শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ জুলাই: উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ আটকে প্রায় ৯ বছর ধরে। হাই স্কুলেও (নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ) প্রায় ৬ বছর কোনও নিয়োগ নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বহু স্কুলই যে শিক্ষক সংকটে ভুগছে, তা বলাই বাহুল্য! এমনকি শিক্ষকের অভাবে উঠে যাচ্ছে বহু স্কুলই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা-তে উঠে এল তেমনই এক চিত্র। নতুন শিক্ষাবর্ষ (জানুয়ারি) থেকেই স্কুলে পড়েছে তালা। মিড-ডে মিলের রাঁধুনীদের বেতন বন্ধ! জানা যায়, শিক্ষকের অভাবে ডেবরা ব্লকের রাধামোহনপুর অঞ্চলের নিজপপন গ্রামের পরমহংস জুনিয়র হাই স্কুল গত ৭ মাস ধরে বন্ধ। বর্তমানে ওই স্কুলে তালা ঝুলছে!
জানা যায়, বছর খানেক আগেও এই জুনিয়র হাই স্কুলে একজন শিক্ষক ছিলেন।পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে পঠনপাঠন চলত। মাস ছয়েক আগে একমাত্র শিক্ষক অবসর গ্রহণ করেন। ফলে, শিক্ষকের অভাবে পড়ুয়ার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে কমতে, নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে তথা একমাত্র শিক্ষকের অবসর গ্রহণের পর তা শূন্য নেমে যায়! স্বাভাবিকভাবেই জানুয়ারি মাস থেকে স্কুলে পড়েছে তালা। এদিকে, মিড-ডে মিলের রাঁধুনীদেরও বেতন বন্ধ প্রায় ৫ মাস ধরে! স্বর্ণা দাস নামে এক রাঁধুনী জানান, “আমরা প্রথম থেকেই এই স্কুলে মিড-ডে মিলের রান্নার কাজ করছি। কিন্তু, দীর্ঘদিন আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। বারবার এই বিষয়ে প্রশাসনকে জানালেও কোন সুরাহা হয় নি! প্রায় পাঁচ মাস ধরে আমাদের বেতন বন্ধ। স্কুলটিতে প্রায় ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। তাদের রান্নার জন্য এলাকার মুদি দোকানেও টাকা ধার! সে টাকা দেওয়ার জন্য দোকানি আমাদের চাপ দিচ্ছেন। স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক তথা একমাত্র শিক্ষককে গোটা বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু, তিনি তো অবসর নিয়েছেন, তাই কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। এদিকে প্রায় ৬-৭ মাস ধরে স্কুল বন্ধ! আমরা স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিকে জানিয়েছি। আমাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব, আমাদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়া হোক। আর ওই দোকানের টাকাও মিটিয়ে দেওয়া হোক।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অনিন্দ্য দাস জানিয়েছেন, “এই স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক ছিলেন। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পঠনপাঠন চলতো। সেই শিক্ষক অবসর গ্রহণের পর সকল ছাত্র-ছাত্রী পাশের একটি স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়। তারপর থেকেই স্কুলটি বন্ধ। আমরা বারংবার দলীয় নেতৃত্ব সহ প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। স্কুলটি যাতে পুনরায় চালু করা যায়। তবে, কোনও পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত লক্ষ করা যায় নি। পরিকাঠামোর অভাবে স্কুলটি আজ তালা বন্ধ। অবিলম্বে যাতে স্কুলটি চালু করা যায় তার ব্যাবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, “শিক্ষকের অভাবে এলাকার পড়ুয়াদের পাশের স্কুলে যেতে হচ্ছে। রাঁধুনীরা বেতন না পাওয়ায়, তাঁরাও আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়েছেন। এই ঘটনা শিক্ষাব্যবস্থার গুরুতর ত্রুটির প্রমাণ। একটি সরকারি স্কুল এভাবে বন্ধ থাকা অত্যন্ত লজ্জাজনক!” এই বিষয়ে ডেবরার বিডিও প্রিয়ব্রত রাড়ী জানান, “বিষয়টি নজরে এসেছে। আমি ওই স্কুল পরিদর্শনে যাব। দ্রুত সার্কেল ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলে, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করে যাতে পুনরায় স্কুলটি খোলা যায়, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।” একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে বিষয়টি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু’র নজরে আনা হলে, তিনি বলেন, “বিভিন্ন স্কুলেই শিক্ষকের অভাব রয়েছে, আমরা তা চাইলেও অস্বীকার করতে পারিনা! আমরাও তাই চাইছি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করতে। আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পরই দ্রুত নিয়োগ করা হবে।” এ নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ, “রাজ্য সরকারের নিয়োগের সদিচ্ছা নেই বলেই ইচ্ছে করে দুর্নীতি করে বা ভুল করে, যাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আদালতে আটকে যায়। এতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না!”