দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, সায়ক পন্ডা, ৩০ ডিসেম্বর: দেশজুড়ে ফের হানা দিচ্ছে তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক! বেশ কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা নিম্নমুখী সংক্রমণের পর হঠাৎ করেই দেশে লাফিয়ে বাড়ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার নতুন স্ট্রেন ওমিক্রনের আতঙ্কও। ইতিমধ্যে, সারা দেশে এখনও পর্যন্ত ৭৮১ জন আক্রান্ত হয়েছেন ওমিক্রনে। গতকাল এই সংখ্যাটা ছিল ৬৫৩। শুধুমাত্র দিল্লিতেই ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৮। পাশাপাশি, বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯ হাজার ১৯৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার এই সংখ্যাটা ছিল ৬ হাজার ৩৫৮। আপাতত, দেশে করোনায় অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ২ জন।
এদিকে, রাজ্যেও ক্রমশ দাপট দেখাচ্ছে করোনা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৭৭ দিন পর রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল হাজারের গন্ডী! স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, বুধবার রাজ্যে ১ হাজার ৮৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার এই সংখ্যাটা ছিল ৭৫২। পাশাপাশি, রাজ্যে সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে কলকাতা। গত একদিনে শুধুমাত্র কলকাতাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪০ জন। তারপরেই রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৫ জন। গত একদিনে করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে করোনার জেরে মোট মৃতের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৭৪৫ জন। আপাতত, রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৩২ হাজার ৯০৬। গত একদিনে রাজ্যে করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৮০৭ জন। বর্তমানে রাজ্যে সুস্থতার হার ৯৮.৩২ শতাংশ। রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ৭২৭ জন। গত একদিনে মোট ৩৮ হাজার ৩৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে রাজ্যে। এদিকে, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৮ জন।
অন্যদিকে, দেশে ও রাজ্যে ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকায়, কপালে চিন্তার ভাঁজ সকলেরই। একদিকে যেমন প্রশাসন এই সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে তৎপর, অন্যদিকে, সাধারণ দরিদ্র, শ্রমজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যেও নতুন করে দুঃশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। অনেকেই ভাবছেন, সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ফের লকডাউনের পথে হাঁটবে কিনা! যদিও, এখনই তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে, প্রতিটি রাজ্যকে সতর্ক থাকার এবং ক্ষুদ্র পরিসরে কনটেনমেন্ট জোন তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ওমিক্রন’ আর ‘তৃতীয় ঢেউ’ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন এবং মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব-দের বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন। এখনই বৃহদাকারে কনটেনমেন্ট জোন তৈরি কিংবা লকডাউনের মতো পরিস্থিতি না হলেও, ক্ষুদ্র পরিসরে কনটেনমেন্ট জোন বা মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন তৈরি করা হবে আগামী ৩ জানুয়ারি (২০২২) থেকে। অফিস-আদালতের উপস্থিতিতে রাশ টানা হতে পারে! স্কুল-কলেজের ক্ষেত্রেও জেলাশাসকদের রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি যদি উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকে, সেক্ষেত্রে হয়তো জনসাধারণের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রভাব পড়তে পারে লোকাল ট্রেন সহ পরিবহন শিল্পের উপর! সেক্ষেত্রে বাজারের উপর তথা ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর আগামীদিনে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়তে পারে। তবে, পুরোপুরি লকডাউন হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে!