মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ আগস্ট: শেক্সপিয়ার (William Shakespeare)-এর তত্ত্বে গা না ভাসিয়ে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘প্রাচীন সাহিত্য’ (কাব্যের উপেক্ষিতা) গ্রন্থে উল্লেখ করেছিলেন, “নামকে যাঁহারা নাম মাত্র মনে করেন, আমি তাঁহাদের দলে নই।” সাহিত্যে কিংবা বাস্তবে বারেবারে রবি ঠাকুরের সেই শাশ্বত বাণী’র সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আল্পনা দেবনাথ বসু (Alpana Debnath Bose)’র ক্ষেত্রেও তেমনটাই যেন সত্য হয়ে উঠেছে। পেশায় জীববিদ্যার শিক্ষিকা হলেও, নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তিনি একজন আলঙ্কারিক বা প্রচ্ছদ শিল্পীও। তাঁর সহজাত অঙ্কন বা অলংকরণ প্রতিভা তাই তাঁকে ‘শিল্পী দিদি’ হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে মেদিনীপুর ছাড়িয়ে সমগ্র রাজ্যে। মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির একজন সক্রিয় সদস্যা হিসেবে তিনি আবার একজন সমাজকর্মী-ও। সম্প্রতি, ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য চুল দান-ও করেছেন। সেই আল্পনা দেবনাথ বসু’কেই এবার ‘শিক্ষারত্ন ২০২২’ সম্মানে ভূষিত করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর। মঙ্গলবার-ই তাঁর কাছে পৌঁছেছে রাজ্য সরকারের বার্তা। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর (‘শিক্ষক দিবস’ উপলক্ষে) তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে পুরস্কার।

thebengalpost.net
শিক্ষিকা আল্পনা দেবনাথ বসু:

আজ, মঙ্গলবার, আল্পনা দিদিমণি’র ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মানে ভূষিত হওয়ার খবর পৌঁছনোর সাথে সাথেই, খুশির হাওয়া জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনী হাই স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের মধ্যেও। খুশি আপামর মেদিনীপুর বাসীও। জেলার শিক্ষক মহল মানছেন, একজন যোগ্য শিক্ষিকাকেই মনোনীত করা হয়েছে এই পুরস্কারের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্কুল শিক্ষা দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন আল্পনা দেবী-ও। জানা যায়, আলিপুরদুয়ার জেলায় জন্ম তাঁর। দার্জিলিংয়ের সরকারি কলেজ থেকে জীববিদ্যা (Zoology বা প্রাণীবিদ্যা ছিল তাঁর বিষয়) বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বৈবাহিক সূত্রে, পূর্ব মেদিনীপুরে পা রাখেন ১৯৯০ সালে। স্বামী গৌতম বসু-ও শিক্ষক এবং মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্রের সক্রিয় সদস্য। কর্মসূত্রেই কয়েক বছর পর তাঁরা পূর্ব মেদিনীপুর থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরে এসে বসবাস শুরু করেন। মেদিনীপুর শহর থেকে ২০-২২ কিলোমিটার দূরে আল্পনা দেবী’র স্কুল (শালবনী হাই স্কুল)। এ‌ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ‘সহজ জীবন বিজ্ঞান’ নামে একটি বইও লিখেছেন আল্পনা দেবনাথ বসু। ‘ভারতীয় যোগ বিজ্ঞান’, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ (তপতী পাবলিকেশন) প্রভৃতি বইয়ের প্রচ্ছদ অংকন-ও করেছেন। তিনি সরকার স্বীকৃত একাধিক পাঠ্য পুস্তকের ছবিও এঁকেছেন বলে জানা যায়। আঁকাআঁকি আর পড়ানোর বাইরে, সমাজসেবায় যুক্ত থেকেও প্রতি মুহূর্তে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন ‘শিক্ষারত্ন’ আল্পনা দেবনাথ বসু। একমাত্র মেয়ে মনীষিতা বসু বি.এড সম্পূর্ণ করে চাকরির জন্য পড়াশোনা করছেন। তিনিও বাবা-মা’র মানবসেবার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, সম্প্রতি ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য নিজের চুল দান করেছেন। আপাতত মা-এর ‘শিক্ষারত্ন’ পাওয়ার খবরে বেজায় খুশি মনীষিতা!

thebengalpost.net
সম্প্রতি চুল দান করার পর: