মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ মে: এক এবং একমাত্র লক্ষ্য ছিল IAS (Indian Administrative Service) হওয়া। সেই লক্ষ্যে অনড় থেকেই গতবার ৩১৮ র‍্যাঙ্ক (Rank) হওয়ার পরও হাল ছাড়েননি জেলা শহর মেদিনীপুরের যুবক ইন্দ্রাশিস দত্ত। এবার (UPSC- 2021), তার র‍্যাঙ্ক হয়েছে ৯৪ (94)! দেশের সবথেকে কঠিন এবং মর্যাদাপূর্ণ এই পরীক্ষায় প্রথম একশো-তে জায়গা পেয়ে বাংলা তথা মেদিনীপুরের মুখ উজ্জ্বল করলেন ইন্দ্রাশিস। সোমবার (৩০ মে) সন্ধ্যা নাগাদ নিজের এই ফলাফল জানতে পারেন ইন্দ্রাশিস। তারপর থেকেই শুভেচ্ছার ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে মেদিনীপুর শহরের বার্জটাউনের (A-61) বাড়িতে। এদিকে, যে সিভিল সার্ভিস (তখন নাম ছিল, ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস/ISC) পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু’র মতো নাম, ভারতের প্রশাসনিক সর্বোচ্চ পদে পৌঁছনোর সেই পরীক্ষাতে এবার উজ্জ্বল মেদিনীপুরের ইন্দ্রাশিস। স্বভাবতই খুশির বন্যা অবিভক্ত মেদিনীপুর জুড়ে। মেদিনীপুরবাসী মনে করতে পারছেন না, এর আগে অবিভক্ত মেদিনীপুর থেকে কেউ UPSC-তে প্রথম একশোয় জায়গা পেয়েছিলেন কিনা!

thebengalpost.net
বাবার সঙ্গে ইন্দ্রাশিস দত্ত:

উল্লেখ্য যে, সোমবার প্রকাশিত UPSC (Union Public Service Commission) পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে মেয়েদেরই জয়জয়কার! প্রথম চারটি স্থানেই মেয়েরা। দ্বিতীয় স্থানে আছেন বাংলার মেয়ে অঙ্কিতা আগারওয়াল (Ankita Agarwal)। দমদমের শুভম শুক্ল (Shubham Shukla) ৪৩ তম স্থানে, শিলিগুড়ির অভিজিৎ রায় (Abhijit Ray) ৫০ তম স্থানে এবং মেদিনীপুরে ইন্দ্রাশিস দত্ত (Indrashis Datta) ৯৪ তম স্থানে। আছেন। উল্লেখ্য যে, কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে জায়গা পাওয়ার এই লড়াইয়ে এবার সফল হয়েছেন মাত্র ৬৮৫ জন। এর মধ্যে, প্রথম একশো-তে আছেন বাংলার চার কৃতী। ৬১২ র‍্যাঙ্ক করেছেন কলকাতার আরও এক ‘মেধাবিনী’ দিয়া গোলদার (Diya Goldar)। এদিকে, তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা অঙ্কিতা আগারওয়াল কলকাতার লেকটাউনের মেয়ে। স্কুলজীবন কলকাতাতেই। তার পর কলেজের পাঠ নিতে দিল্লি যাত্রা। সেখানেই কর্পোরেটে চাকরি, ইউপিএসইসি পরীক্ষা দিয়ে রাজস্ব সার্ভিসে যোগ, তার পর ফের পরীক্ষা দিয়ে অবশেষে স্বপ্নপূরণ- আইএএস (IAS)। দমদমের গোরাবাজার এলাকার বাসিন্দা শুভম শুক্ল’ও চতুর্থবারের চেষ্টায় নিজের স্বপ্ন সফল করতে পেরেছেন। লক্ষ্য আইএএস (IAS) হিসেবে দেশের সেবা করা।

thebengalpost.net
অঙ্কিতা আগারওয়াল:

অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরের বার্জটাউনের বাসিন্দা বছর ২৬ এর ইন্দ্রাশিস নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে মাধ্যমিক পাস করেছেন। এরপর, মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক। তারপর, ২০১১-তে মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসে ৩৫ র‍্যাঙ্ক করেন‌ ইন্দ্রাশিস। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (CMC) ভর্তিও হন তিনি। তবে, তাঁর দাদা একজন চিকিৎসক (এমবিবিএস‌- এম.ডি)। বাবা গুরুপদ দত্ত এলআইসি-তে কর্মরত ছিলেন। মা কৃষ্ণা দত্ত মেদিনীপুর শহরের মিশন গার্লস উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। তাঁরা সকলেই চেয়েছিলেন, গতানুগতিক ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার নয়, ইন্দ্রাশিস আরো উঁচু বা সম্মানের জায়গাতে পৌঁছে যাক। তাই, মাঝপথেই মেডিক্যাল ছেড়ে বেঙ্গালুরু IISC- তে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন ইন্দ্রাশিস। পরবর্তী কালে, বেঙ্গালুরু থেকে ইজরায়েলে (Israel) পাড়ি জমান মেদিনীপুরের (Midanpore) ইন্দ্রাশিস। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ বা বৃত্তি পেয়ে প্রায় সারা দেশ পরিভ্রমণ করেছেন ইন্দ্রাশিস। তারপরই তিনি মনস্থ করেন, প্রশাসনিক সর্বোচ্চ পদে (IAS) পৌঁছতে UPSC’র প্রস্তুতি নেবেন। তাই, ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে এসেই ইন্দ্রাশিস ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেন। প্রথমবারই ৩১৮ র‍্যাঙ্ক! কিন্তু, আইএএস (IAS) হওয়ার লক্ষ্যে অনড় ছিলেন ইন্দ্রাশিস। আরও কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন তিনি। অবশেষে, প্রথম একশোয় জায়গা! তাঁর মতে, “লড়াই খুব কঠিন। তবে, লক্ষ্যে অনড় থাকলে, সাফল্য আসবেই।” ‘মেদিনীপুরের গর্ব’ ইন্দ্রাশিস এও যোগ করেন, “এমনও হতে পারে, এই র‍্যাঙ্কে IAS- এর পরিবর্তে রেভেনিউ অফিসার বা IPS হওয়ার সুযোগ আসতে পারে! সেক্ষেত্রে আমি আবারও পরীক্ষায় বসব। আশা করছি, আরও ভাল র‍্যাঙ্ক হবে। কারণ, লক্ষ্য আমার IAS হওয়াই।”

thebengalpost.net
শুভম শুক্ল :

thebengalpost.net
মায়ের সাথে ইন্দ্রাশিস দত্ত: