দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ জুলাই: দীর্ঘ সময় ধরে এলাকাবাসী অভিযোগ করে চলেছেন অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে চাষযোগ্য জমি থেকে নদী তীরবর্তী মানুষের ঘরবাড়ি। নদীর দিক পরিবর্তন হচ্ছে। ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের। কিন্তু, মাঝেমধ্যে নিয়মমাফিক অভিযান চালানো হলেও, অবৈধ কারবারীদের রাখা যায়নি! জেলাশহর মেদিনীপুর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল থানা সংলগ্ন মনিদহ এলাকা সহ বিভিন্ন জায়গাতেই চলছিল অবৈধ বালি খাদানে, সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মেশিন দিয়ে বালি মাফিয়াদের বালি উত্তোলন! বেঙ্গল পোস্ট সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে এনিয়ে লেখালেখি হলেও, গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি প্রশাসনের কোনো মহল থেকেই! অবশেষে, আজ সকালে (৩ রা জুলাই) বড়োসড়ো পুলিশি অভিযান এবং স্বয়ং জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর কড়া বার্তার পর কিছুটা আশার আলো দেখছেন এলাকাবাসী। শনিবার সকালে বেআইনি বালি খাদান ও ওভারলোড গাড়ি বন্ধ করতে বড়সড় অভিযান চালালো পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গুড়গুড়িপাল থানার অন্তর্গত কংসাবতী নদীর তীরবর্তী মনিদহ ইকোপার্ক সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বালি উত্তোলনের সরঞ্জাম ও ৭ টি বালি বোঝাই লরি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশি অভিযানে নেতৃত্ব দেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অম্লান কুসুম ঘোষ।
প্রসঙ্গত, বৈধ বালি খাদান থেকে সরকারি নিয়ম মেনে বৈধভাবে বালি উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হলেও, অসাধু বালি মাফিয়া চক্র নদীর যত্রতত্র অবৈধ বালি খাদান নির্মাণ করে, অত্যাধুনিক সব মেশিনপত্র দিয়ে নির্মমভাবে নদীর বুকে খনন চালাচ্ছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। ফলে, একদিকে যেমন নদী তার স্বাভাবিক গতি পথ হারাচ্ছে, ঠিক তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন। চাষযোগ্য জমি থেকে ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। মেদিনীপুর সদর ব্লকের স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই অবৈধ কারবার চলে। দীর্ঘদিন পুলিশকে তাঁরা অভিযোগ করে এসেছেন। কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি! উল্টে শত্রু বেড়েছে, সংঘর্ষও হয়েছে। একদিকে গ্রাম তীরবর্তী নদী থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে নদীপাড় ক্রমশ ভাঙতে শুরু করছে। অন্যদিকে ওভারলোড বালি বোঝাই লরির কারণে গ্রামীণ রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। এরপরই, আজকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরে পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, “বেআইনি বালি খাদান ও অবৈধভাবে বালি মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।” অপরদিকে, মেদিনীপুর শহরে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সম্প্রতি জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, “বহুদিন ধরেই এই অভিযোগ আসছে। অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করা হবে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন কোন অবৈধ কারবার চলবে না। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাকে দুর্নীতিমুক্ত করতে প্রশাসন সচেষ্ট।”