দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ১০ আগস্ট: হতে পারে কাকতালীয় কিংবা নেহাতই কোনও অঘটন! তবে, চলতি সপ্তাহের সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরের পর কলকাতা হাইকোর্টে ঘটে যাওয়া ‘অবিশ্বাস্য’ এক ঘটনাকে বেশিরভাগ আইনজীবীরাই ব্যাখ্যা করছেন- “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর” বলেই। ঘটনাটি ঠিক কি? সোমবার (৭ আগস্ট) একটি মামলার শুনানি শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত মামলাকারীর জমি থেকে ‘শিবলিঙ্গ’ তুলে ফেলার বা উচ্ছেদ করার রায় দিয়েছিলেন। আর, সেই রায় লেখার সময় বা নথিবদ্ধ করার সময় ভরা এজলাসেই জ্ঞান হারান সহকারী কোর্ট রেজিস্ট্রার বিশ্বনাথ রায়! তড়িঘড়ি তাঁকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার পরই এজলাস থেকে দশ মিনিটের জন্য উঠে যান বিচারপতি। বদলে ফেলেন নিজের রায়! চমকে ওঠা ঘটনাটি সোমবার ঘটেছে কলকাতা হাইকোর্টে। গোটা ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে হাইকোর্টে! ঈশ্বর বিশ্বাসীরা বলছেন, “শ্রাবণ মাসে চারিপাশে শিবের মাথায় জল ঢালার ঢল নেমেছে। সেই সময়, বিশেষত, শ্রাবণ মাসের সোমবার এই ধরনের ‘রায়’ লিখতে গিয়ে হয়তো সহকারী রেজিস্ট্রার (বিশ্বনাথ রায়) আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কিংবা কোনও দৈবিক বা অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে!”

thebengalpost.net
শ্রাবণ মাসে চারিপাশে চলছে জল ঢালার উৎসব :

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এক খণ্ড জমি নিয়ে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার খিদিরপুরের বাসিন্দা সুদীপ পাল ও গোবিন্দ মণ্ডলের মধ্যে বিবাদ চলছিল। চলতি বছরের মে মাসে হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয় বিবাদ। একে অপরের বিরুদ্ধে বেলডাঙা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সুদীপ ও গোবিন্দ। চার্জ শিট জমা করে পুলিশ। তবে, নিম্ন আদালত থেকে উভয়েই জামিন পান। কিছুদিন পরেই এই ‘জমি বিতর্ক’ নতুন মোড় নেয়! অভিযোগ, ওই বিতর্কিত জমিতে একটি শিবলিঙ্গ প্রতিস্থাপন করেন গোবিন্দ মন্ডল। সেই শিবলিঙ্গ তুলতে সুদীপ পাল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেয়। আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও পুলিস কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় সুদীপ পাল কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা দায়ের করেন। আবেদনকারী সুদীপ পালের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি আদালতে জানান, গোবিন্দ ইছাকৃতভাবে ওই বিতর্কিত জমিতে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছেন। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তাই আদালত এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক। গোবিন্দর আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বিচারপতিকে বলেন, আমার মক্কেল শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেননি। শিবলিঙ্গ নিজেই মাটি ফুঁড়ে উঠেছে! সরকারি আইনজীবী অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় গোবিন্দর আইনজীবীকে বলেন, “বাবা! তোমার শিব দেখছি বৈদ্যনাথ ধামের শিবের থেকেও জাগ্রত!”

সওয়াল শেষে বিচারপতি সেনগুপ্ত বলেন, শিবলিঙ্গ এইভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় না। ওই শিবলিঙ্গ ওখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। গোবিন্দ’র আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্রাবণ মাসের সোমবার শিবলিঙ্গ উচ্ছেদের রায় দেবেন?” এরপরই বিচারপতির নির্দেশে এজলাস উপস্থিত সহকারী কোর্ট রেজিস্ট্রার বিশ্বনাথ রায় বিচারপতির ‘রায়’ নথিভুক্ত করতে শুরু করেন। রায় কিছুটা নথিভুক্ত করার পরই, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান রেজিস্ট্রার! ঘটনার আকস্মিকতায় এজলাসে হইচই শুরু হয়ে যায়। বিচারপতি এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। মিনিট দশেক পর এজলাসে ফেরেন বিচারপতি সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “আদালত এই বিষয় কোনও হস্তক্ষেপ করবে না। বিষয়টির বিচার হবে নিম্ন আদালতে দেওয়ানি মামলার মাধ্যমে। আমি এই মামলার নিষ্পত্তি ঘোষণা করলাম।”

thebengalpost.net
কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta HighCourt):