মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ আগস্ট: তিনি আধিকারিক, তিনি শিক্ষক-ও। মহকুমাশাসক (SDO) হওয়ার আগেও ছিলেন, মহকুমাশাসক হওয়ার পরেও শিক্ষকতার নেশা (বলা ভালো, শিক্ষকতার প্রতি ভালোবাসা) ছাড়তে পারেন নি! লক্ষ্য, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দুঃস্থ ও মেধাবীদের WBCS (West Bengal Civil Service) অফিসার তথা প্রশাসনিক আধিকারিক হিসেবে গড়ে তোলা। সেই আন্তরিক তাগিদ থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরের মহকুমাশাসক (Sub Divisional Officer) আজমল হোসেন তাঁর বর্তমান কর্মক্ষেত্র খড়্গপুরে গড়ে তুললেন অবৈতনিক সিভিল সার্ভিস কোচিং সেন্টার। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন খড়্গপুর কলেজের অধ্যক্ষ ড. বিদ্যুৎ সামন্ত। মহকুমাশাসক আজমল হোসেন জানালেন, “যখন শুনি প্রত্যন্ত এই সমস্ত এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় সিভিল সার্ভিসের (WBCS) এর কোচিং নিতে যেতে হয় এলাকার দুঃস্থ-মেধাবী পড়ুয়াদের, তখন সত্যিই খারাপ লাগে! তার সাথে গত প্রায় দেড় বছর ধরে প্রথাগত পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত আমাদের ছেলেমেয়েরা। তাই ঠিক করলাম, এই মুহূর্তেই উদ্যোগ নিতে হবে। আপাতত কোভিড পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়ার আগে ৫০ জন করে ২ টি ব্যাচ করে শুরু করছি। আন্তরিক ও সক্রিয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন খড়্গপুর কলেজের অধ্যক্ষ ড. বিদ্যুৎ সামন্ত এবং কলেজের একাধিক শিক্ষক। উৎসাহী আমাদের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক।” তিনি এও জানালেন, “আপাতত ঠিক করেছি, প্রতি শনিবার ও রবিবার ক্লাস হবে দুটি করে অর্ধে।” উল্লেখ্য যে, খড়্গপুর কলেজে শনিবার (২১ আগস্ট) এই ক্লাসের শুভ সূচনা-ও হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, খড়্গপুরের মহকুমাশাসক আজমল হোসেন (WBCS- EXECUTIVE) সিভিল সার্ভিসের একজন দক্ষ প্রশিক্ষক হিসেবে পরিচিত। রাজ্যের একাধিক বিডিও ও ডিএসপি তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েই সাফল্য অর্জন করেছেন বলে জানা গেছে। মালদার গাজোলে কর্মরত অবস্থায় তিনি এই ধরনের অবৈতনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন! খড়্গপুর মহকুমার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেও তিনি চিন্তা করেছিলেন, এই এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের যদি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তবে অনেকেই হয়তো সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় সাফল্য পাবেন। মহকুমাশাসক বললেন, ” অনেক মেধাবী পড়ুয়াই স্নাতক পাস করার পর চাকরির জন্য অবসাদে ভোগেন। অনেকের আবার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন WBCS অফিসার হবেন, কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পায়না। অনেক অর্থের বিনিময়ে কেউ কেউ কষ্ট করে কলকাতা বা দূরে কোথাও কোচিং নিতে যান। এই মহকুমার খড়্গপুর, ডেবরা, সবং, পিংলা প্রভৃতি এলাকায় আমি দেখেছি অনেক দুঃস্থ ও মেধাবী পড়ুয়া আছেন, যারা সঠিক গাইড পেলে হয়তো সাফল্য পাবেন। সেই লক্ষ্যেই আমি যোগাযোগ করেছিলাম খড়্গপুর কলেজের অধ্যক্ষের সাথে। তিনি উৎসাহিত হয়ে বললেন, ‘অবিলম্বে শুরু করুন। আমরা যথাসাধ্য সাহায্য করব।’ এভাবেই শুরু হয়ে গেল!” ২১ আগস্ট স্নাতকোত্তর স্তরের ৫০ জন শিক্ষার্থী-কে নিয়ে ক্লাস হয়েছে। ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে ক্লাস নিয়েছেন স্বয়ং মহকুমাশাসক। ২৮ আগস্ট থেকে আর একটি ৫০ জনের ব্যাচ তৈরি হচ্ছে, কলেজের তৃতীয় বর্ষের (ষষ্ঠ সেমিস্টার) বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের নিয়। প্রশাসনিক কাজ আর এই মানবিক দায়িত্ব পালন করতে করতেই তিনি জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মেধাবী পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন, “শুধুমাত্র খড়্গপুর কলেজ নয়, জেলার অন্যান্য কলেজের দুঃস্থ ও মেধাবী পড়ুয়ারাও চাইলে আমাদের সাথে (খড়্গপুর কলেজের অধ্যক্ষ বা মহকুমাশাসক) যোগাযোগ করতে পারেন। তবে, আমরা প্রাথমিক কিছু বিষয় যাচাই করে নেব।” মহকুমাশাসক-কে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন খড়্গপুর কলেজের গণিত, পদার্থবিদ্যা, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ের কয়েকজন অধ্যাপক ও প্রাক্তন অধ্যাপক। ইতিমধ্যে, খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাণা মুখার্জি থেকে শুরু করে জেলার একাধিক ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট-ও মহকুমাশাসক-কে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরাও ক্লাস নেবেন। চরম প্রশাসনিক ব্যস্ততার মধ্যেও, ক্লাস কো-অর্ডিনেটর আজমল হোসেন আপাতত ব্যস্ত কাকে, কবে, কোন ক্লাস দেবেন তার হিসেব নিকেশ করতে!