মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ সেপ্টেম্বর: একেই বলে চোরে চোরে (পড়ুন, অপরাধীতে অপরাধীতে) মাসতুতো ভাই! জঙ্গলমহল পিড়াকাটার (পশ্চিম মেদিনীপুর) বিকাশ আর উত্তরবঙ্গের (কুচবিহার) তাপসের মধ্যে আলাপ মাথাভাঙ্গা (কুচবিহার)’র জেলে। মহিলা ঘটিত ‘অপরাধ’ (বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ)- এর কারণে দু’জনই জেল খাটছিল বলে সূত্রের খবর। সেখান থেকেই ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা! ‘শান্ত’ জঙ্গলমহলকেই বেছে নিয়েছিল দু’জনে। সেই মতো আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে বিকাশের নিজের এলাকা অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা সংলগ্ন এলাকায় শুরু করেছিল চুরি-ছিনতাই! বিকাশের বাড়ি পিড়াকাটার অদূরে কলসীভাঙা সংলগ মেটাল এলাকায়। আর, পিড়াকাটার কাছাকাছি জয়পুর (মাছবিন্দা) সংলগ্ন এলাকায় শুরু হয় ছিনতাইয়ের ঘটনা। আগস্টের শেষ সপ্তাহে একদিন এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দু’দিন! তারপর-ই নড়েচড়ে বসে পুলিশ।
ডিএসপি অপারেশন দুর্লভ সরকারের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু করে পিড়াকাটা পুলিশ পোস্ট তথা শালবনী থানা। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় জেলা পুলিশের এসওজি টিম। মোবাইল ট্র্যাক করে একে একে গ্রেফতার করা হয়, বিকাশ মাহাত, মহেশ্বর মাহাত, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এবং মূল অভিযুক্ত কুচবিহারের তাপস বর্মনকে। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার ছিনতাই কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত তাপস বর্মনকে কোচবিহার থেকে গ্রেফতার করে মেদিনীপুর আদালতে পেশ করে পিড়াকাটা পুলিশ পোস্ট। এর আগে, শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকাশ মাহাত, মহেশ্বর মাহাত, ইন্দ্রজিৎ ঘোষ (বয়স ২৫-৩০ এর মধ্যে)-কে গ্রেফতার করা হয়েছিল যথাক্রমে পিড়াকাটা সংলগ্ন মেটাল এবং গুড়গুড়িপালের গৌড়া থেকে। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে কুচবিহার থেকে মূল অভিযুক্ত বছর ৩০-এর তাপস বর্মনকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ পোস্টের বাহিনী। ধৃতকে মঙ্গলবার মেদিনীপুর আদালতে তোলা হলে, বিচারক ৭ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে।
উল্লেখ্য যে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে, গত কয়েক বছর ধরে ‘শান্ত’ থাকা জঙ্গলমহলের পিড়াকাটা সংলগ্ন জয়পুর (মাছবিন্দা) এলাকায় পর পর দু’দিন ছিনতাই হয়। দুষ্কৃতীরা টাকা পয়সা, মোবাইল ছিনিয়ে নেয় পথ চলতি সাধারণ মানুষ তথা বাইক চালকদের। তদন্তে নামে শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ পোস্ট। জেলা পুলিশের এসওজি টিমের সাহায্যে চুরি যাওয়া মোবাইলের লোকেশন ট্র্যাক করে শালবনী থানার মেটাল ও গুড়গুড়িপাল থানার গৌড়া এলাকা থেকে শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার করা হয়, যথাক্রমে – বিকাশ মাহাত, মহেশ্বর মাহাত ও ইন্দ্রজিৎ ঘোষ নামে তিন দুষ্কৃতীকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই কুচবিহারের শীতলকুচি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মূল অভিযুক্ত তাপস বর্মনকে। ছিনতাই করে সে নিজের এলাকায় অর্থাৎ কুচবিহারে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানা যায়। বিকাশের সঙ্গে তার মাথাভাঙা জেলে আলাপের সূত্রেই শান্ত জঙ্গলমহলে অস্ত্র নিয়ে গিয়ে ছিনতাই এর পরিকল্পনা করে তাপস। এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মঙ্গলবার মেটাল এলাকায় একটি কুঁয়ো থেকে সেভেন এমএম পিস্তল এবং চার রাউন্ড কার্তুজ-ও উদ্ধার করে শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ পোস্ট। ডিএসপি অপারেশন দুর্লভ সরকার জানিয়েছেন, “চারজনকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ছিনতাই চক্রের জাল কতদূর প্রসারিত তা দেখা হবে।”