মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ মার্চ: দ্রৌপদী মুর্মু। আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি। একসময় সাফল্যের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথমবার বঙ্গ সফরে এসেছিলেন তিনি। তাঁর সফরের (২৭ ও ২৮ মার্চ) মধ্যেই অসাধারণ কীর্তি স্থাপন করে সংবর্ধিত হল জঙ্গলমহলের আরেক ‘দ্রৌপদী’! দরিদ্র, খেটেখাওয়া আদিবাসী পরিবারের বছর ১৫’র কিশোরী বাসন্তী টুডু‌ নিজের অদম্য জেদ আর অসামান্য মানসিক দৃঢ়তায় রুখে দিল নিজের ‘বাল্যবিবাহ’। বলে উঠলো, “আমি আরো পড়তে চাই। শিক্ষিকা হতে চাই আমি।” আর, এভাবেই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু’র পথ অনুসরণ করে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ), বাসন্তী পুজোর দিন স্কুলের তরফে সংবর্ধিত হলো জঙ্গলমহল শালবনীর বাসন্তী। আর, আজ বুধবার (২৯ মার্চ) জেলা প্রশাসনের তরফেও তাকে দেওয়া হল সংবর্ধনা। সাত সকালেই বিদ্যালয়ে পৌঁছে গিয়ে তাকে অভিনন্দিত করলেন স্বয়ং অতিরিক্ত জেলাশাসক (কারা, সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন) কেম্পা হোন্নাইয়া।

thebengalpost.net
অতিরিক্ত জেলাশাসকের পক্ষ থেকে দেওয়া হল সংবর্ধনা:

প্রসঙ্গত, বাসন্তী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গল অধ্যুষিত শালবনী ব্লকের মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। বিদ্যালয়ের কন্যাশ্রী ক্লাবেরও সক্রিয় সদস্য সে। বাড়ি প্রত্যন্ত দেউলকুন্ডা (শালবনী ব্লকের) গ্রামে। নিতান্তই দিনমজুর পরিবারের সন্তান বাসন্তী। বাসন্তী’র দুই দিদি আছে। একজনের বিয়ে হয়েছে। মাঝখানে আরকে দিদি থাকা সত্ত্বেও বাসন্তীর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল তার বাবা-মা। পাত্রপক্ষের নাকি পছন্দ হয়ে গিয়েছিল দশম শ্রেণীর ছাত্রী বাসন্তীকে। কিন্তু, এই ‘অন্যায়’ মেনে নেয়নি বাসন্তী। প্রতিবাদ করেছে। নিজের বাল্যবিবাহ রুখে দিয়েছে সে। বাবা-মা’কে বলেছে, “আমি আরো পড়তে চাই। এখন বিয়ে করবোনা। আমি পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হয়ে উঠতে চাই। আর, ১৮ বছরের আগে, আমকে এরপর যদি বিয়ের কথা বলো, আমি কিন্তু বিডিও-কে জানাবো।” তার অনমনীয় মনোভাব আর অদম্য জেদের কাছে মাথা নত করেছেন বাবা-মা। গত সপ্তাহেই তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেই বিয়ে আপাততো বাতিল হয়েছে! আর, এভাবেই বিদ্যালয়ের কন্যাশ্রী ক্লাব ‘অনন্যা’র সাক্ষাৎ অনন্যা হয়ে উঠেছে বাসন্তী। মঙ্গলবার তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের তরফে। এই খবর শোনার পরই বুধবার স্বয়ং অতিরিক্ত জেলাশাসক কেম্পা হোন্নাইয়া বিদ্যালয়ে পৌঁছে গিয়ে ‘কন্যাশ্রী’ বাসন্তী সহ ‘অনন্যা’ (মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের কন্যাশ্রী ক্লাব)-র অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের উৎসাহিত আর অনুপ্রাণিত করেছেন। দিয়েছেন সবরকম ভাবে পাশে থাকার আশ্বাস। বাসন্তী’র জন্য বিশেষ ঘোষণাও করছেন তিনি। আগামী তিন বছর (উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত) তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ (প্রতি মাসে চার হাজার টাকা) বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। বিদ্যালয়ের ‘গর্বিত’ প্রধান শিক্ষক ড. প্রসূন কুমার পড়িয়া বলেন, “বাসন্তীর মতো কন্যাশ্রীরাই তো আমাদের গর্ব। কে বলতে পারে, এদের মধ্য থেকেই ভবিষ্যতে আরো অনেক দ্রৌপদী মুর্মু-কে আমারা খুঁজে পাবোনা! সেই বিশ্বাস আমারা রাখি।”