তনুপ ঘোষ ও মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ জানুয়ারি:জেলাজুড়ে হুহু করে বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২ দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৬৯৩! জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের শুক্রবার সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৩০৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার নতুন রেকর্ড গড়ে জেলায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ৩৮৭ জন! সংক্রমণের হার (পজিটিভিটি রেট) ছিল ১৬.৪৮ শতাংশ। শুক্রবার অবশ্য তা কমে হয়েছে ১২.২৯ শতাংশ। তবে, এর কারণ, সংক্রমণ যে কমেছে তা নয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মহল বলছে, যেভাবে প্রতিটি বাড়িতেই জ্বর-সর্দির প্রকোপ দেখা দিয়েছে, তাতে টেস্ট করানো হলে পজিটিভিটি রেট ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। আসলে, ওমিক্রনের উপসর্গ অনেকটাই সাধারণ ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মত হয়, এখন অধিকাংশ জন টেস্ট করাচ্ছেন না! বাড়িতেই সাধারণ ওষুধপত্র খেয়ে নিচ্ছেন। গত দু’দিনে নমুনা পরীক্ষাও তাই তুলনামূলক ভাবে কমে গেছে (২৩১৮ ও ২৪৪৮)! যদিও, স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বারবার বলছেন, ওমিক্রনে ভয় কম হলেও, তা কো-মর্বিডিটি থাকা এবং টিকা না নেওয়া লোকজনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে! তাই, সতর্ক থাকা উচিত এবং উপসর্গ দেখলেই টেস্ট করা উচিত।
এদিকে, ঘাটাল মহকুমার ক্ষীরপাইয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের (UCO Bank) একাধিক কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হওয়ায়, শুক্রবার নোটিশ জারি করে ব্যাংক আপাতত বন্ধ করে দেওয়া। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, একাধিক কর্মচারী সংক্রমিত হওয়ায় ব্যাংক বন্ধ করা হয়েছে। ব্যাংক স্যানিটাইজ করা হবে এবং পুনরায় পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেই ব্যাংক খুলে দেওয়া হবে। এদিকে, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ব্যাহত হওয়ায় গ্রাহকদের অসুবিধা হচ্ছে। তবে, বিজ্ঞপ্তিতে গ্রাহকদের উদ্দেশ্যে আবেদন জানানো হয়েছে, আপাতত নিকটবর্তী ব্যাঙ্কগুলি (চন্দ্রকোনা, জাড়া, বাঁকা, খড়ার প্রভৃতি) থেকে পরিষেবা গ্রহণ করার জন্য।
অপরদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল, শালবনী করোনা হাসপাতালের পর এবার ক্ষীরপাই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিএমওইচ সহ ৬ স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হলেন। জানা যায়, ক্ষীরপাই গ্রামীণ হাসপাতালে বিএমওএইচ (BMOH) ডাঃ নিরঞ্জন কুতি সহ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসায় চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে! কারণ, ক্ষীরপাইয়ের এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর নির্ভর করেন শতাধিক মানুষ। ফলে, পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটলে, অসুবিধায় পড়বেন তাঁরা! যদিও এই বিষয়ে বিডিও রথীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, “আমরা সকলকে সচেতন থাকার আবেদন জানাচ্ছি এবং পরিষেবা যথাসাধ্য সচল রাখার চেষ্টা করছি।” অন্যদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের শতাধিক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা সংক্রমিত হওয়ায়, জেলা হাসপাতালেও পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে! বিশেষত শিশু বিভাগের ১১ জন সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসক আক্রান্ত বলে জানা গেছে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু জানিয়েছেন, “শুধু শিশু বিভাগ নয়, প্রতিটি বিভাগেই একাধিক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সংক্রমিত। ফলে, অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর অত্যধিক চাপ পড়ছে। পরিষেবা যতটা সম্ভব সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।” তিনি এও সতর্ক বার্তা দিয়েছেন, “মনে হচ্ছে আরও অনেকেই আক্রান্ত হবেন, কারণ বিপজ্জনক না হলেও, এই ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত দ্রুতহারে ছড়াচ্ছে। সংক্রমণ ঠেকানো খুব মুশকিল হয়ে যাচ্ছে! তবে, আশার কথা হল ৭ দিন আইসোলেশনে থাকলেই মোটামুটি সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।” সূত্রের খবর অনুযায়ী, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রায় ৭০ জন চিকিৎসক ও ৫২ জন নার্স এই মুহূর্তে সংক্রমিত। তবে, প্রত্যেকেই স্থিতিশীল। আইসোলেশন পর্ব শেষ হলেই তাঁরা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।