দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ঝাড়গ্রাম, ২৬ সেপ্টেম্বর: মহামনীষী, মহাপুরুষ, শিক্ষা ও সমাজসংস্কারক তথা বাংলায় নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ ‘বীরসিংহের সিংহ শিশু’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০২ তম জন্মজয়ন্তী-র প্রাক্কালেই অবিভক্ত মেদিনীপুর-কে গর্বিত করল ঝাড়গ্রাম-পুত্র শুভঙ্কর বালা। শুক্রবার UPSC (Union Public Service Commission) ‘র ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, শুভঙ্কর ৭৯ র‍্যাঙ্ক করেছেন। রাজ্যের মধ্যে তিনিই প্রথম স্থানে আছেন।‌ দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ চাকরির পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম ১০০’র শুভঙ্কর, শুধু ঝাড়গ্রাম বা জঙ্গলমহল বাসীকেই নয়, গর্বিত করল অবিভক্ত মেদিনীপুর তথা সকল বঙ্গবাসীকেই। ২৬ বছরের শুভঙ্করের বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরে। শুভঙ্কর ছোট থেকেই বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন। ঝাড়গ্রাম কুমুদ কুমারী ইনস্টিটিউশন (KKI) থেকে ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বেঙ্গালুরু চলে যান শুভঙ্কর। ২০১৭ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেই বেঙ্গালুরুতে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি জীবন শুরু করেন। ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি করার সময়েই বেঙ্গালুরুতে ২০১৯ এ প্রথম UPSC পরীক্ষা দেন তিনি। প্রথম পরীক্ষা দিয়েই প্রিলিতে পাশ করেন। কিন্তু, মেইনে আটকে যান তিনি। পরবর্তীতে UPSC-তে আরও জোর দেওয়ার জন্য ২০১৯ এই চাকরি ছেড়ে দিল্লি পাড়ি দেন শুভঙ্কর। দিল্লিতে ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু হয় UPSC-এর প্রস্তুতি। ১১ ঘন্টা করে পড়াশোনা করেছেন। অবশেষে, ২০২০ সালের প্রিলি পরীক্ষায় আবারো পাশ করেন। তারপরেই মেইন পরীক্ষায় পাশ করে ৭৯ ব়্যাঙ্ক করেন শুভঙ্কর।

thebengalpost.net
শুভঙ্কর বালা :

উল্লেখ্য যে, শুভঙ্করের আদি বাড়ি গোপীবল্লভপুরের শাশড়ায়। শুভঙ্করের বাবা রাজনারায়ণ বালা পেশায় সরকারি হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক ছিলেন। এখন তিনি অবসর নিয়েছেন। শুভঙ্করের দুই দিদি রয়েছেন। শুভঙ্কররা যখন ছোট ছিলেন তাঁদের পড়াশোনার স্বার্থে তাঁর বাবা গ্রামের জমি বাড়ি বিক্রি করে ঝাড়গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। বাবা সরকারি চিকিৎসক হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং থাকত। তাই মা ছবি বালা দেবী তাঁদের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসার সামলাতেন। এদিন দিল্লি থেকেই ফোনে শুভঙ্কর বালা সংবাদমাধ্যমকে তাঁর লড়াইয়ের কথা জানান। তিনি বলেন, “আমার IAS হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে, যদি IAS না পাই তাহলে আমি IPS হব পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।” কঠিন এই লড়াইয়ে কোচিং না নিয়েই সফল হয়েছেন শুভঙ্কর! জানিয়েছেন, “দু’বছর আমি আমার ফেসবুক , ইনস্টাগ্রাম , হোয়াটসঅ্যাপ সব বন্ধ রেখে ছিলাম। বন্ধ না রাখলে ওই দিকেই সব সময় লক্ষ্য থাকত।” শুভঙ্করের বাবা রাজনারায়ণ বালা জানিয়েছেন, “ছেলে-কে ছোটো থেকেই বলেছি স্বপ্নপূরণের লড়াইটা চালিয়ে যেতে। এবার, ও স্বপ্নপূরণের দোরগোড়ায়!” এ যেন এক পরম প্রাপ্তি বিদ্যাসাগরের অবিভক্ত মেদিনীপুরের!