দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, বীরভূম, ২৪ মার্চ:বগটুইয়ের বাতাসে এখনও পোড়া গন্ধ! ধিক ধিক করে জ্বলছে আগুন। আকাশে-বাতাসে আর্তনাদ। এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হয়েছিল ভাদু শেখ ঘনিষ্ঠ তৃণমূল ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের নির্দেশেই। আগেই উঠেছিল অভিযোগ। বগটুই পৌঁছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-ও তা স্বীকার করে নিলেন। নির্দেশ দিলেন, “আনারুল যেখানেই থাকুক, হয় তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে, নাহলে গ্রেফতার করতে হবে।” মমতা সরাসরি স্বীকার না করলেও মেনে নিয়েছেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল চক্রী ছিল সেই। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের নির্দেশেই আগুন লাগানো হয়েছে, এমন অভিযোগ সামনে এসেছিল আগেই। আগুনে পুড়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারের লোকজনের মুখেই শোনা গেছে আনারুলের নাম। বৃহস্পতিবার বীরভূমের বগটুই পৌঁছে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিলেন এবং মৃতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দিলেন। ১০-টি পরিবারের সদস্যদের দিলেন চাকরির প্রতিশ্রুতি।
এদিকে, মৃত ১০ জনের মধ্যেই ছিল নবদম্পতি সাজিদ-মর্জিনা। সোমবার (২১ মার্চ) সকালেই নানুর থেকে বগটুই পৌঁছেছিলেন তাঁরা। রাতে এক বন্ধুকে ফোনও করেছিলেন সাজিদ। বিপদে পড়েছেন বুঝতে পেরেই সম্ভবত পুলিশ নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। তবে সেটাই যে সাজিদের শেষ কথা হবে, তা ভাবেননি বন্ধু, পরিজনেরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফোন বন্ধ পেয়েই বাড়ে দুশ্চিন্তা। তারপর খবর পেয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে ছুটে যান আত্মীয়রা। ততক্ষণে সব শেষ। সাজিদের এক বন্ধু জানিয়েছেন, “মাথার খুলিটুকু ছাড়া লাশগুলো চেনাই যায়নি।” উল্লেখ্য, মাস দুয়েক আগেই বিয়ে হয়েছিল সাজিদের। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি বিয়ে হয় কাজি সাজিদুল রহমান ও মার্জিনা খাতুনের। নানুরের দান্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজিদ। স্ত্রীর বাপের বাড়ি বগটুইতে যাওয়ার জন্য সোমবার বাড়ি থেকে বেরোন তিনি। সাজিদুল ও স্ত্রী মার্জিনা সোমবার সকাল ৯ টা নাগাদ নানুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেই মতো দুপুর ১২ টা নাগাদ রামপুরহাটে বগটুই গ্রামে পৌঁছান তাঁরা। বাড়িতে ফোন করে পৌঁছে যাওয়ার কথাও জানান। তারপর মঙ্গলবার রাত ৯ টা সময় এক বন্ধুকে ফোন করেছিলেন সাজিদ। বলেছিলেন পুলিশ নিয়ে আসতে। তারপর আর কথা হয়নি। তারপর মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিবার ও বন্ধুরা সাজিদকে ফোন করলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নিসাজিদের বাবা কাজি নুরুল জামাল জানিয়েছেন, বন্ধুর কাছে যে ফোন এসেছিল সে কথা তাঁরা শুনেছিলেন। কিন্তু পরিনতি যে এমন হতে পারে সে কথা ভাবতেও পারেননি তাঁরা। সাজিদের এক বন্ধু জানান, তিনি জানতে পেরেছিলেন রাত ৯ টার পর আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, “আমরা খবর পেয়ে সকাল ১০ টার সময় বেরিয়ে রামপুরহাট হাসপাতালে যাই। গিয়ে যা দেখলাম, লাশ চেনা যায়নি। মাথার খুলিটুকু শুধু আছে, আর কিছু নেই।” জীবন্ত অবস্থায় ঘরে বন্দী করে তাঁদের জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে! স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বৃহস্পতিবার বগটুইয়ের মাটিতে দাঁড়িয়ে কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘অগ্নি সংযোগ করে’ মেরে ফেলার কথা!