দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ জুলাই: মাঝখানে ৩-৪ দিন দৈনিক করোনা সংক্রমণের নিরীখে শীর্ষস্থানে পৌঁছে গিয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর! রাজ্যের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে শীর্ষস্থানে থাকা কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগণা’কেও টপকে টানা ৩-৪ দিন শতাধিক মানুষ করোনা সংক্রমিত হচ্ছিলেন এই জেলায়। ঠিক সেই সময়ই জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরও কিছুটা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিল একসাথে শীর্ষস্থানীয় দুই স্বাস্থ্য কর্তার বদলির কারণে। সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন নতুন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH) ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা। অন্যদিকে, জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল আর জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারও এবার শক্ত হাতে রাশ ধরেছেন। দৈনিক সংক্রমণ কিছুতেই আর “বাড়তে” দেওয়া যাবেনা, এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই গত মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সমগ্র মেদিনীপুর-খড়্গপুর শহরকে কনটেনমেন্ট করার ঘোষণাও করে দিয়েছিলেন জেলাশাসক। যদিও তা থেকে সরে এসে, পরের দিন (৭ জুলাই) অবশ্য বিশেষ কয়েকটি ওয়ার্ডকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে সংক্রমিতের সংখ্যাধিক্য। তার পরও থেমে থাকেনি জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার রাতে মেদিনীপুর শহরের কনটেনমেন্ট বা গন্ডীবদ্ধ এলাকাগুলি পরিদর্শন করেছেন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার। সংক্রমিত’দের বাড়িতে বাড়িতে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা পুলিশের হোম আইশোলেশন স্টিকার বা “করোনা স্টিকার”। বার্তা দেওয়া হয়েছে, আপনি বা আপনারা বাড়িতে থাকুন; পুলিশ প্রশাসন প্রয়োজনীয় সবকিছু পৌঁছে দেবে। এভাবেই সংক্রমণ রুখতে বদ্ধপরিকর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। আবার, এর মধ্যেই নিয়ম ভাঙার অপরাধে ধরপাকড়ও শুরু হয়েছে। শনিবার রাতে মেদিনীপুর শহর থেকে ২৫ জনকে আটক (পরে গ্রেফতার) করলো কোতোয়ালী থানা। নিয়ম ভেঙে রাত্রি ৯ টার পর ইতস্তত ঘোরাঘুরির কারণেই আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তার আগের দিনই অর্থাৎ শুক্রবার মেদিনীপুর-খড়্গপুর সীমানায় নাকা চেকিং করে ১২ জনকে আটক করা হয়েছিল। ‘নিয়ম না মানার শহর’ খড়্গপুরেও চালিয়ে খেলছে পুলিশ। উড়ছে ড্রোন। ইতস্তত ঘোরাঘুরি করলেই পড়ছে লাঠির বাড়ি! মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপক সরকারের নেতৃত্বে কড়া ভূমিকায় রেল শহরের পুলিশ। উদ্দেশ্য একটাই, তৃতীয় ঢেউয়ের আগে যেভাবে হোক সংক্রমণের “চেইন” বা বাড়বাড়ন্ত রুখে দেওয়া!
এদিকে, নিয়মের কড়াকাড়ি হোক বা সংক্রমণের নিম্নগতি, গত ২ দিনে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় নামমাত্র করোনা সংক্রমিতের হদিস মিলেছে! তবে, টেস্টও একটু কম হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২ দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন যথাক্রমে ৩২ জন (শনিবারের রিপোর্ট) এবং ৪২ জন (শুক্রবারের রিপোর্ট)। তার আগের ৩ দিনে জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন যথাক্রমে ৮৩ জন (বৃহস্পতিবার), ১১১ জন (বুধবার) ও ১২৮ জন (মঙ্গলবার)। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রিপোর্ট পাওয়ার ২৪ ঘন্টা আগের টেস্ট (বা, সংক্রমণ) বলে ধরে নিতে হবে। সেই হিসেবে গত চব্বিশ ঘণ্টায় জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ৩২ জন। এর মধ্যে, মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৮ জন। শহরের ধর্মাতে ১ জন, বিধাননগরে একই পরিবারের ২ জন সহ মোট ৩ জন, পাটনা বাজারে ১ জন এবং কোতোয়ালী থানার অধীনে অন্যান্য জায়গায় আরও ৩ জন করোনা সংক্রমিতের সন্ধান পাওয়া গেছে গত চব্বিশ ঘণ্টায়। অপরদিকে, খড়্গপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ জন। যার মধ্যে রেল সূত্রে ৪ জন ও আইআইটি ক্যাম্পাসের ২ জন। এছাড়াও, শহরের বুলবুলচটি, নিমপুরা, মালঞ্চা, ঝাড়েশ্বর মন্দির (১০ নং ওয়ার্ড) ও তালবাগিচায় ১ জন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে, বেলদা-নারায়ণগড় ব্লকের বেলদায় ১ জন ও মাতকাতপুরে ১ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন গত চব্বিশ ঘণ্টায়। এছাড়াও, দাঁতনে (জেনকাপুর) ১ জন, কেশিয়াড়িতে (গগনেশ্বর) ১ জন, পিংলাতে (জামনা) ১ জন এবং সবংয়ে ৪ জন (বুড়াল, খড়িকা, দশগ্রাম, কাপাসদা) এর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে গত চব্বিশ ঘণ্টায়। ঘাটাল মহকুমায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ জন (ক্ষীরপাই ২, ঘাটাল ১)। অপরদিকে, শুক্রবারের রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন মাত্র ৪২ জন। এর মধ্যে মেদিনীপুর শহর (অরবিন্দ নগর, জুগনুতলা প্রভৃতি) ও সদর ব্লক (খয়রুল্লাচকে ৩ জন) মিলিয়ে ১১ জন; খড়্গপুরের ৭ জন (আইআইটি ও রেল সহ); ঘাটাল মহকুমায় ৮ জন; কেশিয়াড়িতে ১ জন; কেশপুরে (আনন্দপুর) ২ জন; শালবনীতে ১ জন; সবংয়ে ৩ জন; ডেবরা ও পিংলায় যথাক্রমে ১ জন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন।