাবাদী যে, দ্বিগুণ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তাঁরা আগামী মার্চ মাসে (অবশ্যই, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে) এই অনুষ্ঠান পালন করতে পারবেন। প্রত্যয়ের সঙ্গে বুধবার তা ঘোষণা করে কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ গোপাল চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, “বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু সহ আমাদের সকল অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মীবৃন্দ এবং প্রাক্তনীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী মার্চ মাসে আমরা অনুষ্ঠান করতে পারব। আশা করছি সেই সময় আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কেই উদ্বোধক হিসেবে পাব। এছাড়াও, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলার সকলের প্রিয় ‘মহারাজ’ সৌরভ গাঙ্গুলি’কেও আমরা আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আশা করছি তাঁরা উপস্থিত থাকবেন।” তিনি এও জানিয়েছেন, ৩০ জানুয়ারি’র সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল উপস্থিত থাকবেন। ওই অনুষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনলাইনে পরিবেশিত হবে।

thebengalpost.net
অনুষ্ঠান স্থগিত করার ঘোষণা করলেন অধ্যক্ষ ড. গোপাল চন্দ্র বেরা :