দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ মার্চ: নৃত্য, সঙ্গীত আর আবৃত্তির কোলাজের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় সাহিত্য চর্চার আসরও। প্রকাশিত হয় আবৃত্তির বই আর অ্যালবাম। আয়োজন করা হয়েছিল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও। তবে, এ সবকিছুর আগে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আয়োজিত হয় রক্তদান শিবির। উদ্যোক্তাদের বার্তা, সমাজ আর সাহিত্য-সংস্কৃতি তো একে অপরের পরিপূরক! তাই, কবিতাকে ভালোবেসেই আমাদের রক্তদান শিবিরের আয়োজন। স্বর-আবৃত্তি, মেদিনীপুর এবারও তাদের ‘বিশ্ব কবিতা দিবস’ (২১ মার্চ) উদযাপনে অভিনবত্বের সাক্ষর রাখল। বিশ্ব কবিতা দিবস-কে সামনে রেখে জেলা শহর মেদিনীপুরের সংস্থাটি চতুর্থ বর্ষের রক্তদান উৎসব আয়োজন করেছিল গত ১৭ মার্চ। ওই দিন রক্তদানের সাথেই, আবৃত্তি এবং অঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল প্রতিষ্ঠানের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন, কৌস্তুভ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রানী দাশগুপ্ত, আগমনী কর মিশ্র, শিবানী পাল, শিলা মহাপাত্র, সুপর্ণা কোলে, সুপর্ণা ব্যানার্জি,পলি পাহাড়ি, শান্তনু দাস, বিকাশ ঘোষ প্রমুখ। মূল অনুষ্ঠানটি হয় ২১ মার্চ মেদিনীপুর শহরের বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে (বিদ্যাসাগর হলে)। ওই দিন প্রদীপ প্রজ্বলন করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক সৌমেন ঘোষ, শিক্ষক ও কবি ঋত্বিক ত্রিপাঠী, ডাক্তার সুহাস রঞ্জন মন্ডল ও দীপক বসু। অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয় শুভদীপ বসুর ছোটদের আবৃত্তি যোগ্য কবিতার সংকলন আবৃত্তির ডায়েরি । মোড়ক উন্মোচন করে ছোট্ট শ্রীশায় বসু। শ্রী বিষ্ণুপদ কুইল্যা মহাশয় প্রকাশ করেন আবৃত্তির অ্যালবাম ‘দূরকে করিলে নিকট’।
সান্ধ্যকালীন এই অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা ছাড়াও কাব্য ডিঙা, কথায় ও তুলিতে, আবৃত্তি কলা কেন্দ্র, কাব্য ও কলা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরাও আবৃত্তি পরিবেশন করেন। কবিতার গান পরিবেশন করেন অজন্তা দে, আলোক বরন মাইতি ও সুমন্ত সাহা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন কাবেরী গাঙ্গুলী, সুতনুকা মিত্র মাইতি, সুদীপ্তা মিশ্র ও কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। অমিয় পাল ও মালবিকা পালের সাথে শুভদীপের আলাপচারিতার অংশটি ছিল প্রাঞ্জল। একলব্য থিয়েটার এসোসিয়েশনের ‘দাঁড়াও পথিকবর’ নাটকটি ছিল মনোগ্রাহী। অনুষ্ঠানে মেদিনীপুরের বীর বিপ্লবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে স্বর-আবৃত্তি ও নটরাজ ডান্সএকাডেমীর যৌথ নিবেদন ‘আমরা চলি সমুখ পানে’ সকলের নজর কাড়ে। এবছর স্বর-আবৃত্তি সম্মান তুলে দেওয়া হয় বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী বিশ্বেশ্বর সরকারকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উদ্যোগপতি চন্দন বসু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লক্ষণ চন্দ্র ওঝা, সঙ্গীতশিল্পী জয়ন্ত সাহা পত্রিকা সম্পাদক বিদ্যুৎ পাল, শিক্ষক ও সমাজকর্মী সুদীপ কুমার খাঁড়া প্রমুখ।
‘দোসর’ পত্রিকার আয়োজনে কবিতাপাঠের আসর অনুষ্ঠিত হয়। কবিতা পাঠ করেন অচিন্ত্য নন্দী, সিদ্ধার্থ সাঁতরা, অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়, আনন্দরূপ নায়েক, শায়েরি চক্রবর্তী, রাজশ্রী ষড়ঙ্গির মতো বিশিষ্ট কবিরা। কবিতা নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা সঞ্চালনা করেন অখিল বন্ধু মহাপাত্র, শতাব্দী গোস্বামী সহ সৌম্যদীপ চক্রবর্তী। স্বর-আবৃত্তির অধ্যক্ষ শুভদীপ বসু বলেন, “বিগত ৬ বছর ধরে এই দিনটি আমরা শ্রদ্ধার সাথে পালন করে আসছি। চার বছর ধরে চলছে রক্তদান শিবির। আবৃত্তিকে ভালোবেসে এই উৎসবে শহরের সংস্কৃতিবান মানুষেরা পাশে থেকে সাহস দেন। এই দু’দিনের উৎসবে প্রতিষ্ঠানের শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও অংশগ্রহণ করে। কবিতার প্রতি এই দায়বদ্ধতা আমাদের এগিয়ে চলার মন্ত্র।” স্বর-আবৃত্তির পক্ষ থেকে আপামর মেদিনীপুরবাসীকে ধন্যবাদ জানান মনীষা বসু ও দীপা বসু।