দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ আগস্ট: শিক্ষাক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ‘শিক্ষক দিবস’ (৫ সেপ্টেম্বর) এর দিন “শিক্ষারত্ন” সম্মাননা তুলে দেওয়া হয় এই সম্মানে ভূষিত শিক্ষকদের হাতে। এই বিশেষ সম্মাননার জন্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষা (কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়) ক্ষেত্র থেকে বেছে নেওয়া হয় শিক্ষকদের। ‘জাতীয় শিক্ষক’ ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিবস তথা ‘শিক্ষক দিবস’ এর দিন তাঁদের হাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় “শিক্ষারত্ন” পুরস্কার তুলে দেন। এবারও, “শিক্ষারত্ন” সম্মান প্রাপকদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বিপ্লবীদের পীঠস্থান এবং স্মৃতিধন্য মেদিনীপুর টাউন স্কুল (বয়েজ) এর প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী। মাধ্যমিক বিভাগ থেকে এবার জেলার একমাত্র শিক্ষক রূপে এই সম্মান পাচ্ছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং রবীন্দ্র গবেষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী। অপরদিকে, প্রাথমিক বিভাগ থেকে এই পুরস্কারে এবার সম্মানিত হচ্ছেন দাঁতন ১ নং ব্লকের দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন দাস প্রধান।

thebengalpost.in
“শিক্ষারত্ন ২০২১” সম্মানে বিভূষিত মেদিনীপুর টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং দাঁতনের দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক :

thebengalpost.in
ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী তৎকালীন রাজ্যপাল ড. গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সঙ্গে :

প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর টাউন “হেরিটেজ” উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর (শিক্ষক দিবস) “রাষ্ট্রীয় শিক্ষক পুরস্কার” (সংক্ষেপে, ‘রাষ্ট্রপতি পুরস্কার’) এও ভূষিত হয়েছেন। ইংরেজি সাহিত্যের এই বিদগ্ধ ও পন্ডিত মানুষটি সারা বিশ্বজুড়ে তাঁর জ্ঞান ও গরিমার স্বাক্ষর রেখেছেন বিভিন্ন বক্তৃতা ও শিক্ষা সম্বন্ধীয় অনুষ্ঠানে। লিখেছেন ১৪ টি গ্রন্থ। ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মালয়েশিয়ার মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়ে পেয়েছেন সম্মাননা পত্র। একাধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেলোশিপ পেয়েছেন। শ্রীলংকা থেকে আমন্ত্রিত হয়ে পেয়েছেন ‘ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যাম্বাসেডর’ সম্মান। মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’ (দাঁতনের মোহনপুর ব্লকের পুরুনীয়া গ্রামে জন্ম) ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী ২০০৬ সালে মেদিনীপুর টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১০ সালে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মেদিনীপুর টাউন স্কুল “হেরিটেজ” ঘোষিত হয়। শহীদ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অন্যতম পীঠস্থান এই টাউন স্কুলের সার্বিক পরিকাঠামো তাঁর আন্তরিকতা স্পর্শে উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। বর্তমানে, জেলা শহর মেদিনীপুরের বাসিন্দা ড. চক্রবর্তী একজন বিশিষ্ট “রবীন্দ্র গবেষক” এবং লেখক রূপেও সর্বজনবিদিত। শিক্ষা জগৎ ছাড়াও সামাজিক ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান সর্বজন স্বীকৃত। ড. চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “এই সম্মান শুধু আমার নয়, আমার বিদ্যালয়েরও। আমার বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী-কে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে এই সম্মান। সর্বজন শ্রদ্ধেয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর-কে অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি সন্মানীয়া জেলাশাসক ড. রশ্মি কমলের প্রতি। বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো ও সার্বিক বিকাশে যথাসাধ্য সমর্পিত থেকেছি। বিদ্যালয়ের আরও মানোন্নয়ন ঘটানোই আগামীদিনের লক্ষ্য।”

thebengalpost.in
বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী :

thebengalpost.in
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ড. বিবেকানন্দ চক্রবর্তী :

অন্যদিকে, মেদিনীপুরের দাঁতনেরই ‘ভূমিপুত্র’ তথা বাসিন্দা স্বপন দাস প্রধান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এবার জেলা থেকে একমাত্র এই সম্মান প্রাপক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কে তিনি জেলার অন্যতম একটি “মডেল স্কুল” এ রূপায়িত করেছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পরিবেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে এই বিদ্যালয় জেলার অন্যতম গর্ব। তাঁর এই সম্মান শুধু বিদ্যালয় নয়, সমগ্র দাঁতন বাসীকে গর্বিত করেছে বলে তাঁর সমাজ মধ্যম অ্যাকাউন্টে একাধিক ব্যক্তি প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সন্দীপ পাল লিখেছেন, “দাঁতনের সুবর্ণরেখা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম সরিপুরের পবিত্র মাটি থেকে জীবনযুদ্ধ শুরু করে, দোয়াস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মডেল স্কুলে পরিণত করেছেন। আজ আমরা আপনার এই জীবনযুদ্ধকে প্রণাম জানাই শিক্ষকমশাই! আগামীর পথ সুগম হোক এই কামনা রইল।” অজাতশত্রু ও সদাহাস্যময় এই মানুষটি তাঁর নিরলস পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই বিদ্যালয়ের মানোন্নয়ন ঘটিয়ে “শিক্ষারত্ন- ২০২১” সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়াও, তাঁর পাশে থাকার জন্য বিদ্যালয়ের সহকর্মী বৃন্দ থেকে শুরু করে এলাকাবাসীর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতিমারী আবহে গত বছরের মতো এবারও জেলাশাসকের দপ্তর থেকেই আগামী ৫ সেপ্টেম্বর তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল।

thebengalpost.in
শিক্ষক স্বপন দাস প্রধান :

thebengalpost.in
নিজের বিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষক স্বপন দাস প্রধান :