দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, সায়ক পন্ডা, ১ জানুয়ারি: নতুন বছরের শুরুতেই যেন শক্তি সঞ্চয় করে ফের ময়দানে নেমেছে করোনা! দেশে ও রাজ্যে রেকর্ড হারে বাড়ছে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা। স্বভাবতই, লকডাউন বিভীষিকা গ্রাস করছে বঙ্গবাসী তথা সমগ্র ভারতবাসীকেই! করোনার পাশাপাশি, চিন্তা বাড়াচ্ছে ওমিক্রনও। ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে ১ হাজার ৪৩১ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনার নতুন এই স্ট্রেনে। শনিবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২২ হাজার ৭৭৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। শুক্রবার এই সংখ্যাটা ছিল ১৬ হাজার ৭৬৪। পাশাপাশি, গত একদিনে করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৪০৬ জন। শুক্রবার এই সংখ্যাটা ছিল ২২০। গত ২৪ ঘন্টায় এই মারণ ভাইরাসের প্রকোপ থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮ হাজার ৯৪৯ জন। আপাতত, দেশে করোনায় অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৭৮১ জন।

thebengalpost.net
দেশের করোনা বুলেটিন:

এদিকে, রাজ্যেও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, শনিবার রাজ্যে ৪ হাজার ৫১২ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন (আগেরদিন ছিল ৩৪৫১)। পাশাপাশি, রাজ্যে সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। গত একদিনে শুধুমাত্র কলকাতাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ২৩৯৮ জন। তারপরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৮৮ জন। গত একদিনে করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে করোনার জেরে মোট মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭৭৩ জন। আপাতত, রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৪২ হাজার ৯৯৭। গত একদিনে রাজ্যে করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯১৩ জন। বর্তমানে রাজ্যে সুস্থতার হার ৯৭.৯৯ শতাংশ। রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩০০ জন। গত একদিনে মোট ৩৭ হাজার ৫৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে রাজ্যে। পাশাপাশি, রাজ্যে বেড়েছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই নতুন স্ট্রেনে। এদিকে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুরে গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে, খড়্গপুরেই ১৩ জন। এর মধ্যে, রেল সূত্রে ৫ জন ও গ্রামীণ এলাকায় ১ জন। বাকি ৭ জন শহরের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা। অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরের ৫ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।

thebengalpost.net
রাজ্যের করোনা বুলেটিন :

এমতাবস্থায়, আগামী সোমবার থেকেই রাজ্যে কড়া বিধিনিষেধ জারি করার কথা ভাবছে সরকার। সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, সম্পূর্ণ লকডাউনের কথা এখনই ভাবছেনা সরকার। তবে, যেকোনো প্রকার জমায়েত, বাজার, দোকান, লোকাল ট্রেন, বিমান যাত্রা, বার-রেস্তোরা, স্কুল-কলেজ এই সমস্ত ক্ষেত্রে আংশিক বিধিনিষেধ জারি করা হতে পারে ওইদিন থেকেই। এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের তরফেও পশ্চিমবঙ্গকে চরম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে, রবিবার অর্থাৎ ২ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে প্রায় আট হাজার শিবির তৈরি করে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প হওয়ার কথা ছিল। তিনটি নতুন প্রকল্পও শুরু করার কথা ছিল এই শিবিরে। সেই সবই আপাতত স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, স্টুডেন্টস উইক বা শিক্ষার্থী সপ্তাহ উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী’র ৩ জানুয়ারির নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের কর্মসূচিও আপাততো স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে, বাতিল করা হয়নি অনুষ্ঠান। আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, রাজ্য জুড়ে ফের ‘ভার্চুয়াল’ বা অনলাইন মোড ফিরতে চলেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। ইতিমধ্যে, কলকাতা হাইকোর্টের তরফে নির্দেশিকা জারি করে ভার্চুয়াল শুনানির কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলা আদালতের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। অতিমারি পরিস্থিতি নজরে রেখে শনিবার এমনই নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা হা‌ইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তবে, জামিনের মামলায় যে হেতু নথি জমা দেওয়ার ব্যাপার থাকে, তাই শুধু ওই মামলাগুলিতে সরকারি আইনজীবী সশরীরে আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানানো হয়েছে। সবমিলিয়ে, তৃতীয় ঢেউয়ের মোকাবিলায় সর্বত্র তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। প্রতিটি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যে ১৫-১৮ বছর বয়সীদের ভ্যাকসিনেশনের সাথে সাথে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

thebengalpost.net
জেলার বুলেটিন :