দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ আগস্ট: প্রায় দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্ত্রের কারবার করার অভিযোগ। একপ্রকার ভয়ে কাঁপতেন এলাকাবাসী! নির্বাচন এলেই বেড়ে যেত দাপট। একসময় সিপিআইএমের আশ্রয়ে লালিত, পরবর্তী সময়ে বিজেপি-তে ভিড়ে ২০২১-এর বিধানসভা পর্যন্ত সন্ত্রাস চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে দাঁতন বিধানসভা থেকে বিজেপির (দিলীপ ঘোষের) বড়সড় লিড পাওয়ার পেছনেও নাকি এই ‘কুখ্যাত’ অস্ত্র কারবারির ‘অবদান’ ছিল! মঙ্গলবার (২ আগস্ট) হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র সহ কলকাতা পুলিশের STF (স্পেশাল টাস্কফোর্স) দাঁতনের পুরুন্দা এলাকার বাসিন্দা এই সমীর পট্টনায়েক-কে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার রাতে এমনটাই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক বিক্রম চন্দ্র প্রধান। তাঁর দাবি, “১৯৯৯ সালে অর্থাৎ তৎকালীন বাম আমলে এই সমীর পট্টনায়ক-কে আমরা, এলাকাবাসী মনোহরপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে অস্ত্রসহ পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। কিন্তু, কিছুদিন পরেই জামিন পেয়ে গিয়েছিল বামেদের এই হার্মাদ। ‌২০১১’র পর বিজেপিতে গিয়ে ভিড়ে যায়। তারপর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে গুলি-বোমাবাজি করে এলাকাবাসী-কে ভোট দিতে দিতোনা। ২০১৯ এর লোকসভা কিংবা ২০২১ এর বিধানসভাতে মনোহরপুর, জেনকাপুর, তুরকা প্রভৃতি এলাকায় বোমাবাজি করে সাধারণ ভোটারদের ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। অনেক কষ্টে কিছু বুথ আগলে রেখে আমরা বিধানসভায় অল্প ব্যবধানে জিততে পেরেছি। এই দুষ্কৃতী না থাকলে অন্তত ২০-৩০ হাজার ভোটে জেতার কথা।” তিনি এও জানিয়েছেন, “কলকাতা পুলিশ-কে ধন্যবাদ তাঁরা এই অস্ত্র পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের কাছে আমার আবেদন, এই দুষ্কৃতী-কে রিমান্ডে নিয়ে আসা হোক। এই জেলার কোথায় কোথায় অস্ত্র মজুদ করে রেখেছে, তা খুঁজে বের করা হোক।”

thebengalpost.net
সমীর পট্টনায়ক:

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২ আগস্ট দুপুর ১ টা ২০ নাগাদ হাওড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে বছর ৫৪’র সমীর পট্টনায়ক-কে গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। তার কাছ থেকে ৪ টি (চারটি) ওয়ান সাটার দেশি বন্দুক এবং ৪০-টি (চল্লিশটি) এইট এম.এম তাজা কার্তুজ উদ্ধার হয়। এই সমস্ত অস্ত্র পাচার করতে নিয়ে যাচ্ছিল বলেই কলকাতা পুলিশের অনুমান। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে, এসটিএফ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। বুধবার (৩ আগস্ট) তাকে আদালতে তোলা হলে, তাকে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। স্বভাবতই কুখ্যাত এই দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হওয়ার খবর আসার পরই দাঁতন জুড়ে খুশির হাওয়া! এদিকে, বিধায়ক বিক্রম চন্দ্র প্রধান সহ শাসকদলের অভিযোগ, বিজেপির দাঁতন-২ পশ্চিম মন্ডলের সাধারণ সম্পাদক সমীর পট্টনায়ক ছিল সমীর। তাই, জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক এই এলাকার বিজেপির অন্যান্য নেতাদেরও! অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি’র জেলা সহ সভাপতি অরূপ দাস জানিয়েছেন, “বিষয়টা কি আমরা এখনও জানিনা। তবে, যিনি এতো অভিযোগ করছেন, তাঁর কাছে আমাদের প্রশ্ন ২০১১ সাল থেকে আপনাদের পুলিশ, আপনি এলাকার বিধায়ক, এতদিন কি আপনাদের পুলিশ ঘুমাচ্ছিল? পুরোটাই আসলে বিক্রম বাবু’র চক্রান্ত। উনিই তো দাঁতন জুড়ে দুষ্কৃতীদের লালন পালন করেন। দু’দিন ছাড়া বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে! আর, এখন বিজেপির দোষ?” এদিকে, ঘটনা ঘিরে এলাকায় ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা’র মন্তব্য, “সিপিআইএমের হার্মাদরাই যে বিজেপি’র জল্লাদ তা আবার প্রমাণিত হল! পুলিশ সক্রিয় হলে, এরকম আরও দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হবে।”