দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৩ নভেম্বর: দমকল বিভাগের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র এবং কলেজের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত সঠিক না থাকায় পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২০০টি কলেজ চলতি শিক্ষাবর্ষে বিএড পড়ানোর প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র বা অনুমোদন পেল না! এদিকে, ওই সমস্ত কলেজে ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। হঠাৎ করেই তাঁরা জানতে পারলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০২৩-‘২৪) রাজ্যের বি.এড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র পায়নি ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সহ গোটা রাজ্যের হাজার হাজার পড়ুয়ার সাথে ঘটে গেল ঠিক এমনই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। সূত্রের খবর অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মোট ৬০০টি বেসরকারি বি.এড প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বা, বি.এড কলেজ)-র মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষে বি.এড পড়ানোর অনুমোদন পেয়েছে বা অনুমোদন (Affiliation) এর পুনর্নবীকরণ হয়েছে ৩৫০-টির। পরে কলকাতা হাইকোর্টের রায় পক্ষে গিয়েছে আরও ৭০-টির। বাকি ১৮০টি কলেজের ভবিষ্যৎ কার্যত অনিশ্চিত! বিপাকে ওই সমস্ত কলেজে ভর্তি হয়ে যাওয়া প্রায় ১৫-২০ হাজার পড়ুয়াও।
প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন (NCTE)-এর নিয়ম অনুযায়ী, বি.এড কলেজগুলিতে পড়ুয়া ও শিক্ষকের একটি নির্দিষ্ট অনুপাত বজায় রাখতে হবে। কলেজে শিক্ষক কম থাকলে চলবে না। অভিযোগ, যে সব কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই, তাদের পুনর্নবীকরণ হচ্ছে না। একইসঙ্গে, রাজ্যের প্রতিটি কলেজে দমকল বিভাগের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র থাকা প্রয়োজন বলে NCTE আগেই জানিয়েছিল। সেই ছাড়পত্রও না থাকায় সমস্যায় প্রায় ২০০টি বি.এড কলেজ। পুনর্নবীকরণ না হওয়া কলেজের তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক নামকরা বি.এড কলেজ আছে বলেও জানা গেছে। তবে, এই তালিকায় সব থেকে বেশি কলেজ আছে মুর্শিদাবাদ জেলার। এমনটাই সূত্রের খবর। এছাড়াও, কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর সহ প্রায় প্রতিটি জেলার কলেজই আছে এই তালিকায়। রাজ্য বি.এড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে মোট ৬০০টি বেসরকারি কলেজ এবং ২৪টি সরকারি। বেসরকারি সেই ৬০০টি কলেজের মধ্যে ৩৫০টি সমস্ত শর্ত পূরণ করেছে। সোমা জানান, সেই সমস্ত কলেজের পুনর্নবীকরণ হয়ে গিয়েছে। যারা পারেনি, তারা শেষ মুহূর্তে এসে জানাচ্ছে, কলেজে শিক্ষক কম। সোমার কথায়, ‘‘কেন এটা আগে বলেনি? এতগুলো কলেজ শেষ মুহূর্তে ইন্টারভিউয়ের তারিখ চাইলে সবাইকে কী ভাবে একই সময়ে ইন্টারভিউয়ের সময় দেওয়া হবে? তবু বিষয়টা আমরা খতিয়ে দেখছি।’’ তিনি এও জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের স্বার্থেই তাঁদের এনসিটিই-র নিয়ম মানতে হবে। শিক্ষক কম থাকা অবস্থায় নতুন করে পড়ুয়া ভর্তি করলে পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এনসিটিই শিক্ষক ও পড়ুয়ার যে অনুপাতের কথা বলেছে সেই অনুপাত ঠিক রেখে কলেজগুলি চালাতে হবে।
এছাড়াও, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দমকল বিভাগের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র আদায় করতে পারেনি পশ্চিম মেদিনীপুর সহ রাজ্যের প্রায় ২০০টি কলেজ। এদিকে, Affiliation পুনর্নবীকরণের সময়ও পেরিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার তথা শিক্ষা দপ্তর এবং বি.এড বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পেয়ে ক্ষুব্ধ বেশিরভাগ কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই সমস্ত কলেজের আধিকারিকদের অভিযোগ, শিক্ষকের অভাবের জন্য তাঁরা দায়ী নন। অতিমারী পরিস্থিতি বা লকডাউন সহ বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন কারণে শিক্ষকেরা কলেজ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও তাঁরা ইন্টারভিউয়ের তারিখ পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে তাই কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদন, পুনর্নবীকরণের সময়সীমা বাড়ানো হোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের অভিযোগ, “ঘুরিয়ে ফিরিয়ে হয়তো টাকা চাইছেন! আমরা দমকলের অনুমতির জন্য একাধিকবার গেলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। কানাঘুষো শুনছি নির্দিষ্ট দপ্তরে গিয়ে ২-৩ লক্ষ টাকা ঘুষ দিলে হয়ে যেত! আর, লকডাউন সহ বিভিন্ন সময়ে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ইস্তফা দিয়ে চলে গেছেন, নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া হয়নি।” তবে, এই সমস্ত কলেজের মধ্যে ৭০টি কলেজ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলে, হাইকোর্টের তরফে তাঁদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। তা সত্ত্বেও চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের প্রায় ২০০টি কলেজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত! আর এর ফল ভুগতে পারেন প্রায় ২০ হাজার বি.এড পড়ুয়া। এই সমস্ত পড়ুয়াদের একটা বছর যাতে কোনভাবেই নষ্ট না হয়, সেজন্য অবিলম্বে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষ।