মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ সেপ্টেম্বর: গেঁয়ো যোগী নাকি ভিখ পায়না! এমনটাই প্রবাদে আছে। কিন্তু, সেই প্রবাদ-কে আবারও ভুল প্রমাণিত করল জঙ্গল অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ‘বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়’ (Vidyasagar University)। সমাজ সংস্কারক তথা নবজাগরণের অগ্রদূত বীরসিংহের ‘সিংহ শিশু’ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০২ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর (রবিবার) তাঁরই নামাঙ্কিত মেদিনীপুরের এই বিশ্ববিদ্যালয় (VU) এবার যে তিনজন ‘গুনীজন’-কে “বিদ্যাসাগর পুরস্কার”-এ সম্মানিত করবে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন- জঙ্গলমহলেরই ‘ভূমিপুত্র’ সাহিত্যিক নলিনী বেরা। অবিভক্ত মেদিনীপুরের এই কৃতি সন্তান “মেদিনীপুরের মহামানব” ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাঁরই নামাঙ্কিত এই বিখ্যাত ‘পুরস্কার’ এ সম্মানিত হচ্ছেন জঙ্গলমহলের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে; এই খবর অবিভক্ত মেদিনীপুর তথা জঙ্গলমহলবাসীর কাছে নিঃসন্দেহে গৌরবের ও সমৃদ্ধির! এছাড়াও, যে দু’জন কৃতি ব্যক্তিত্ব-কে এবার এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন- বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ও সঙ্গীত স্রষ্টা (গীতিকার) তথা “আমি বাংলায় গান গাই/ আমি বাংলার গান গাই” সঙ্গীতের জন্য বাংলা সঙ্গীতের আকাশে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকা প্রতুল মুখোপাধ্যায়। অন্যজন হলেন, বর্ষীয়সী ঐতিহাসিক ড. অন্নপূর্ণা চট্টোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য যে, সাহিত্যিক নলিনী বেরার জন্ম অবিভক্ত মেদিনীপুরের তথা অধুনা ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের নিকট বাছুরখোয়াড় গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশোনা করেছেন তিনি। তাঁর শিক্ষা সম্পন্ন হয় মেদিনীপুর কলেজ (বর্তমানে, স্বশাসিত) এবং পরে, নকশাল আন্দোলনের কারণে, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে। “সুবর্ণরেণু সুবর্ণরেখা” উপন্যাসের জন্য ১৪২৫ বঙ্গাব্দে (২০১৯ খ্রিস্টাব্দে) তিনি ‘আনন্দ পুরস্কার’ এ সম্মানিত হন। মেদিনীপুরের ‘গর্ব’ নলিনী তাঁর পুরস্কারের ১০ লক্ষ টাকা-ই আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা ছাত্রা-ছাত্রীদের জন্য দান করে দেন। আধুনিকোত্তর বাংলা কথা সাহিত্যর অন্যতম এই প্রবাদ প্রতিম ব্যক্তিত্ব ‘আনন্দ পুরস্কার’ এ সম্মানিত হওয়ার আগে ২০০৮ সালে বঙ্কিম পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছিলেন। অবিভক্ত মেদিনীপুরের সেই ‘ভূমিপুত্র’ নলিনী বেরা-কে এবার “বিদ্যাসাগর পুরস্কার” এ সম্মানিত করতে চলেছে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ‘বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়’। এছাড়াও, বাংলা সঙ্গীতাকাশের অন্যতম ধ্রুবতারা ৭৯ বছরের সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় এবং বিখ্যাত ঐতিহাসিক ড. অন্নপূর্ণা চট্টোপাধ্যায়-কে এবার সম্মানিত করবে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর (রবিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিবেকানন্দ সভাগৃহ’ তে আয়োজিত অনুষ্ঠানে (দুপুর ২ টো) এই ৩ জন গুনী ব্যক্তিত্বের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন যথাক্রমে- প্রশান্ত মাজি (বিশিষ্ট লেখক ও সম্পাদক), ড. কল্যাণ রুদ্র (বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ) এবং অধ্যাপক সুভাষ রঞ্জন চক্রবর্তী (বিশিষ্ট ঐতিহাসিক)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু। এমনটাই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (নিবন্ধক) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী।