দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২১ জুলাই: স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি’র করা মামলায় আপাতত চার দিনের ‘রক্ষাকবচ’ পেলেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ (একক বেঞ্চ) বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছেন, টাকা পাচারের নির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া অভিষেকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারবে না ইডি। চার দিন পর অর্থাৎ সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে পারবে না ইডি। ফলে, আজ (শুক্রবার), একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে ফুরফুরে মেজাজেই বক্তব্য রাখবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। এমনটাই মনে করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের বাড়তি পাওনা হতে পারে ছাত্র-নেত্রী রাজন্যা হালদারের বক্তব্য কিংবা ‘জয়ী’ ব্যান্ডের গান!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠির সূত্রে উঠে আসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। অভিষেককে জেরা করতে পারে সিবিআই এবং ইডি। নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, তাঁর নির্দেশ ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন অভিষেক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলা আসে বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ বহাল রাখেন বিচারপতি সিনহা। উপরন্তু ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। এরপর, ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছয় মামলা। ২৫ লক্ষ টাকার জরিমানা মুকুব করলেও সুপ্রিম কোর্ট রায় বহাল রাখে। তবে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ফৌজদারী আইন অনুযায়ী পুনরায় হাইকোর্টে আবেদন করতে পারেন বলে সুপ্রিম কোর্ট জানায়। সেই মতোই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন অভিষেক। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানিতেই আপাতত চার দিনের রক্ষাকবচ দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। যদিও, এই রক্ষাকবচ ইডি মামলার ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে, সিবিআই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিনা তা সময়ই বলবে। ইডি’র বিরুদ্ধে করা অভিষেকের মামলার পরবর্তী শুনানি সোমবার। ওই দিন কলকাতা হাইকোর্টে সমস্ত তথ্য প্রমাণ সহ জোরদার সওয়াল করতে পারে ইডি। কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস.ভি রাজু ইডি’র হয়ে সওয়াল করতে পারেন বলে জানা যায়।
অন্যদিকে, অভিষেকের স্বস্তির দিনই বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীর অস্বস্তিও বাড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জির ডিভিশন বেঞ্চ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর-এর ‘রক্ষাকবচ’ তুলে নিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রমাণ থাকলে এফ.আই.আর করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি আই.পি মুখার্জির ডিভিশন বেঞ্চ। তবে, গ্রেফতারি সহ শুভেন্দুর বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ করতে হলে, সেক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের অনুমতি নিতে হবে বলেও জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। একটি জনস্বার্থ মামলায় বৃহস্পতিবার এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা। যদিও, এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতি বৃহস্পতিবার উপস্থিত না থাকায়, মামলার শুনানি হয় বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জির ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানেই, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার একক বেঞ্চের তরফে শুভেন্দুকে যে ‘রক্ষাকবচ’ দেওয়া ছিল ২৬টি মামলার ক্ষেত্রে, তা পরবর্তী মামলাগুলির ক্ষেত্রে তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে, শুভেন্দু অধিকারী-র বিরুদ্ধে মামলা রুজু করলেও, তাঁকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিয়েই পদক্ষেপ করতে হবে।