দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা ও পশ্চিম মেদিনীপুরে, ২১ নভেম্বর: “আমি বিয়ে করবনা। আমি ডাক্তার বা দিদিমণি হতে চাই”। কলকাতায় রওনা হওয়ার আগে, শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে নিজের বাড়ির উঠানে একাধিক সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ‘লাজুক কন্ঠে’ অথচ দৃপ্ত ভঙ্গিতে একথাই উচ্চারণ করেছে ‘মেদিনীকন্যা’ রুমা সিং। শনিবার (২০ নভেম্বর) ‘আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার দিবস’ এ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের “নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তর” এর ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী শশী পাঁজা যখন রাজধানী কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত বিষড়া গ্রামের বছর পনেরোর সেই আদিবাসী কন্যার হাতে “বীরাঙ্গনা” পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন, গোটা অবিভক্ত মেদিনীপুর যেন অন্তর থেকে কুর্নিশ জানিয়ে রুমা’র উদ্দেশ্যে বারবার বলে উঠতে চাইছে, “তুমি আমাদের গর্ব। তোমার সব স্বপ্ন পূরণ হবেই হবে”! নেহাতই ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ পরিবারের সদ্য বাবাকে হারানো অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী যে সাহস আর দৃঢ়তা দেখিয়েছে, তা মধুকবি’র (মাইকেল মধুসূদন দত্ত) “বীরাঙ্গনা” কাব্যের পৌরাণিক নায়িকাদের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়! বাবার মৃত্যুর পর, অভাবের সংসারে মা তাকে পাত্রস্থ করে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলেন। রুখে দাঁড়ায় রুমা। মা’কে বুঝিয়ে কাজ হয়নি, তাই গোপনে যোগাযোগ করে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যার সঙ্গে। কাজ হয় তাতে! মেয়ের জেদ আর ইচ্ছের কাছে হার মানতে হয় মা’কে। পড়াশোনা চালিয়ে যায় রুমা। তার এই অদম্য সাহস আর হার না মানা লড়াই-কে স্বীকৃতি দিয়ে, রাজ্য সরকার তাকে “বীরাঙ্গনা” পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে। শনিবার কলকাতায় তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন দপ্তরের মন্ত্রী ডঃ শশী পাঁজা। তারপরই, মেদিনীপুরের এই সাহসিনীকে নিজের বুকে টেনে নেন তিনি। পরম মমতায় আশীর্বাদ করেন রুমা’কে।

thebengalpost.net
মন্ত্রী শশী পাঁজা’র হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ রুমা’র :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর সদর ব্লকের প্রত্যন্ত বিষড়া গ্রামের রুমা সিং অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। রানী শিরোমণির মেদিনীপুরের এই সাহসিনী কন্যার স্কুলের নামটিও শিরোমণির নামেই, শিরোমণি বীরসা মুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়। তাই, সাহস যেন তাঁর সহজাত। হতদরিদ্র সংসারে, পেশায় দিনমজুর বাবা বরবিন্দর সিং বছর তিনেক আগে অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে মারা গেছে। মা চঞ্চলা সিং দিনমজুরের কাজ করেই কোনোক্রমে সংসার চালান। রুমা ছাড়াও আছে তার ছোট দু’টি ভাইও। তাই, মাস খানেক আগে নিজের নাবালিকা মেয়েকে পাত্রস্থ করে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিলেন মা চঞ্চলা। কিন্তু, বিয়ে করতে চায়নি রুমা! তাই, মা’র কাছে আবেদন-নিবেদন করেও যখন কাজ হয়নি, গোপনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে, নিজের বিয়ে আটকে দিয়েছিল রুমা। তাতেই এখন সে “বীরাঙ্গনা”। শুধু মেদিনীপুরের নয়, সারা রাজ্যের। রুমার ইচ্ছে, নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, দুই ভাইকেও পড়াবে সে। মা চঞ্চলাও কথা দিয়েছেন, মেয়ের ইচ্ছেতে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না! পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে প্রশাসনও। আর, রুমার গর্বে গর্বিত সারা মেদিনীপুরও দু’হাত তুলে তাকে আশীর্বাদ করে চলেছে!

thebengalpost.net
মেদিনীপুরের গর্ব রুমা সিং (Ruma Singh) :