দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ ডিসেম্বর: জগৎসভায় আরো একবার উজ্জ্বল মেদিনীপুর! বাংলাকে গর্বিত করে মাদুর শিল্পে ‘জাতীয় পুরস্কার’ (National Award) ছিনিয়ে নিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের এর তিন ‘বীরাঙ্গনা’, যথাক্রমে- মিঠুরানি জানা (Mithu Rani Jana), গৌরীবালা দাস (Gouri Bala Das) এবং গৌরীরানি জানা (Gouri Rana Jana)। মাদুরের ‘মসলন্দ’ (Masland Mat) শিল্পের উপর তাঁরা এই পুরস্কার পেয়েছেন বলে জানা গেছে। বোনা, নকশা ও গুনগত মানের উপর নির্ভর করে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রক এই পুরস্কার প্রদান করে থাকে। উল্লেখ্য যে, মিঠুরানি জানা ২০১৭ সাল এবং গৌরীবালা দাস ও গৌরীরানি জানা ২০১৮ সালের জাতীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তবে, অতিমারী পরিস্থিতির কারণে এতদিন তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়নি। অবশেষে, গত ২৮ নভেম্বর (২০২২) দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে এই তিন শিল্পীর হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল।

thebengalpost.net
তিন শিল্পী:

জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত তিন মাদুর শিল্পী গত বুধবার (৩০ নভেম্বর) দিল্লি থেকে ফিরেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরে। তিনজনেরই বাড়ি সবংয়ের সারতা গ্রামে। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তাঁদের গ্রাম থেকে শুরু করে গোটা সবং এলাকা। গর্বিত মেদিনীপুরও! প্রসঙ্গত, এই সারতা গ্রাম থেকে এর আগেও ৬ জন জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এমনকি, মিঠুরানি’র স্বামী অলোক জানা ২০০৮ সালে এবং গৌরীরানির স্বামী তাপস জানা ২০১৬ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। গৌরীবালার স্বামী ও সন্তানেরাও রাজ্য ও জেলার একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তবে, তাঁদের বাড়িতে জাতীয় পুরস্কার এই প্রথম। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, সবংয়ের ৩ লক্ষ ৮ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ১ লক্ষ ৪৮ হাজার মহিলা। আর, তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশই মাদুর শিল্পী। ৫০ জন আছেন মসলন্দ শিল্পী। মিঠুরানি, গৌরীবালা ও গৌরীরানি পুরস্কার পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাজ্য সরকার তথা সবংয়ের বিধায়ক ও ক্যাবিনেট মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়াকে। তাঁদের মতে, “বর্তমান সরকার এই শিল্পকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মাদুর চাষ ও শিল্পকে ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত করাতেও মাদুর শিল্পীরা উপকৃত হচ্ছেন।”

thebengalpost.net
পুরস্কৃত করছেন বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল:

পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত মিঠুরানি বলেন, “আমার কাছে এটা খুবই খুশির দিন। আমি যে এই জায়গায় পৌঁছতে পারব, তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার স্বামীও এই পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে, রাজ্য ও জেলার একাধিক পুরস্কার আমিও পেয়েছি। তবে, জাতীয় পুরস্কার পেয়ে আমি অভিভূত। শিল্প সামগ্রী মজুত রাখার জন্য আমাদের খাদির তরফে দেড় হাজার স্কোয়ার ফিটের একটি বাড়ি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে তাম্রপত্রের পাশাপাশি ১ লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে।” গৌরীবালা ও গৌরীরানিও জানিয়েছেন, “জাতীয় পুরস্কার পেয়ে খুবই ভালো লাগছে।” স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রেতা, সুরক্ষা ও উপভোক্তা দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ মানস রঞ্জন ভুঁইয়া বলেন, “তিন শিল্পী বাংলাকে গর্বিত করেছে। তাঁদের নাম আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। মসলন্দের উপর পুরস্কার পেলেন। আমি অভিনন্দন জানাই। এটা ভুলে গেলে চলবে না, সবংয়ের ৭০ শতাংশ বাসিন্দাই মাদুর শিল্পের উপর নির্ভরশীল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবংয়ে মাদুর হাব তৈরীর ঘোষণাও করেছেন। ইউনেস্কোর (UNESCO) প্রতিনিধিদলও সম্প্রতি ঘুরে গিয়েছেন। ‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতিও মিলতে পারে।”

thebengalpost.net
শিল্পী মিঠুরানি জানা: