দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ সেপ্টেম্বর: “ও আমার দেশের মাটি….”। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন বুকে থাকলেও, পা যেন থাকে মাটিতে! দেশের মহাকাশযান চাঁদে পৌঁছে গেলেও, মাটির পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ গায়ে মাখতে হবে সবার আগে। জানতে হবে ‘কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’-র বোঝাই করা কলসি-হাঁড়ি কিভাবে তৈরি হয়। শিক্ষক দিবসের ঠিক আগে পশ্চিম মেদিনীপুরের স্কুল-ই তাই হয়ে উঠল আস্ত এক ‘কুমোর পাড়া’। গোরুর গাড়ি, চাকা, মাটির হাঁড়ি, কলসি সবাই দেখেছে। কিন্তু, এই জিনিসগুলো কোথায় কিভাবে তৈরি হয়; তা অধিকাংশ পড়ুয়ারাই জানে না। তারা জানেই না, চাকা ঘুরিয়ে, কাদামাটি দিয়ে কুমোর কাকু ‘জাদু’ দেখান কিভাবে!
ছাত্র-ছাত্রীদের এই বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্যই সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ভাগবৎচরণ হাই স্কুল কর্তৃপক্ষ আয়োজন করেছিলেন, ‘স্কুলের মাঠে কুমোর পাড়া’র। কুম্ভকার’রা এসে ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে মাটির নানা জিনিস তৈরি করে দেখালেন। প্রবল কৌতুহল নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা দেখল, কিভাবে কাদামাটি দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে মাটির বিভিন্ন জিনিস তৈরি হয়। কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকাও বললেন, চোখের সামনে এই প্রথম মাটির আসবাবপত্র তৈরি দেখলেন তারাঁ! দাঁতন ভাগবতচরণ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দাস বলেন, “শিক্ষক দিবসে ছাত্র-ছাত্রীদের একটু অন্য রকম শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এমন ভাবনা।” তাঁর সংযোজন, “কয়েকদিন আগে আমরা স্কুলে গোরুর গাড়ি, চাঁদ, চন্দ্রযান ইত্যাদি নিয়ে একটা মডেল তৈরি করেছিলাম। সেখানে আলোচনার সময় ‘কুমোর পাড়ার গোরুর গাড়ি, বোঝাই করা কলসী-হাঁড়ি…’ প্রসঙ্গটি উঠে আসে। উঠে আসা চাকার প্রসঙ্গ। চাকা কী কী কাজে লাগে? তখন কয়েকজন ছাত্রছাত্রী বলে, স্যার, ‘আমরা গোরুর গাড়ি, চাকা, কলসী, হাঁড়ি দেখেছি। কিন্তু মাটির কলসী, হাঁড়ি কিভাবে তৈরি হয় তা দেখিনি।’ তারপরই আমরা এমন উদ্যোগ নিই। কুম্ভকারদের সঙ্গে কথা বলে, আয়োজন করি ‘স্কুল মাঠে কুমোরপাড়া’-র। কুম্ভকারের চাকা, মাটি স্কুলের মাঠে তুলে নিয়ে আসি। আমাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে শিক্ষক দিবসের আগেরদিন সূর্যকান্ত বেরা এবং তাঁর পুত্র তাপস বেরা এসে ছাত্রছাত্রীদের সামনে মাটির নানা পাত্র তৈরি করে দেখালেন। ছাত্রছাত্রীরা দাঁড়িয়ে প্রবল কৌতুহল নিয়ে দেখল। দেখে তারা ভীষণ খুশি। এমনকি কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকাও এটা প্রথম দেখলেন।”