মণিরাজ ঘোষ ও শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ সেপ্টেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে এবার ‘শিক্ষারত্ন পুরস্কার- ২০২৩’ এ ভূষিত হতে চলেছেন দুই শিক্ষক, যথাক্রমে- ডেবরা থানা শহীদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (Principal) ড. রূপা দাশগুপ্ত এবং গোবিন্দপুর মকরামপুর স্বর্ণময়ী শাসমল শিক্ষা নিকেতন (উচ্চ মাধ্যমিক)- এর প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার মহান্তি। এছাড়াও, রাজ্যের যে ১৩-টি স্কুলকে এবার ‘সেরা বিদ্যালয়’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে; সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে মেদিনীপুর শহরে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধীন রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবন, মেদিনীপুর। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, ‘শিক্ষক দিবস’- এর দিন তাঁদের হাতে পুরস্কার বা সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে জেলা প্রশাসনের তরফে। ভার্চুয়ালি ‘নবান্ন’ থেকে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত খড়গপুর মহকুমার ডেবরা ব্লকে অবস্থিত ডেবরা থানা শহীদ ক্ষুদিরাম স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (বা, অধ্যক্ষা) হিসেবে ড. রূপা দাশগুপ্ত দায়িত্ব নেন ২০১৮ সালে। তারপর থেকে শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, পরিবেশ প্রভৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকার এই কলেজ। এর আগে, ২০০১ সালে মেদিনীপুর শহরের রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়ে (Raja N.L Khan Women’s College) প্রানীবিদ্যা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন রূপা। পরে সেখানে অধ্যাপনা করার সাথে সাথেই প্রানীবিদ্যাতে গবেষণা (Phd) করেন তিনি। ২০১৮ সালে ডেবরা কলেজের অধ্যক্ষ (প্রিন্সিপাল) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কলেজের পাঠদান যাতে প্রাণবন্ত ও জীবনমুখী হয়, সেজন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল নিরবচ্ছিন্ন। যে কারণেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলেজ হওয়া সত্ত্বেও, প্রতি বছরই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ফলাফলে নজর কাড়ে এই কলেজ। কলেজের অধ্যক্ষের এই সাফল্যে আপ্লুত তাঁর সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীরা। তাঁদের মতে, “উনি যথার্থ অর্থেই এই পুরস্কারের যোগ্য।” অন্যদিকে, ড. দাশগুপ্ত বলেন, “দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেল। কলেজকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।”
অন্যদিকে, নারায়ণগড় ব্লকের মকরামপুর এলাকায় অবস্থিত গোবিন্দপুর মকরামপুর স্বর্ণময়ী শাসমল শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার মহান্তি যে বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে আপাদমস্তক নিবেদিত প্রাণ, তা মানছেন এলাকাবাসী থেকে শুরু করে তাঁর সহকর্মী এবং প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীরা। একসময় রাজ্যসভার সাংসদ তথা বিশ্ববন্দিত ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকারকে চিঠি লিখে বিদ্যালয়ের উন্নয়নকল্পে কয়েক লক্ষ টাকা অনুদান হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন উত্তম। সেই টাকায় বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। তারপরেও অবশ্য বিদ্যালয়ের উন্নতি থেমে থাকেনি, থেমে নেই আজও। প্রধান শিক্ষক উত্তম কুমার মহান্তি বলেন, “জানিনা এই পুরস্কারের আমি যোগ্য কিনা! তবে, চেষ্টা করে গেছি বিদ্যালয়ের সার্বিক মানোন্নয়নের জন্য। সেই চেষ্টা আগামী দিনেও বজায় থাকবে।” অন্যদিকে, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত মেদিনীপুর শহরের রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবন যে যথার্থ অর্থেই জেলা তথা রাজ্যের অন্যতম সেরা একটি স্কুল তা একবাক্যে স্বীকার করেন আপামর শিক্ষা সচেতন নাগরিকেরা। সেই স্কুল-কে এবার রাজ্যের অন্যতম ‘সেরা স্কুল’ হিসেবে স্কুল শিক্ষা দফতর বেছে নেওয়ায় খুশি মেদিনীপুর তথা জেলাবাসী।