দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ জানুয়ারি: সংক্রমণের যেন ঢল নেমেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে! গত কয়েকদিনে আক্রান্ত একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক, নার্স সহ প্রায় ২০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ জন অবশ্য সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। আরও ১৫০ জন আছেন আইসোলেশনে। ফলে, নিঃসন্দেহে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা পরিষেবা! একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু থেকে শুরু করে মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক তথা আইএমএ’র জেলা শাখার সম্পাদক ডাঃ কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত। এজন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছে মেদিনীপুর মেডিক্যালের মেল ও ফিমেল কোল্ড ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে সাধারণত আউটডোর (বহির্বিভাগ) থেকে যাদের অস্ত্রোপচারের জন্য চিহ্নিত করা হয়, তাঁদের সাময়িক ভাবে রাখা হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “এর ফলে কিছু স্বাস্থ্যকর্মী কম লাগছে। নাহলে তো চালানো মুশকিল হয়ে যাচ্ছে!” তবে, এজন্য পরিষেবায় কোনো সমস্যা হবেনা আশ্বাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, “ইমারজেন্সি বিভাগের পাশে আপাতত তাঁদের (আউটডোরের পেশেন্টদের) রাখা হচ্ছে।” তবে, মেডিক্যাল সূত্রে খবর, সংক্রমণের জেরেই পিছিয়ে যাচ্ছে অনেক অস্ত্রোপচার। ডাঃ গাঁতাইত জানিয়েছেন, “অনেক সিনিয়র চিকিৎসকও সংক্রমিত, আর প্রচুর জুনিয়র চিকিৎসকেরও রিপোর্ট পজিটিভ। তবে, একটু সুস্থ হলেই তাঁরা ধীরে ধীরে কাজে যোগ দিচ্ছেন।” শিশু বিভাগের একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক আক্রান্ত বলে আগেই জানিয়েছিলেন বিভাগীয় প্রধান ডাঃ তারাপদ ঘোষ। তবে, এবার শিশুদের কোভিড ওয়ার্ডে পরিমিত শিশুই ভর্তি আছে বলে জানিয়েছেন। শনিবার ৪ জন শিশু ভর্তি ছিল বলে জানা গেছে। যদিও, সার্বিকভাবে করোনা আক্রান্তদের ভর্তি হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ডাঃ কুন্ডু। শুক্রবার মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন দু’জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যুও হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, তাঁদের নানা কো-মর্বিডিটি ছিল বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন।

thebengalpost.net
ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে কোল্ড মেডিসিন ওয়ার্ড :

এদিকে, গত ৪৮ ঘন্টায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৫০৪ জন। এর মানে এই নয় যে, সংক্রমণের হার কমেছে! রাজ্যের মতোই গত ২ দিনে জেলাতেও কমেছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। উৎসবের আবহে অনেকেই ছুটি কাটিয়েছেন এবং অনেকেই পরীক্ষা করাতে আসেননি! শনিবার সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন ২১১ জন ও মৃত্যু হয়েছিল ২ জনের। অপরদিকে, রবিবার সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ২৯৩ জন। মৃত্যু হয়নি। তবে, সংক্রমণের হার ১৪.২৫ শতাংশ! সন্দেহাতীতভাবে, দু’দিনই সর্বাধিক করোনা সংক্রমিত মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরে। দুই শহরেই গড়ে ১০০ জন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ দিনই। তবে, খড়্গপুর শহরের সর্বাধিক সংক্রমণ আবার রেল ও আইআইটি-তে। আর, মেদিনীপুর শহরে সংক্রমণ ছেয়ে যাওয়ার পর, এবার সদর ব্লকেও মারাত্মক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত হয়েছেন MKDA-র চেয়ারম্যান ও বিধায়ক দীনেন রায় ও তাঁর স্ত্রী। তাঁরা আইসোলেশনে স্থিতিশীল আছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও, ঘাটাল মহকুমা, ডেবরা, বেলদা, কেশিয়াড়ি, দাঁতন, শালবনী, গড়বেতা প্রভৃতি এলাকাতেও করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। অন্যদিকে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। টেস্ট হয়েছিল ৬৪ হাজার ৫৭২ (গত কয়েকদিনের তুলনায় সামান্য কম); মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের এবং সংক্রমিত ১৫০৬৪ জন। আর, রবিবার সকালে দেশের করোনা বুলেটিনেও রেকর্ডসংখ্যক আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২ লক্ষ ৭১ হাজার ২০২ জন আক্রান্ত এবং ৩১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গে মেলা আর বিয়েবাড়ির ছাড় বাড়িয়ে দিয়ে বাকি সমস্ত বিধি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

thebengalpost.net
রাজ্যের করোনা বুলেটিন :

thebengalpost.net
দেশের করোনা বুলেটিন :