thebengalpost.net
সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জিনাত:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ ডিসেম্বর: বছর সাতেক আগের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর কেউ চাইছেন না! সেবারও সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে ঝাড়খণ্ড পেরিয়ে লালগড়ের মধুপুরের জঙ্গলে হাজির হয়েছিল এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি লালগড় সংলগ্ন মধুপুরের জঙ্গলে বাঘ মামার অস্তিত্ব প্রথমে টের পেয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। ২ মার্চ লালগড়ের মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে বনদপ্তরের গোপন ক্যামেরায় প্রথম ধরা পড়ে পূর্ণ বয়স্ক সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার! তারপর হাজার চেষ্টা করেও, এমনকি দু’জন বনকর্মীর মৃত্যুর বিনিময়েও সেই পূর্ণ বয়স্ক (পুরুষ) রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে খাঁচায় পুরতে ব্যর্থ হয় বনদপ্তর। শেষমেশ, ২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল মেদিনীপুর বনবিভাগের চাঁদড়া রেঞ্জের বাঘঘরার জঙ্গলে একদল শিকারির বল্লম ও টাঙির নিষ্ঠুর আঘাতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় সেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটির! এবারও, সেই সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেই পালিয়ে যায় একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। যদিও, এবারেরটি বাঘিনী (Tigress)। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঝাড়খন্ড সীমান্তের চাকুলিয়া বনাঞ্চলের আশেপাশে তথা ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ির সীমান্ত-লাগোয়া গ্রাম জড়মা থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ‘জিনাত’ নামের ‘সুন্দরী’ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার-টি।

thebengalpost.net
ঝাড়খন্ড সীমান্তে:

thebengalpost.net
২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল বাঘঘরার জঙ্গলে (ছবি ও তথ্য- রাকেশ সিংহ দেব):

জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তিন বছরের জিনাতকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে (টাইগার রিজার্ভ, সংক্ষেপে বা এসটিআর) আনা হয়েছিল। কয়েকদিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পরে রেডিয়ো কলার পরিয়ে ২৪ নভেম্বর তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল। আর, সেই সুযোগেই ঘেরাটোপ টপকে ঝাড়খণ্ডের দিকে পালিয়ে আসে জিনাত। রবিবার থেকেই চাকুলিয়া বনাঞ্চলের আশেপাশে বাঘিনীর অস্তিত্ব উপলব্ধি করেছেন গ্রামবাসীরা। গলায় রেডিও কলার লাগানো থাকার ফলে বনদপ্তরও বাঘিনীর অবস্থান মোটামুটিভাবে জানতে পারছে। বুধবারও ঝাড়খন্ড সীমান্তে তার দেখা মিলেছে বলে দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন সূত্রে। ইতিমধ্যে, সমাজমাধ্যমে জিনাতের বহাল তবিয়তে বিচরণের একটি ভিডিও-ও ভাইরাল (সত্যতা যাচাই করেনি বেঙ্গল পোস্ট) হয়েছে! অপরদিকে, চাকুলিয়া রেঞ্জের আশেপাশেই ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনী ব্লক। স্বাভাবিকভাবেই সতর্ক মেদিনীপুর, খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম বনবিভাগ। ঝাড়খন্ড সীমান্ত লাগোয়া ঝাড়গ্রাম জেলার গিধনি, জামবনী ও বেলপাহাড়ী রেঞ্জে নজরদারি চালাচ্ছে বনদপ্তর। ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গল ও পর্যটনস্থলে পর্যটকদের বিকেল ৫টার মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বনদপ্তরের তরফে। ঝাড়গ্রাম জেলার সীমান্ত লাগোয়া বনভূমিতে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকদের সুরক্ষার স্বার্থে বেশ কয়েকটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। কেউ নিয়ম না মানলে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):

thebengalpost.net
আবেদন:

এই নির্দেশিকাতে বলা হয়েছে, বিকেল ৫টার পর জঙ্গল লাগোয়া পর্যটনকেন্দ্রে থাকা যাবে না। বিনা অনুমতিতে তাঁবু খাটানো চলবে না। জঙ্গলে আবর্জনা ফেললে ১১৫০ টাকা জরিমানা করা হবে। পাশের রাজ্যে বাঘিনীর ঘুরে বেড়ানোর খবরেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে, বুধবার বাঘটিকে ট্রাঙ্কুইলাইজ করার অনুমতি পাওয়ার পরই ৮০ জনের এক বিশেষ টিম তৈরি করা হয়েছে। আনা হয়েছে ৩টি মোষ। তবে, বুধবার সারা দিন চাকুলিয়ার গোরামচাটি, ভালুলবিধাঁ, কাঠিয়াবেরা এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও লাভ হয়নি। শেষে রাত ৮টা নাগাদ চিঁয়াবাধির জঙ্গলে ট্র্যাক করে তাকে দেখতে পান বন দফতরের কর্মীরা। যদিও, ধরা সম্ভব হয়নি। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ির সীমান্ত-লাগোয়া গ্রাম জড়মা থেকে বেশ কিছুটা (প্রায় ১২ কিলোমিটার) দূরে রয়েছে এটি। স্বভাবতই আতঙ্কিত ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বনবিভাগ।

thebengalpost.net
সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে জিনাত:

thebengalpost.net
ঝাড়খন্ড সীমান্তে:

thebengalpost.net
বিজ্ঞাপন (Advertisement):