মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ মার্চ: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২১ জন পড়ুয়া ইউক্রেনে (Ukraine) গিয়েছিলেন ডাক্তারি (MBBS) পড়তে। তাঁরা অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এবং বিভিন্ন সেমিস্টারে পড়াশোনা করছিলেন। তবে, রাশিয়ার আক্রমণে বিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ওই পড়ুয়াদের ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলেই। আপাতত, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অপারেশন গঙ্গা’ (Operation Ganga) অভিযান আর রাজ্য সরকারের তৎপরতায় তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল জানিয়েছেন, “পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১ জন পড়ুয়াই ওই দেশ থেকে বাড়ি ফিরেছেন। একটা বড় দুশ্চিন্তার নিরসন হলো!” বাড়ি ফিরে আসা পড়ুয়াদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে। এদিকে, মৃত্যুভয় বা যুদ্ধাতঙ্ক কাটিয়ে মনেপ্রাণে বাড়ি ফেরার আনন্দ থাকলেও, অন্য এক দুশ্চিন্তা এখন তাঁদের (পড়ুয়াদের) ঘিরে ধরেছে! এই মুহূর্তে পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদের সবথেকে বড় চিন্তা হলো, কিভাবে তাঁরা অসমাপ্ত কোর্স শেষ করবেন! কি হবে এই সমস্ত হাজার হাজার মেধাবী পড়ুয়াদের অবশিষ্ট কেরিয়ারের!
ইতিমধ্যে, জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন বা এনএমসি (National Medical Commission) অবশ্য আশ্বাস দিয়েছে, মেডিক্যাল কোর্স (MBBS) সম্পন্ন করা, তবে ইন্টার্নশিপ অসমাপ্ত থেকে যাওয়া পড়ুয়াদের বিষয়ে। যেসব ডাক্তারি পড়ুয়া ইন্টার্নশিপ শেষ না করেই, দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা দেশেই সেই কোর্স শেষ করতে পারবেন। এছাড়াও কোনও রকম ফি ওই পড়ুয়াদের থেকে নিতে পারবেনা মেডিক্যাল কলেজ, এমনটাও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ওই পড়ুয়াদের সমমর্যাদা ও সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে এবং পাশাপাশি বৃত্তিও তাঁরা পাবেন বলে জানিয়েছে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন। তবে, তাঁদের FMGE পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে ভারতে প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই পরীক্ষা যদিও বেশ কঠিন! তবে, সবথেকে বেশি দুশ্চিন্তায় আছেন MBBS এর মাঝপথে পড়া থামিয়ে যাদের ফিরে আসতে হলো, সেইসব পড়ুয়ারাই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ক্ষেত্রে যেমন রোহন মুখার্জি, সায়ন্তন দাস, অনন্যা পাইক, প্রবীণ কুমার- প্রমুখদের কাউকে অষ্টম সেমিস্টার (চতুর্থ বর্ষ), কাউকে ষষ্ঠ সেমিস্টার (তৃতীয় বর্ষ), আবার কাউকে চতুর্থ সেমিস্টার (দ্বিতীয় বর্ষ) এর মাঝপথেই ফিরে আসতে হয়েছে দেশে। এখনও তাঁদের ‘ট্রমা’ বা আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি। তবে, তার মধ্যেই অবশিষ্ট কোর্স শেষ করা নিয়ে দিনরাত চিন্তা করতে হচ্ছে তাঁদের। আর, তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ঘোষণা করে কিনা সেদিকেই! কারণ, অনেকেই আর ওই দেশে ফিরে যেতে চাইছেন না। আবার যারা ফিরে যেতে চাইছেন, ইউরোপের অন্য কোন দেশ নয়, তাঁরা ইউক্রেনের ওই নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই (যেখানে তাঁরা পড়াশোনা করছিলেন) কোর্স শেষ করতে চাইছেন। সেক্ষেত্রে, সবথেকে বড় দুঃশ্চিন্তা হল, সেই মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’র অস্তিত্ব যুদ্ধ শেষে আদৌ থাকবে কিনা, তা নিয়েই।
এই পরিস্থিতিতে, পড়ুয়াদের বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী। যদিও, চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন IMA (Indian Medical Association)’র পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সকল পড়ুয়াদের দেশেই ডাক্তারি কোর্স সম্পন্ন করানোর আবেদন জানানো হয়েছে। তবে, হাজার হাজার পড়ুয়া-কে এই দেশের মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ দেওয়া কিভাবে সম্ভব হবে, তা নিয়েই চলছে জল্পনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী বি.আর.বি-তে কর্মরত নির্মাল্য মুখার্জি’র মেধাবী সন্তান রোহন মুখার্জি Black Sea National Medical University’র চতুর্থ বর্ষে পড়াশোনা করেছিলেন। যে কৃষ্ণ সাগর (Black Sea) দিয়ে রাশিয়া আক্রমণ শুরু করেছিল, সেই কৃষ্ণ সাগরের তীরেই রোহনের মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার রোহন জানালেন, “এখনও কানে আসছে গুলি-বোমার শব্দ! চোখ বন্ধ করলেই সেই আতঙ্ক। জানিনা আমাদের ইউনিভার্সিটির অস্তিত্ব আছে কিনা বা শেষ পর্যন্ত থাকবে কিনা।” নির্মাল্য বাবু জানালেন, “ছেলে এখনও ট্রমার মধ্যে আছে। যদিও গুগল ম্যাপে ওই কলেজের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে, তবে বাস্তবে তা কতখানি আছে, তা নিয়েই সংশয়ে আছি। কলেজের ভল্টে ওর সমস্ত অরিজিনাল ডকুমেন্টসগুলিও আছে (ওটাই নিয়ম)।” তবে তিনি আশাবাদী, “ওই কলেজের কোর্সটি ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল অনুমোদিত ছিল। তাই, আমরা আশাবাদী কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু একটা ব্যবস্থা করা হবে।” অন্যদিকে, কিভ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মেদিনীপুর শহরের সায়ন্তন দাসের বাবা, পেশায় গোদাপিয়াশাল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নবীন কৃষ্ণ দাস জানিয়েছেন, “ছেলেকে আর ও দেশে পাঠাতে চাই না। যদি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা করা হয়, আমাদের মতো হাজার হাজার পরিবারের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হবে।” আপাতত, কোর্স শেষ করা নিয়ে এবং একইসাথে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, ইউক্রেন ফেরত বেশিরভাগ পড়ুয়াই কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন!
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…