দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ এপ্রিল: শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েত সমিতিতেও তৃণমূলেরই একচ্ছত্রাধিপত্য। যদিও, গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২-টি আসনের মধ্যে বিজেপি’র দখলে ৭ টি ও তৃণমূলের দখলে ৫ টি আসন; তা সত্ত্বেও সংরক্ষণ জনিত কারণে, প্রধান তৃণমূলের-ই। আর, উপপ্রধান বিজেপির। সেই গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিবের বিরুদ্ধে গত প্রায় একবছর ধরে দু’দফায় প্রায় ২০ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ। তাঁর নামে থানায় এফআইআর (FIR) করছেন প্রধান স্বয়ং। সচিব এই মুহূর্তে বেপাত্তা। আর, সর্ষের মধ্যেই ভূত দেখছেন বিরোধীরা! ঘটনাটি, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৮ নং গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েতের। অভিযুক্ত সচিবের নাম নবকুমার রাণা। তাঁর উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে গত ৭ এপ্রিল, শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ পোস্টে FIR করেছেন প্রধান নিতাই ভুঁইয়া। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন।
জানা যায়, ২০২১-‘২২ অর্থবছরের ট্যাক্স-নন ট্যাক্স (বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের) বাবদ আদায়ীকৃত প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা এর আগে এক ঠিকাদার এবং নিজের স্ত্রী’র অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করার অভিযোগ উঠেছিল। গত অক্টোবর (২০২১) মাসে এই বিষয়ে প্রধান সহ শালবনী পঞ্চায়েত সমিতি জানতে পারার পর, ব্লক প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করে। বেঙ্গল পোস্ট সহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ওই খবর সেই সময় প্রকাশিতও হয়। পরে, প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ফেরতও দিয়ে দেন সচিব। কিন্তু, তারপর থেকে আর ওই সচিব অফিসে আসছেন না বলে খবর। এদিকে, পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, সম্প্রতি অডিটে ধরা পড়েছে, সবমিলিয়ে আরও প্রায় ৫ লক্ষ টাকার গরমিল আছে। এই মুহূর্তে তাই, পুলিশের কাছে এফআইআর (FIR) দায়ের করতে বাধ্য হয়েছে গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েত। যদিও, এই বিষয়ে বিজেপির উপপ্রধান বঙ্কিম মাহাত’র দাবি, “কিভাবে প্রধানকে না জানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার গরমিল হতে পারে! এই ঘটনার সঙ্গে প্রধান সহ শাসকদল জড়িত আছে। এখন, শুধুমাত্র সচিবের ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে! সরকার, প্রশাসন সবকিছুই তো শাসকদলের, তাহলে উপযুক্ত তদন্ত হচ্ছে না কেন?”
অন্যদিকে, বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শাসকদল এবং গড়মাল গ্রাম পঞ্চায়েত তথা শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির তরফে। শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মিনু কোয়াড়ি জানিয়েছেন, “এই বিষয়টিতে অবিলম্বে বিডিও-কে হস্তক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে।” একই কথা জানিয়েছেন শালবনী পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ। তিনি দাবি করেছেন, “প্রশাসনের উচিত ওই সচিবকে সাসপেন্ড করা। কারণ, আগেরবার আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর, উনি প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। কিন্তু, প্রশাসন আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেননি। এদিকে, আরও ৫ লক্ষ টাকার গরমিল পাওয়া গেছে! তাই প্রধান এফআইআর করতে বাধ্য হয়েছে।” অন্যদিকে, সচিব নবকুমার রাণা প্রায় ৪ মাস অফিসে আসছেন না বলে খবর। তাঁর সাথে চেষ্টা করেও ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, কি তাঁর উপর কোন রাজনৈতিক চাপ আছে? কারণ, মাত্র ৫ লক্ষ টাকার জন্য তিনি সরকারি চাকরি-কে অবহেলা করবেন, এমনটা মনে করছেনা রাজনৈতিক মহল! এনিয়ে, তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর আছে শালবনীতে। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অরূপ দাস জানিয়েছেন, “সবকিছুই তো শাসকদলের। চারিদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতির খবর। আর, একজন সচিব কিভাবে প্রধানকে না জানিয়ে বা শাসকদলের প্রশ্রয় ছাড়া কয়েক লক্ষ টাকা তছরুপ করতে পারে? আর্থিক বিষয়ে দু’জনেরই তো সমান ক্ষমতা বলে আমরা জানি! তাই, উপযুক্ত তদন্ত করা হোক।” উপযুক্ত তদন্তের দাবি করে কর্মাধ্যক্ষ সন্দীপ সিংহ জানিয়েছেন, “২০২১ এর ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে, বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে, যখন রাজনৈতিক ডামাডোল চলছিল, সেই সময় সুযোগ বুঝে সচিব দুর্নীতি করেছে। তাই প্রশাসন উপযুক্ত তদন্ত করে ওনাকে শাস্তি দিক।” শাসকদলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা-ও জানিয়েছেন, “কোন দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। প্রশাসনের কাছে আমাদেরও আবেদন, ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক।” এদিকে, এই বিষয়ে বেঙ্গল পোস্টের পক্ষ থেকে বিডিও-র সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল, তবে তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি।