মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ সেপ্টেম্বর: ১৮২০’র ২৬ সেপ্টেম্বর ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আর ভগবতী দেবী’র কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যাসাগর রূপেই খ্যাত হয়েছেন বীরসিংহের এই ‘সিংহ শিশু’! বাংলায় নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ, নারী শিক্ষা প্রসারের অগ্রদূত, ‘বর্ণপরিচয়’ এর স্রষ্টা, বিধবা বিবাহের প্রবর্তক, বাল-বিবাহের প্রতিরক্ষক মেদিনী-মাতার এই বীরসন্তান সাক্ষাৎ ‘ঈশ্বর’ রূপে তাঁর কীর্তি-প্রভায় অন্ধকার বঙ্গজীবন-কে আলোকিত করে গেছেন। ‘দয়ার সাগর’ ঈশ্বরচন্দ্রের সেই অক্ষয় কীর্তি যুগের পর যুগ বঙ্গজীবনের চিরন্তন ‘আলোক বর্তিকা’ রূপে ভাস্বর হয়ে থাকবে! সেই ঈশ্বরের ২০২- তম জন্মদিন পালিত হল তাঁর ধাত্রীভূমি মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁকে স্মরণে রেখেই, তাঁর নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয় দ্বি-শত তম (২০০ তম) জন্মবর্ষ থেকে বঙ্গ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুণীজন-দের হাতে তুলে দিচ্ছে ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’। ২০২১ সালে শিক্ষা-সাহিত্য ও সঙ্গীত জগতের তিন নক্ষত্রের হাতে রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) তুলে দেওয়া হল পুরস্কার। তিনজন হলেন, যথাক্রমে- বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও সঙ্গীত স্রষ্টা (গীতিকার) তথা “আমি বাংলায় গান গাই/ আমি বাংলার গান গাই” সঙ্গীতের জন্য বাংলা সঙ্গীতের আকাশে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকা প্রতুল মুখোপাধ্যায়; জঙ্গলমহল তথা অবিভক্ত মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’ সাহিত্যিক নলিনী বেরা এবং মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা তথা বাংলার যশস্বিনী শিক্ষাবিদ, ঐতিহাসিক ও রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপিকা (ইতিহাস) ড. অন্নপূর্ণা চট্টোপাধ্যায়।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবেকানন্দ সভাগৃহে রবিবার বিকেলে এক অনাড়ম্বর ও তাৎপর্যমণ্ডিত অনুষ্ঠানে বঙ্গ-সমাজের এই তিন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্বের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যথাক্রমে আরও তিন খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব- অধ্যাপক সুভাষ রঞ্জন চক্রবর্তী (ঐতিহাসিক), কল্যাণ রুদ্র (নদী বিশেষজ্ঞ ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান) এবং প্রশান্ত মাজি (লেখক ও সম্পাদক)। গুরুগম্ভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে মনীষী ও সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন, আদর্শ, কীর্তি, বাণী, খ্যাতি ও গৌরবের দিব্যবিভায় আলোকিত হয়ে থাকলো মূল সুরটি! উপাচার্য শিবাজী প্রতিম বসু এবং খ্যাতিমান (ও খ্যাতিময়ী) পুরস্কার-প্রাপকদের মননশীল আলোচনায় বারবার উঠে এল বিদ্যাসাগরের অসামান্য পৌরুষ, আদর্শ ব্যক্তিত্ব ও ঐশ্বরিক দীপ্তি-র কথা। বাংলা সঙ্গীত জগতের চিরস্মরণীয় প্রতিভা প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কথায়, গানে ও স্তোত্র পাঠে বাঙালির বিদ্যাসাগর আর বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর যেন এক অনন্য আকাশে মিলিত হলো! অনুষ্ঠানের অন্তিম লগ্নে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু ঘোষণা করলেন, “বাংলা গদ্যের জনক, বাংলায় আধুনিক শিক্ষার অগ্রদূত, নারী শিক্ষার পথিকৃৎ, দয়ার সাগর ও সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিবস-টিকে এবার থেকে ‘বিদ্যাসাগর দিবস’ রূপেই পালন করবে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২১ এর ২৬ সেপ্টেম্বর, ঈশ্বরের ২০২ তম জন্মজয়ন্তী থেকেই তার সূচনা হয়ে গেল।”