দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: তারিখ ও মেমো নম্বর বিহীন পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (Public Private Partnership/PPP) এর একটি খসড়া বা ড্রাফ্ট (Draft) ঘিরে এ রাজ্য (West Bengal) এখন উত্তাল! রাজপথেও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন প্রতিবাদে সরব হয়েছে। কিন্তু, কি এই পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ? এককথায়, শিক্ষায় প্রাইভেটাইজেশন বা বেসরকারিকরণের প্রাথমিক ধাপ। সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথভাবে কোনো বেসরকারি সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে। শুধু পরিচালনাই নয়, শিক্ষক নিয়োগ থেকে পড়ুয়াদের বেতন নির্ধারণ, সবটাই ওই সংস্থার হাতে থাকতে পারে। বিতর্কিত ওই ড্রাফ্ট বা খসড়ায় বলা আছে, সরকারি পরিকাঠামো অর্থাৎ স্কুলবাড়ি, স্কুলের জমি প্রভৃতি ব্যবহার করে বেসরকারি কোনো সংস্থা শিক্ষাক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো পরিচালনা করতে পারে। আর, এসবকিছুই করা হবে, শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থে। আর, এই খসড়া ঘিরেই এখন রাজ্যজুড়ে বিতর্কের ঢেউ আছড়ে পড়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্নভাবে তা প্রতিহত করার চেষ্টা হচ্ছে!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শিক্ষার অধিকার আইন- ২০০৯ অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত (১৪ বছর অবধি) শিক্ষা, শিশুদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে এবং এই শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই, শিক্ষায় বেসরকারি সংস্থাকে আহ্বান জানানো মানে, শিক্ষা আর অবৈতনিক থাকবেনা! সর্বোপরি, খসড়া প্রস্তাবে ‘ফিস’ বা ‘বেতন’ এর বিষয়টিও বেসরকারি সংস্থার হাতে ছাড়া হয়েছে। আর, এর ফলেই দারিদ্র্য অধ্যুষিত আর প্রান্তিক এলাকার পড়ুয়াদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে বলে শিক্ষা মহলের অভিমত। অন্যদিকে, আরেক পক্ষ এও দাবি করেছে, বেসরকারি সংস্থার হাতে শিক্ষাব্যবস্থা ছেড়ে দিলেই, শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটবে এমনটা নয়! তবে কি, লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মতো সামাজিক প্রকল্পগুলির চাপে সরকার সত্যি দেউলিয়া হতে বসেছে? শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে? নাকি, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এরাজ্যেও বেসরকারিকরণের সূচনা করার চিন্তা করা হচ্ছে? এই প্রশ্ন তুলছেন রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সংগঠনগুলি। চাপের মুখে স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “এরকম কোনো খসড়ার কথা আমার জানা নেই! যদি, এরকম কোনো বিষয় হতো, মুখ্যমন্ত্রী জানাতেন। তাই, এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।”
তবে, শিক্ষামন্ত্রী যাই বলুন, স্কুল শিক্ষা দপ্তর (School Education Department) এর নামে যে খসড়া প্রস্তাবটি (তারিখ ও মেমো নম্বর বিহীন) ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাকে অস্বীকার করছেনা সরকারেরই বিভিন্ন মহল। আপাতত তা খসড়া হিসেবে আছে, মন্ত্রীসভায় আলোচনার পর তা বিল হিসেবে আসতে পারে। হয়তো বিরোধিতার চাপে কয়েক মাস বা বছর পিছিয়ে যেতে পারে, তবে আসতে পারে যেকোনো সময়, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। আর তা আঁচ করতে পেরেই রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ ববি হাকিম থেকে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ মন্তব্য করেছেন, “যদি পিপিই হয়, শিক্ষার মানোন্নয়নের স্বার্থে, তাতে ক্ষতি কি!” ফিরহাদের মন্তব্য, “এরাজ্যের ছেলেমেয়েরা বেঙ্গালুরু পড়তে গেলেও বিতর্ক হয়, আবার এরাজ্যে যদি বেঙ্গালুরু থেকে ছেলে-মেয়েদের পড়তে আসার মতো পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা করা হয়, তাতেও বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। সবকিছুতেই বিতর্ক। অথচ, শিক্ষায় বেসরকারিকরণ বামেরাই শুরু করেছিল, কেন্দ্রীয় সরকারও তা করছে।” এদিকে, অনেকেই মনে করাচ্ছেন, সম্প্রতি বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধায়কদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে জানিয়েছিলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার আর স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের টাকা জোটাতেই আমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। আগামী দু’বছর কিছু চাইবেনা কেউ।” সবমিলিয়ে, শিক্ষক থেকে অভিভাবক সকলেই এই ‘পিপিপি মডেল’ এর খসড়া প্রস্তাব-কে ঘিরে আশঙ্কার মধ্যে আছেন!