দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ মে: “চাকরি করে শুধু নিজের জন্য বা নিজের পরিবারের জন্য বাঁচতে চাইনি। একটা বৃহৎ সমাজের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলাম। এমন কিছু একটা, যা দিশা দেখাবে অনেককে। আমি চলে যাওয়ার পরও, যে কাজ সমাজে থেকে যাবে।” এমনটাই জানিয়েছেন পেশায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ‘রেলশহর’ খড়্গপুরের ইন্দার বিদ্যাসাগর পল্লী এলাকার বাসিন্দা সুকান্ত চন্দ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে টাটা কোম্পানির লক্ষ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি ব্লকের খাজরা এলাকায় অর্কিডের চাষ শুরু করেন বছর ৫৫’র সুকান্ত চন্দ। কেশিয়াড়ির খাজরা এলাকায় প্রায় ২০০০ স্কোয়ার মিটার জায়গার উপর দু’টি পলি-হাউস তৈরি করে ২২ হাজার অর্কিডের চারা লাগিয়েছেন তিনি। দুটি পলি-হাউস তৈরিতে সুকান্ত বাবুর খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। তিনি জানান, “একটু ধৈর্য ধরতে হবে। দেড় বছর পর থেকে রোজগার শুরু হবে।”
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিকল্প আয়ের দিশা দেখানোর লক্ষ্যেই বিশাল বেতনের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরি ছেড়ে এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে তিনি জানান। ২০১৯ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সুকান্ত বাবু নামকরা কোম্পানিতে (টাটা স্টিল) কাজ করেছেন। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে দীর্ঘ সাতাশ বছর চাকরি করেছেন বলেও জানান তিনি। তবে, ছোট থেকেই তাঁর ইচ্ছে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা। কাজের পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখতেন, ব্যক্তিগত জীবনে উন্নতি সাধনের বদলে, সার্বিক উন্নয়ন বা একটা বৃহৎ সমাজের উন্নয়ন করার বিষয়ে। তাই, অকপটে সুকান্ত বাবু জানান, “আমি যে টাকা বেতন পেতাম, সুখে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু, ২০১৮ সালেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি কিছু একটা করতে হবে। ২০১৯ এর ডিসেম্বরে চাকরি থেকে ইস্তফা দিই। ততদিনে ঠিক করে ফেলেছিলাম, কি করব!” তিনি এও জানান, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অর্কিড চাষে ভালো আয় করা যাবে। তবে, প্রথম দেড় বছর ধৈর্য ধরতে হবে। গাছের পরিচর্যা করে যেতে হবে। তারপর ফুল আসবে। বর্তমান ভারতীয় বাজারে অর্কিড ফুলের চাহিদাও রয়েছে বেশ। অন্যদিকে, ভারতে এর চাষও খুব কম হয়। স্বাভাবিকভাবেই, এই চাষ অত্যন্ত লাভজনক।
তবে, উন্নত প্রজাতির এই অর্কিডের চাষ করতে সন্তান সুলভ পরিচর্যা করতে হয় বলে জানান সুকান্ত বাবু। নারকেল ছোবড়ার উপরে গাছ লাগিয়ে প্রতিদিন জল, প্রয়োজনীয় খাবার দিলে প্রায় বছর দেড়েক পর ধারাবাহিকভাবে ফুল পাওয়া যাবে গাছ থেকে। যা পার্শ্ববর্তী কলকাতা সহ অন্য বাজারে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা পাওয়া যাবে। দু’টি পলিহাউসে সুকান্তবাবুর খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। এই চাষ করলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হর্টিকালচার বিভাগ থেকে আর্থিক সাহায্য পাওয়া যায় বলেও জানিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন নিয়ম করে গাছের পরিচর্যা করেন সুকান্ত বাবু। তিনি বলেন, “চাকরি জীবনে শুধুমাত্র ব্যক্তি কেন্দ্রিক সুবিধা হয়। বৃহত্তর ক্ষেত্রে, সাধারণ মানুষের উন্নতি সাধনের কথা ভাবতে হবে সকলকে।” তাই, বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অর্কিড চাষ করে বর্তমান প্রজন্মকে বিকল্প আয়ের দিশা দেখাচ্ছেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার সুকান্ত চন্দ।